তোমাদের প্রিয় বই : ছোটদের বিদ্যাসাগর
প্রদোষকুমারবাগচী
আজ তোমাদের জন্য আরও একটি বই নিয়ে এলাম একারণেই যে তোমাদের কথা ভেবে
লেখা হয়েছে বইটি। বইটি এমন একজন মানুষের জীবনী যার কথা আমরা বহুদিন ধরে
আলোচনা করব। তোমরা সকলেই জানো যে তোমরা ছোটরা যখন অসুবিধার মধ্যে থাকো
বা কোনও কিছু জানতে চাও তখন সেই অসুবিধা বা বিপদ কাটাতে বা কোনও কিছু জানতে
তোমরা বড়দের সাহায্য নাও। মা বাবার সঙ্গে কথা বলে কিভাবে বিপদ এড়িয়ে চলবে
তোমরা সেকথাও শুনতে চাও। কিন্তু বড়রাও যে এমন অনেকেরই সাহায্য নেন তা কি
তোমরা খেয়াল করেছো? তাঁদের মধ্যেই একজনের কথা আজ বলবো। তিনি উনিশ
শতকের এক অসামান্য পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
নামের সঙ্গে ঈশ্বর লেখা থাকলেও নিজে কখনও কিন্ত ঈশ্বরের আরাধনা উপাসনা
করেননি বা আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বিদ্যাসাগর। সারা জীবন ঈশ্বরের সাহায্য না
নিয়েই মানুষটি এমন কিছু কাজ করে গিয়েছিলেন যে কারণে আজও আমরা তাঁর দিকে
ফিরে তাকাই। গভীর পাণ্ডিত্যে আর চিন্তার মিশ্রনে তিনি হয়ে উঠলেন প্রাতঃস্মরণীয়
একজন ব্যক্তি। মহাপণ্ডিত তো তিনি ছিলেনই, কারণ তিনি ছিলেন বিদ্যাসাগর। আর
সেই বিদ্যার আলো দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন সমাজের মন্দ দিকগুলি সরিয়ে শুভ ভাবনার
জাগরণ ঘটাতে।
তিনি মনে করতেন নারীরা শিক্ষিত হয়ে উঠবে তখন যখন তাঁরা শিক্ষার সুযোগ পাবে,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। একটা সময়ে সমাজে বিধবা নারীদের কোনও মূল্য ছিল
না। তিনি বললেন বিধবাদেরও জীবন আছে। তারা চাইলেই বিবাহ করতে পারেন। তাঁর
মতো সমাজ সংস্কারক খুব কম পাওয়া যায়। আর ছিল তাঁর আত্মসম্মানবোধ। বাংলা
গদ্যকে তিনি নতুন জীবন দিয়েছিলেন। যুগান্তকারী নানাবিধ পাঠ্যপুস্তক রচনা
করেছিলেন। তিনি জন্মেছিলেন ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। সেদিক থেকেৃ দেখলে তাঁর
জন্মের দুশো বছর আজ অতিক্রান্ত।
মানুষটি আমাদের যে কতভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ভাবলে অবাক হতে হয়, তাঁর প্রতি
আমাদের শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। কিন্তু তিনি যা চেয়েছিলেন, আজও তা সম্পূর্ণ
সফল হয়নি। কেন সফল হয়নি, সেকথা তোমরা যখন বড় হবে নিশ্চয়ই ভেবে দেখবে।
কিন্তু যখন তোমরা বড় হয়ে উঠতে থাকবে এই মানুষটির ভাবনাকে মনে রাখার চেষ্টা
করবে, তাহলে এই সমাজের অনেক অন্ধকার দূর করতে তোমরাও প্রয়াসী হতে পারবে।
তাহলে কেমন মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর? জানতে চাও? সেকথা জানাতেই তোমাদের কাছে
হাজির হয়েছি যে বই নিয়ে সেটি ‘ছোটোদের বিদ্যাসাগর’। যিনি বইটি লিখেছেন তাঁকে
অনেকেই তোমরা চিনে থাকবে। তোমাদের কথা ভেবেই তিনি বই লেখেন। এবারেও সেই
অঞ্জনা দামের লেখা বইয়ের কথা এখানে তোমাদের বললাম। মাত্র চল্লিশ পাতার
ছোট্ট বই। কিভাবে একজন মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠলেন তাঁর কথা এবার খুব
সহজে তোমরা জেনে নিতে পারো নিচের বইটি থেকে।
ছোটোদের বিদ্যাসাগর
অঞ্জনা দাম।জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী।১৬ ডাঃ কার্তিক বোস স্ট্রিট,
কলকাতা—৭০০ ০০৯। ৩০ টাকা।
Comments :0