ভাস্কর দাশগুপ্ত
এবার স্থান পরিবর্তন বাঘিনী জিনাতের। টানা পাঁচ দিন বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে থাকার পর অবশেষে বাঘিনী অবস্থান পরিবর্তন করেছে দাবি বনদপ্তরের। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে শুক্রবার ওই বাঘিনী রাইকা পাহাড় থেকে নেমে সোজা চলে যায় বান্দোয়ান ব্লকের পাশেই মানবাজার দু নম্বর ব্লকের ডাঙ্গরডি বিট অফিস সংলগ্ন জঙ্গলে। বাঘিনীকে নিয়ে হিমসিম অবস্থা বনদপ্তরের। স্থানীয় বেশকিছু আলু ক্ষেতের জমিতে বাঘের পায়ে ছাপ দেখতে পান স্থানীয় মানুষজন। তারাই বনদপ্তরে খবর দেয়। তারপরে বনদপ্তরের কর্মীরা ছুটে আসেন সেখানে। ডাঙ্গরুটি বিট অফিসের পিছনে পাইসাগোড়ার ডুংড়ির জঙ্গলে বাঘিনী আত্মগোপন করে আছে বলে জানা গিয়েছে। গোটা এলাকাটাই নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বাঘিনীকে ধরতে এবার গোটা জঙ্গলটাকেই নেট দিয়ে ঘিরলো বনদপ্তর। আশা করা যাচ্ছে এক দু দিনের মধ্যেই ওই বাঘিনীকে তারা আয়ত্তে নিতে পারবে। পুরুলিয়ার মানবাজার ২ নম্বর ব্লকের ডাঙ্গরডি বিট অফিস সংলগ্ন জঙ্গলেই অবস্থান রয়েছে বাঘিনী। এ ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত বন দপ্তর। সূত্রে জানা গিয়েছে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের শাল গাছের জঙ্গলে ছেড়ে এবার সোনাঝুরি গাছের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে জিনাত।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাইকা পাহাড়ের যা ঘনত্ব এবং আয়তন ছিল তার থেকে অনেক কম বর্তমানে যেখানে বাঘিনী অবস্থান করছে। এই জঙ্গলের আয়তন ১৮ থেকে ২০ একর। রেডিও কলারের সিগনাল দেখে বনদপ্তর জানতে পারে বাঘিনী মানবাজার ২ ব্লকের ডাঙ্গরডি এলাকায় বিট অফিস সংলগ্ন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। জঙ্গলের একটি জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে জিনাত।
জঙ্গলের ভেতরে টোপ হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে খাঁচা। তাতে ছাগল, মহিষ ও শূকর রাখা হয়েছে খাদ্য হিসেবে। বন দপ্তরের পক্ষ থেকে ওই জঙ্গল এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে সুন্দরবনের ধাঁচে জাল দিয়ে। হাই ফ্রিকুয়েন্সি এন্টেনা দিয়ে বাঘিনীর গলায় ঝোলানো রেডিও কলারের অবস্থান সার্চ করে বাঘিনীর অবস্থান জানার চেষ্টা চালাচ্ছে বনকর্মীরা। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে চারটি ট্রাঙ্কুলাইজার টিম। বনকর্মীদের টিমগুলোকে আনা হয়েছে ওই জঙ্গলে। একেবারে যেন যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি। পুলিশ, বনকর্মীরা, হুলা পার্টি, ঘুম পাড়ানি গুলি ছুঁড়তে দক্ষ গানার সহ পটকা হাতি তাড়ানোর সরঞ্জাম, সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে যেন সাজ সাজ রব। এইসব দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষ ভয়ে গুটিয়ে আছে। এই জঙ্গলের আশেপাশে গ্রামের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। শুক্রবার ডাঙ্গরডি এলাকায় একটি সাপ্তাহিক হাট ছিল। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রচার করায় হাটে কোন কেনাবেচা হয়নি। কোন মানুষজন ও সেখানে আসেনি। এখন আশা কখন বাঘিনী ধরা পড়বে। নাকি বনকর্মীদের সমস্ত সতর্কতা কে ফাঁকি দিয়ে সে আবার এই জঙ্গল থেকে অন্য কোন জঙ্গলে ফের পাড়ি দেবে।
Comments :0