ধূসরবেলা
মুক্তধারা
মধুসূদন — বাংলার — মেঘনাদ
মনীষ দেব
মেঘনাদ
— যদি বধ হও — কবির কল্পনায় আরও একবার, বীর তুমি, ফিরে এসো বারবার বীরের বেশে 'মেঘনাদ'। তুহ বীণা কবির কল্পনা অস্তমিত স্থিতধী বাক্যহারা।
বাল্মীকি থেকে মেঘনাদ — মেঘনাদ থেকে মধু কবি — বীর তুমি। মহাকাব্য যত কাল, তত কাল চির শ্রেষ্ঠ বীর তুমি 'মেঘনাদ'। বাল্মীকি - কাশীরাম - কৃত্তিবাস হয়ে মধুসূদনের 'মেঘনাদ বধ' কাব্যে অমর তুমি মৃত্যুহীন অপরাজেয়। তবুও —
জন্মিলে মরিতে হবে
অমর কে কোথা কবে....
এই ধূসরবেলায় ফিরবে নাকি — মেঘনাদ? অকল্পনীয় রামরাজ্যে! যেখানে সীতারা আজও অগ্নিদগ্ধ, অপেক্ষা শুধু পাতাল প্রবেশের। যদি নাও ফের রয়ে যাবে অনবদ্য 'মেঘনাদ বধ' কাব্যে; যার স্রষ্টা পেরিয়ে গেল ২০০ বছর — এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী মাইকেল মধুসূদন।
'পৃথিবীমণ্ডলে যতদিন যেখানে বাঙ্গালা ভাষা প্রচলিত থাকিবেক তদ্দেশবাসী জনগণকে চিরজীবন আপনার নিকট কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ থাকিতে হইবেক...।'
আর এক শ্রেষ্ঠ হুতোম প্যাঁচা'র জবানবন্দীতে চিরশ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
বাংলার মেঘনাদ - মধুসূদন চিরদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, পরাজিতের পক্ষে, হয়তো প্রকৃত বীরের পক্ষে — তাই মধুসূদনের কলম গর্জে ওঠে পুরুর পক্ষে, রিজিয়ার পক্ষে, মেঘনাদ-এর পক্ষে, তাই ধর্মীয় খুনুকে অধর্ম বলতে কাঁপেনা — 'মেঘনাদ বধ'এর স্রষ্টা মধুসূদনের কলম, হয়তো অধর্মের হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা কলমের ধধ্বনিই — মেঘনাদ বধ কাব্য।
— এবং জন্মভূমির প্রতি — বঙ্গভূমির প্রতিঃ আকুল আহবান — মহান কবির —
রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে
সাধিতে মনের সাধ,
ঘটে যদি পরমাদ,
মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে।
লাল শালুকে দোলন দিয়ে নিজের বিশ্বাসে অপ্রতিদ্বদ্ধী হয়েই রয়ে গেলেন বাঙালির অন্তরে, রক্তের অক্ষরে — এই রক্তক্ষরণ অনিবার্য — অনিবার্য মধুসূদন ও তার অক্ষর —
দাঁড়াত্ত পথিক-বর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল....।
Comments :0