আদানির শেয়ার কারচুপি মামলার তদন্ত শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হোক ‘সেবি’-কে। মঙ্গলবার এই মর্মে আবেদন জমা পড়ল সুপ্রিম কোর্টে। মার্কিন আর্থিক সংস্থা হিন্ডেনবার্গের দ্বিতীয় রিপোর্টে বলা হয়েছে বিদেশে আদানির সংস্থায় টাকা রেখেছেন ‘সেবি’-র প্রধান নিজেই। আর ‘সেবি’ ভারতে শেয়ার বাজারে নিয়ামক প্রতিষ্ঠান।
আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দায়ের করে বলেছেন, ‘‘২০২৪’র ৩ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের প্রথম রিপোর্টের ভিত্তিতে আদানির কারচুপি সংক্রান্ত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় ‘সেবি’-কে। ‘সেবি’ কিন্তু প্রমাণের অভাব জানিয়ে তদন্ত অসম্পূর্ণ রেখেছে।’’
‘সেবি’ প্রধানের পদ থেকে মাধবী পুরী বুচকে সরিয়ে যৌথ সংসদীয় তদন্তের দাবি জোরালো হয়েছে দেশে। গত বছরের জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গের প্রথম রিপোর্টে আদানিকে ঘিরে কারচুপির একাধিক তথ্য প্রকাশিত হয়। জানানো হয় যে বিদেশে বেনামে আদানির টাকায় বিনিয়োগ তহবিল খোলা হয়েছে। সেই তহবিলের টাকায় আবার ঘুরিয়ে ভারতে এনে আদানিরই শেয়ার কেনা হচ্ছে। শেয়ারের চাহিদা দেখিয়ে কারচুপি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেশের বিধি ভেঙে চলছে এই কারবার। সংসদে যৌথ সংসদীয় তদন্তের দাবিতে বিরোধীরা সোচ্চার হলেও বিজেপি সরকার রাজি হয়নি।
আইনজীবীদের বক্তব্য, এমন নয় যে সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত শেষ করার কোনও সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল যে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ হওয়া উচিত। তাঁরা বলছেন, কেবল ’উচিত’ বলায় ‘সেবি’-র পক্ষ নিয়ে বলা হচ্ছে যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এই যুক্তি সঠিক নয়। সুপ্রিম কোর্টকেই তা নির্দিষ্ট করতে হবে।
তিওয়ারি এর আগে আবেদন দায়ের করলেও সুপ্রিম কোর্টের নথিভুক্তি বিভাগ তা গ্রহণ করেনি। সে কারণে নতুন করে দায়ের করেছেন আবেদন।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত বলেছেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে একমাত্র যৌথ সংসদীয় তদন্ত গঠন করলে। সরকার তা করছে না। সেবি-র থেকে অভিযুক্ত প্রধানকে সরিয়েও দেওয়া হচ্ছে না। শেয়ার বাজার ঘিরে অভিযোগগ, অস্বচ্ছতা কাটছে না।
সোমবার নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয় যে আদানি সংক্রান্ত দ্বিতীয় রিপোর্ট প্রকাশ পেলেও শেয়ার বাজারে ধস নামেনি। বিনিয়োগকারীরা বিশেষ গ্রাহ্য করছেন না অভিযোগ। বাস্তবে রবিবারই রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি-কে দিয়ে ঘোষণা করানো হয় যে তাড়াতাড়িই এই সংস্থা শেয়ার বাজারে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবে। একাংশের অনুমান, এলআইসি’র মতো নির্ভরযোগ্য সংস্থাকে দিয়ে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা অস্থিরতার আশঙ্কা খানিক কমিয়েছে। কিন্তু গত বছর দেখা গিয়েছিল যে আদানির শেয়ারের দাম আদৌ স্থিতিশীল নয়। খুব কম দিনের মধ্যে শেয়ারের দাম ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তার জেরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ এই সংস্থায় শেয়ার কিনে রাখায় সম্পদমূল্য কমে যায় এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কের।
হিন্ডেনবার্গের দ্বিতীয় রিপোর্টে দেখানো হয়েছে আদানি গোষ্ঠী বেনামে চালায় এমন বিদেশের বিভিন্ন আর্থিক তহবিলের শেয়ার কেনেন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রধান নিজেই সুবিধা পেয়েছেন। তাই আদানির বেনিয়ম সংক্রান্ত তদন্ত শেষ করেনি ‘সেবি’।
মঙ্গলবার কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন যে দেশের সর্বত্র যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবিতে আন্দোলনে নামছে দল।
SEBI Application SC
সময় বেঁধে আদানি-তদন্তে মামলা সুপ্রিম কোর্টে
×
Comments :0