Editorial

কর্পোরেট প্রতিদান

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial

নির্বাচনে প্রচারের খরচ চালাতে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগু‍‌লিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলি যে টাকা দেয় তার প্রায় ৯০ শতাংশই যায় বিজেপি’র তহবিলে। বাকি কমবেশি ১০ শতাংশ যায় বিরোধী দলগুলির তহবিলে। অবশ্য বামপন্থী দলগুলি বিশেষ করে সিপিআই(এম) কোন রকম কর্পোরেট দান বা চাঁদা গ্রহণ করে না। 

 

বিরোধী দলগুলির মধ্যে কংগ্রেস ছাড়া যারা কোন না কোন রাজ্যে ক্ষমতায় তারাই কিছু কর্পোরেট অর্থ পায়। ক্ষমতাহীন ছোট দলগুলির সেটাও জোটে না। শাসকদল বড় বড় শিল্প-কর্পোরেটের অর্থ পাবে এটা নতুন ছিু নয়। কংগ্রেসআসলে কংগ্রেসও মোটা অঙ্কের কর্পোরেট দান বা চাঁদা পেত। তবে কর্পোরেট দানের সবটাই প্রায় শাসকদলের পকেটে যাবার ঘটনা অতীতে সেভাবে দেখা যায়নি। অবশ্য রাজনৈতিক দলকে কর্পোরেট চাঁদা দেবার বিষয়টি চিরকালই অস্বচ্ছ ও গোপনীয় ছিল। তাই সঠিক হিসাব কোনদিনই জানার সুযোগ ছিল না। এখন স্বচ্ছতার ভড়ং দেখিয়ে নির্বাচনী বন্ড চালু হলেও এই বন্ড কারা কিনছে তা গোপন থাকে।

 

 অর্থাৎ কোন কর্পোরেট কোন দলের জন্য কত টাকার বন্ড কিনছে তাই জনগণ কোনদিন জানতে পারবেন না। সরকার সেটা গোপন রাখার ব্যবস্থা করেছে। আসলে কর্পোরেটে স্বার্থেই এই ব্যবস্থা। কর্পোরেট সংস্থাগুলি চায় না তাদের নাম মানুষ জানুক। তথ্য মানুষের গোচরে এলে কর্পোরেট পক্ষপাতিত্ব বা কোন কর্পোরেট কোন দলের অনুগত অথবা কোন দল তাদের অনুগত তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই সরকারই তাদের আড়ালে থেকে কাজ হাসিলের সুযোগ করে দিয়েছে।

 


এখন প্রশ্ন হচ্ছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি এভাবে শত শত টাকার বন্ড কিনে মোদী শাহ-র দলকে দিচ্ছে কেন? কর্পোরেট কোন স্বেচ্ছাসেবী বা অলাভজনক সংস্থা নয়। কর্পোরেট মানেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতিটি কাজ বা পদক্ষেপের শেষ লক্ষ্য মুনাফা। মুনাফা ছাড়া কর্পোরেট এক পাও ফেলে না। আবার মুনাফার জন্য তারা নিজেদের মধ্যেও প্রতিযোগিতায় না। কর্পোরেট ভাষ্যে সেই সংস্থায়ই সবচেয়ে দক্ষ যারা সর্বোচ্চ লাভ করতে পারে। আর লাভের রহস্য লুকিয়ে থাকে শোষণের আড়ালে। যে সংস্থা যত কম লোক দিয়ে, কম মজুরি দিয়ে যত বেশি খরচ কমাতে পারবে তার মুনাফা তত বেশি হবে। তেমনি একচেটিয়া বাজার দখলের সুযোগ নিয়ে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে জনগণের পকেট কেটেও মুনাফা বাড়ানো হয়।

 

 

 


এইভাবে একচেটিয়া বাজার দখল, শ্রম শোষণ বাড়ানো, কর কম দেবার সুযোগ, কম সুদে মূলধন পাবার ব্যবস্থা, কর ছাড়, সুদ ছাড়া ইত্যাদি নানাভাবে খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে হলে সরকারকে হাতে প্রয়োজন। সরকার হাতে থাকলে নিজেদের স্বার্থে সরকারকে ব্যবহার করা যায়। আবার সরকারকে হাতে রাখতে হলে শাসকদলের সঙ্গে, বিশেষ করে শাসকদলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা জরুরি। মোদী জমানায় ভারতের কর্পোরেট অতি দক্ষতার সঙ্গে সেই কাজটি করতে পেরেছে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অতীতে কোনদিন বৃহৎ শিল্প-বাণিজ্য গোষ্ঠী এভাবে শাসকদলের অন্তরঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনি যা সম্ভব হয়েছে মোদী জমানায়। মোদীকে হাত করতে পেরেছে বলেই এই জমানায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ জলের দরে তারা হাতিয়ে নিতে পাচ্ছে। সস্তায় পাচ্ছে ব্যাঙ্ক ঋণ। শেষ করতে না দিলে মুকুব হয়ে যাচ্ছে ঋণ। কমিয়ে ফেলতে পেয়েছে কর্পোরেট কর। সেটাও দিতে না দিলে মুকুব। কম মজুরি দিয়ে, বেশি খাটিয়ে, সামাজিক নিরাপত্তা ছেঁটে উৎপাদন ব্যয় অর্ধেক কমিয়ে ফেলতে পেরেছে। তেমনি দাম বাড়িয়ে বেশি লাভেও সরকারি বাধা নেই। যথেষ্ট লুঠ এবং সীমাহীন সম্পদ ও মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ যারা করে দিচ্ছে তাদের জেতানো কর্পোরেট দায়। তাই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কর্পোরেট সংস্থা মোদীদের প্রতিদান দেবে সেটাই স্বাভাবিক।

Comments :0

Login to leave a comment