প্রধান শিক্ষিকা হেনস্তা কাণ্ডে ডিআই'এর রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যবাহী সুনীতি বালা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজকে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ। অভিযোগ, স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং জলপাইগুড়ি পৌরসভা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় স্কুলের স্টাফরুমে প্রধান শিক্ষিকাকে অপমানজনকভাবে আচরণ করেন, এমনকি কান ধরে ‘উঠবস’ করান। সহ শিক্ষিকাকেও হেনস্তার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি সামনে আসতেই শিক্ষা মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
এই ঘটনায় কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর দায়ের করা রিট পিটিশনে সভাপতির পদ থেকে অভিযুক্তকে অপসারণের আবেদনও করা হয়েছিল। তবে এদিন বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে সভাপতির অপসারন চাওয়া প্রধান শিক্ষিকার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। সেই আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। যদিও ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় স্কুল পরিদর্শক (ডিআই সেকেন্ডারি)-এর কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি।
প্রধান শিক্ষিকার আইনজীবী উদরশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, “শতাব্দীপ্রাচীন এই বিদ্যালয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষিকাকে স্টাফরুমে অপমান করেছেন যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লজ্জাকর। অভিযোগকরার পরেও কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় আদালতে যেতে বাধ্য হন প্রধান শিক্ষিকা। আদালত দুটি পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিআই'কে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী বিক্রমাদিত্য ঘোষ বলেন, “রিটে যে অপসারণের আবেদন করা হয়েছিল, তা প্রধান শিক্ষিকার এক্তিয়ারভুক্ত নয় বলেই আদালত তা খারিজ করেছে। তবে আদালত স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে ডিআই'এর রিপোর্ট চেয়েছেন।”
ঘটনার জেরে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ ছড়িয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার কতদূর গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষামহল। শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক সন্ত্রাস আরও বাড়বে। এদিকে সাধারণ অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগ, “যে স্কুলে প্রধান শিক্ষিকাই নিরাপদ নন, সেখানে আমাদের সন্তানেরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে?” ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা পড়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে আদালত। শিক্ষা মহল তাকিয়ে আছে সার্কিট বেঞ্চের পরবর্তী নির্দেশের দিকে।
Comments :0