Dhupguri by-election

বাংলার মাটিতে বিজেপি-তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই চলবে

জেলা

  জাতীয় স্তরে বিজেপি’র বিরুদ্ধে সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি বাংলার বুকে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই তীব্র হবে। শুক্রবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ধূপগুড়িতে নির্বাচনী সভায় এই মন্তব্য করে বলেছেন, বাংলার মাটিতে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই লুটেরার বিরুদ্ধে বাম কংগ্রেস একসঙ্গে লড়াই করছে, সেই লড়াই-ই চলবে। আমরা স্পষ্ট বলছি, বাংলায় লুটের রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের নীতির কোনও বদল হবে না। ধূপগুড়িতে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে বাম প্রার্থীর সমর্থনে কংগ্রেস কর্মীরাও লড়ছেন। এটাই লড়াইয়ের বাস্তবতা। সেদিকে না তাকিয়ে মিডিয়াতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মতো করে মুম্বাইতে কী হচ্ছে, দিল্লিতে কী হচ্ছে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। চোখের সামনে কী হচ্ছে, ধূপগুড়িতে কী হচ্ছে সেটা কিছুতেই বলছে না। 
শুক্রবার বিকালে ধূপগুড়ি ডাকবাংলো ময়দানে উপনির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের পক্ষে কেন্দ্রীয় জনসভায় সেলিমের সঙ্গে একমঞ্চ থেকে ভাষণ দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরিও। তিনিও বলেছেন, ‘সারা দেশে লুট করছে মোদীর বিজেপি। আর রাজ্যে লুট করছে দিদির তৃণমূল। পঞ্চায়েতে ভোট থেকে বোর্ড গঠন, তৃণমূল শুধুই সন্ত্রাস চালিয়েছে। এরাজ্যের বিধানসভায় এখন শুধু বিজেপি’র সাম্প্রদায়িকতা আর তৃণমূলের সন্ত্রাস। এই দুই শ্বাপদের দলকে হারান। সন্ত্রাস আর সাম্প্রদায়িকতার মাঝে প্রগতিশীল নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিন।’
বাম কংগ্রেসের এই ঐক্যবদ্ধ লড়াই থেকে বাঁচার জন্য তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি’র সেটিং উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, তৃণমূল আর বিজেপি’র মধ্যে কোনও ঝগড়া লড়াই আছে? তাহলে কেন ইডি ডাকছে না ভাইপোকে? পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি’র এত বিধায়ক, এত সাংসদ, আটকাচ্ছে কে? আসলে বিজেপি মানে তৃণমূলের গুদামের বস্তাপচা মাল। ভাইপো এখন দেখছে আইনে পারছে না। তাই দিল্লিতে কাকভোরে লাইন করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও লাইন করেই তিনি বাঁচতে পারবেন না। রাজ্যের মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। 
এই ঐক্যবদ্ধ লড়াইতেই তৃণমূল বিজেপি’কে একসঙ্গে হারানো সম্ভব হয়েছিল সাগরদিঘিতে। সেই দৃষ্টান্ত তুলে অধীর চৌধুরি বলেন, সাগরদিঘি প্রমাণ করেছে  বাংলার জনগণ তৃণমূলের অপশাসন থেকে মুক্তি চাইছে, এবার ধূপগুড়ির মানুষও আরও বলিষ্ঠভাবে সেটাই প্রমাণ করবেন। ধূপগুড়ির এই উপনির্বাচন হবে রাজনৈতিক আগ্নেয়গিরি। 
তৃণমূল বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিলেও জেতার পরে কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসকে কিনে নিয়েছে তৃণমূল। এদিন মহম্মদ সেলিম ঘোষণা করেন, ধূপগুড়ির বামফ্রন্ট প্রার্থী মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। বামফ্রন্ট প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় মঞ্চে উঠে ঘোষণা করেন, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আপনারা আমাকে নির্বাচিত করে বিধানসভায় পাঠালে আমি কোনোদিন, কোনও অবস্থাতেই কোনও ভয় ভীতি লোভে অন্য কোনও দিকে যাব না। 
এদিন ধূপগুড়িতে প্রচণ্ড গরম, সূর্যের তেজের মধ্যেই জনসমাবেশে বহু মানুষ সমাবেশে অংশ নেন।  সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম)’র জলপাইগুড়ি জেলা কমিটি সম্পাদক সলিল আচার্য। সভার শুরুতে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের শিল্পীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছোট ছোট মেয়েরা ভাওয়াইয়া নৃত্য পরিবেশন করেন। প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি নিজের লেখা দুটি  গান পরিবেশন করে তৃণমূল বিজেপি’র বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেন। যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে কত মায়ের কোল খালি হয়ে গেল, ছেলেমেয়েরা কাজের জন্য বাইরে চলে যাচ্ছে, কৃষক আলুর দাম পাচ্ছেন না, সারের বস্তায় ৬০০ টাকা লেখা, বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়, চা বাগানের জমি বেসরকারি মালিককে বেচে দিচ্ছে মল তৈরির জন্য, অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির জন্য। তৃণমূল বিজেপি’র কিছু যায় আসে?
সভায় সেলিম বলেন, বেকারের রুজি রোজগারের কী হবে? জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা চিকিৎসার কী হবে, এসব নিয়ে বিজেপি’র মোদী এবং মমতা ব্যানার্জির সরকারের চিন্তা নেই। বিজেপি ধর্মের কথা বলে গরিবের সাথে গরিবের লড়াই বাধিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে? মানুষের পোশাক দেখে, খাদ্য দেখে মানুষকে বিচার করা হবে? মানুষ যাতে নিজেদের  সমস্যা দাবি চাহিদা প্রয়োজন নিয়ে কথা বলতে না পারে সেজন্যই ধর্ম দিয়ে সম্প্রদায়গুলিকে ভাগ করার কৌশল নিয়ে চলছে। আমরা বামপন্থীরা চাই প্রত্যেকের পেটে ভাত, সব হাতে কাজ, সবার শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। এই নীতির পার্থক্য আমাদের সঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলের।
সেলিম বলেন, বিজেপি’র কায়দায় তৃণমূলও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনজাতির মানুষের মধ্যে  বিভাজন করে দিচ্ছে। রাজবংশীদের মধ্যে ভাগ করছে, আদিবাসীদের ভাগ করছে, নেপালিদের মধ্যে ভাগ করছে। সব জনজাতির মানুষকে ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ভাগ করে দিতে পারলে কেউ সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। তাহলে ওদের সুবিধা হয় শাসন আর শোষণ চালাতে। মোদীর নেতৃত্বে দেশ লুট হচ্ছে, আর এখানে মমতা ব্যানার্জির দল যত ধরনের চুরি লুট করা যায় সেই কাজ করছে। দুই দল কেউ কারো দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে চায় না। পরস্পরকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। একমাত্র বামপন্থীরা বুক ঠুকে জোর গলায় বলছে, আইন মেনে দুই দলের চোর লুটেরাদের ধরতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। সভায় এছাড়াও ভাষণ দেন সলিল আচার্য ও আরএসপি’র জেলা সম্পাদক সন্তোষ  সরকার। 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment