Book Review — PRODASHKUMAR BAGCHI / MUKTADHARA - 25 August

মুক্তধারা / বই — চিঠিপত্রে রাজেন্দ্রলাল মিত্র

সাহিত্যের পাতা

Book Review  PRODASHKUMAR BAGCHI  MUKTADHARA - 25 AUGUST

মুক্তধারা  

বই

চিঠিপত্রে রাজেন্দ্রলাল মিত্র
প্রদোষকুমার বাগচী


চিঠিপত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মানুষের অন্তর্লীন চিন্তার বিবিধ পরিচয়। একজন মানুষ অপর একজন মানুষকে চিঠিতে কি লিখছেন, কিভাবে লিখছেন, বৃহতে নাকি সংক্ষেপে লিখছেন তা জানার আগ্রহ থাকে কমবেশি সকলেরই। কারণ যেকোনও চিঠির মধ্যেই থাকে লেখকের আত্মন্মোচনের প্রয়াস। যে পত্রে এই প্রয়াস লক্ষ করা যায় সেটি যথার্থ পত্রসাহিত্য।  কোনও মানুষ যদি বিখ্যাত হন তাহলে তাঁর চিঠিপত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা বাড়তি কৌতুহল লক্ষ্য করা যায়। যেমন মার্কস-এঙ্গলেসের চিঠিপত্র। অথবা রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র। রাজেন্দ্রলাল মিত্রে চিঠিপত্রও তার বাইরে নয়।
 পত্র সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন। পত্র একসময় লেখা হতো কবিতায়। পরে গদ্যের প্রচলন হয়েছে। শোনা যায় কোচবিহারের মহারাজাই নাকি প্রথম বাংলা পত্র লিখেছিলেন গদ্যে। তবে বাঙালিকে পত্র কি করে লিখতে হয় এবং কিভাবে একটি পত্রকে শ্রীমণ্ডিত করে তোলা যায় এব্যাপারে সবার আগে বাঙালিকে সচেতন করেছিলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র।  আধুনিক মনন সমৃদ্ধ বাঙালি বহু আগে থেকেই পত্রসাহিত্যের মধুর রসাস্বাদন করেছেন।


জন্মেজয় মিত্রের পুত্র রাজেন্দ্রলাল মিত্রের প্রথম পত্রসাহিত্য বাঙালির হাতে আসে ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে। সেটির নাম ছিল ‘পত্রকৌমুদী’। এই পত্রকৌমুদিতে কি করে পত্র লিখতে হবে তার কৌশল বর্ণনা করেছেন তিনি। যেমন প্রথম অংশে তিনি গুরুজন, স্নেহভাজন ও অধীনস্থ ব্যক্তিকে কি করে পত্র লিখতে হয় তার কৌশল শিখিয়েছেন। পরে বিষয় সম্পত্তি নিয়ামক পাট্টা, কবুলিয়ৎ, স্বত্ত প্রদান ইত্যাদি প্রশ্নে আদর্শ পত্র কি করে লিখতে হবে তা শিখিয়েছেন।তৃতীয় অংশে রয়েছে জমিদারি পত্র ও হিসাবপত্রের নমুনা। চতুর্থ ও শেষ অংশে তিনি বিচারালয়ের পত্রের আদর্শ রূপ তুলে ধরতে চেয়েছেন।
রাজেন্দ্রলাম মিত্রের মতো জ্ঞানী মানুষ পাওয়া ভার। তিনি অনেক ভাষা জানতেন। এশিয়াটিক সোসাইটিতে মাসিক ১০০ টাকা বেতনে সোসাইটির সহকারী সম্পাদক ও গ্রন্থাগারিক হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি যে সময়ে গ্রন্থাগারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেই সময়ে গ্রন্থাগার নিয়ে বাংলা ভাষায় কোনও প্রবন্ধ লেখা হয়নি। সবার আগে তিনি বাংলা ভাষায় গ্রন্থাগার নিয়ে ‘গ্রাম্য গ্রন্থালয়’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখে শিক্ষা জগতকে চমকে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য পাঠের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল। তাঁর চিঠিগুলি নানা সময়ে নানা জনের কাছে তিনি যা লিখেছিলেন আজও তর গুরুত্ব অসীম। অবশ্য ইংরাজি ভাষায় তিনি বেশি লিখেছেন। প্রতীচ্য পণ্ডিতবর্গকে লেখা তাঁর কয়েটি চিঠি রয়েছে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে। বাংলাতে তুলনামূলকভাবে লেখা তাঁর কম। তাঁর অনেক চিঠিই আজ নষ্ট হয়ে গেছে। বেশ কিছু আজ আর পাওয়া যায় না। তবুও যা পাওয়া গেছে তাতে তাঁর ভাষার কমনীয়তা ও অন্তরঙ্গতা আমাদের মুগ্ধ করে। 


এই বইয়ের সংকলক অরুণ কুমার সাঁফুইকে ধন্যবাদ দেব এই কারণে যে তিনি রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মত মানুষের বাংলা চিঠিপত্র সংগ্রহ করে বাঙালি পাঠকের হাতে সহজে তুলে দিয়েছেন। পাঠক লক্ষ করবেন যে রাজেন্দ্রলাল মিত্রের চিঠিপত্রে কেবল একজন আত্ম উন্মোচনকারী মানুষকেই তাঁরা স্পর্শ করছেন না, বাঙালির সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন,মনন ও চিন্তার ইতিহাসের সঙ্গেও তাঁরা যেন ক্রমশ নিজেদের একাত্ম করে নিচ্ছেন। বইটিতে কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি চিঠি সংযুক্ত হয়েছে। প্রথম সংযুক্ত চিঠিটি তিনি লিখেছেন এশিয়াটিক সোসাইটির সচিবকে, যেখানে তিনি চন্দ্রগুপ্তের সমসাময়িক ও প্রখ্যাত রাষ্ট্রনীতিবিদ বিষ্ণু গুপ্তের অন্যতম শিষ্যের লেখা ‘পলিটি অব কামন্দকী’র কথা বলছেন এবং তিনি সেটি বিবলিওথেকা ইন্ডিকায় প্রকাশ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষভাগে রচিত এই লেখাটিতে মানুষের দায়িত্ব, সরকার, রাজা ও মন্ত্রীদের কাজের ধারা সামরিক প্রতিরোধ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। এরকমভাবে মোট ৬৬টি পত্র সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থে। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মতো মানুষকে বুঝতে এই পত্র সংকলন পাঠকের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সম্বল হিসাবে বিবেচিত হবে। 
রাজেন্দ্রলাল মিত্রের পত্রাবলী
অরুণকুমার সাঁফুই। পত্রলেখা। ১০ বি কলেজ রো, কলকাতা-৯। ৩০০ টাকা।

Comments :0

Login to leave a comment