একটির পর একটি ঘটনা সামনে আসছে। বেআব্রু হচ্ছে রাজ্যের বেহাল দশা। দিশাহারা তৃণমূল সরকার। প্রশাসনের লাগামটাই আলগা হয়ে পড়েছে। ঝুলি থেকে একে একে বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে গরিব মানুষকে ঠকিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে তৃণমূলী প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা। তাদের সঙ্গ দিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। সব ধরা পড়ার পর বিক্ষোভের মুখে পড়েও শিক্ষা হয়নি। টাকা লোপাট করা হয়েছে আবাস যোজনার। এখন বিক্ষোভের মুখে পড়ে কোণঠাসা প্রশাসন। গরিব মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে চলেছে রাজ্যের শাসক দল। তাতেও পার পাচ্ছে না। গ্রাম উঠে এসেছে রাস্তায়।
এর মধ্যেই সামনে এসেছে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাখাতে দেওয়া টাকার হিসাবই দেয়নি রাজ্য সরকার। তার ফলে গতবছর ও চলতি বছরে এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার আর টাকা দেয়নি। খরচের হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। গাফিলতি করল তৃণমূল সরকার। ফল ভুগতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। ন্যাশনাল এডুকেশন সোসাইটি ফর ট্রাইবাল স্টুডেন্টসের একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ কোটি ৬২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তার মধ্যে মাত্র ৫ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে পেরেছে রাজ্য। বাকি টাকা কোথায় গেল? হিসাব না পেয়ে কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রক ২০২১ ও ২০২২-২৩র জন্য আর টাকা দেয়নি।
প্রত্যেক আবাসিক ছাত্রের জন্য বছরে ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আমাদের রাজ্যে ৭ জেলায় একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল আছে। সেখানে ২ হাজার ৯৪০ জনের পড়ার ব্যবস্থা আছে। টাকা না পেয়ে তাদের লেখাপড়া লাটে উঠেছে। এখানেই শেষ নয়, আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রি-ম্যাট্রিক স্কলারশিপের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছিল ৯ কোটি ১২ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। বছর ঘুরে আরও ৯মাস বাড়তি সময় চলে গেছে। এখনও কোনও হিসাব দাখিল করতে পারেনি মমতা ব্যানার্জির সরকার। এই ব্যর্থতা লুকোনোর কোনও জায়গা নেই। একইভাবে পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের ৩৮ কোটি ৭২ লক্ষ ৫ হাজার টাকার হিসাবও দেয়নি রাজ্য সরকার। এই হিসাব না দেওয়ায় চলতি বছরে আর স্কলারশিপের টাকা বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। বড় লজ্জার বিষয়!
পরিবারের টাকার জোগান দেওয়ার ক্ষমতা নেই। সরকারি তহবিলে বরাদ্দ নেই। বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। বাধ্য হয়ে লেখাপড়াই ছেড়ে দিচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ছত্রে ছত্রে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা। পরতে পরতে বেহাল দশা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গরিব আদিবাসী পরিবারের সন্তানেরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রাপ্য ভাতা থেকে। ২০১৭-১৮ সালে যেখানে রাজ্যে স্কলারশিপ পেয়েছিলেন ৭৯ হাজার ৩০ জন। ২০২১ সালের মার্চে তা কমে এসেছে ৩০ হাজার ৫০ জনে। এনিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই! কিন্তু কৈফিয়ত তো দিতেই হবে জনগণের কাছে। একের পর এক ব্যর্থতার দায় কার? দেশ বিদেশ থেকে পুরস্কারের নামে ব্যর্থতা ঢেকে রাখার খেলা চলছে। কিন্তু কতদিন?
জেলা সফরে গিয়ে ক্যামেরার সামনে সেজেগুজে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নৃত্য করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। ধামসা বাজিয়ে তাদের উৎসাহিত করেন। ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলেও ডাকতেন কেউ কেউ। এই তথ্য সামনে আসায় ধরা পড়ে গেছে তৃণমূল সরকারের প্রতারণা। আদিবাসী মানুষদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুল বোঝানোর কৌশল ধরা পড়ে গেছে। আদিবাসী মানুষেরা এখন প্রতিবাদের মিছিলে জবাব চাইছে। সামনে এসেছে বাঁকুড়ার রাইপুরের ঘটনা। খাদ্যের অভাবে তিনদিন অভুক্ত থেকেছে আবাসিক পড়ুয়ারা। তারপরেও সকলের জন্য খাবার পাঠাতে পারেনি ব্লক প্রশাসন। ভবিষ্যতে উত্তর দেবে সরলা মুর্মু, এভেন মুর্মুরা।
Comments :0