Editorial

জিতলেও খুশির জয় নয়

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


মোদী জমানায় উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপি’র জমি অনেকটা শক্ত হলেও সদ্য সমাপ্ত তিন রাজ্যের ভোট চিত্র থেকে পরিষ্কার সেই হৃত শক্তির ক্ষয় শুরু হয়ে গেছে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ফলাফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে যে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে তার ফলও বিজেপি’র পক্ষে তেমন উৎসাহব্যঞ্জক নয়। ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডে তারা ক্ষমতায় ফিরে এসেছে ঠিকই এবং মেঘালয়ে আগের বারের মতই পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকলেও প্রাপ্ত আসন সংখ্যা এবং ভোটের অংশের বিচারে তারা আগের জায়গা ধরে রাখতে তো পরেইনি বরং দুটোই অনেকটা কমে গেছে।
ত্রিপুরায় আগে ছিল বিজেপি’র ৩৫জন বিধায়ক। এবার ক‍‌মে হয়েছে ৩২। প্রাপ্ত ভোটের হারও আগের ৪৩.৬ শতাংশ থেকে কমে ৩৯ শতাংশ হয়েছে। তাদের জোটসঙ্গী আইপিএফটি’র আসন ৮ থেকে কমে একটিতে দাঁ‍‌ড়িয়েছে। ভোটের হারও ৭.৪ শতাংশ থেকে কমে ১.৩ শতাংশ হয়েছে। 

 

নাগাল্যান্ডে জেতা আসন অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টিতেই। তবে ভোটের হার সামান্য বেড়েছে। এই বৃদ্ধিটা জোটসঙ্গী এনডিপিপি’র কল্যাণে। এনডিপিপি’র আসন আগের ১৭ থেকে বেড়ে ২৫ হয়েছে। ভোটের হারও বেড়ে ২৫.৩ শতাংশ থেকে ৩২.২ শতাংশ। মেঘালয়ে আটকে গেছে আগের মতো ২টি আসনেই। এই রাজ্যে অবশ্য ভোটের হার সামান্য কমেছে।
উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে মোদীর দল। ২টি আসনের মধ্যে একটি ধরে রাখতে পারলেও অন্যটিতে লজ্জাজনক হার স্বীকার করতে হয়েছে। গত তিন দশক ধরে টানা জেতা আসনটি এবার কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদিঘি আসনে আগের বারের দ্বিতীয় স্থান থেকে এবার তৃতীয় স্থানে চলে গেছে বিজেপি। এখানে শাসক তৃণমূল হে‍‌রেছে বাম-কংগ্রেস জোটের কাছে। একমাত্র মুখ রক্ষা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের একটি আসনে জিতে।


ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মতো ছোট রাজ্যে জয়ের জন্য বিজেপি মরিয়া প্রচার চালিয়েছে। শুধু অকল্পনীয় অর্থ খরচই নয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রচারে গেছে। অমিত শাহ সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, দলের শীর্ষ নেতা ও সাংসদরা, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা দফায় দফায় প্রচারে গেছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তো ভোট পর্বের বেশিরভাগ সময় সেখানেই ঘাঁটি গেঁড়ে ছিলেন। এত কিছুর পরও হালে বিশেষ পানি জোটেনি। গত কয়েক বছরে দলের শক্তি ও প্রভাব যেটুকু বেড়েছিল সেটাও ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ক্ষয় শুরু হয়ে গেছে। মানুষ চোখ বুঝে মোদীর চমকে যে আর ভুলতে চাইছেন না তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।


যথারীতি এবারও বিজেপি-কে বাড়তি সুবিধা করে দিতে এবং বিজেপি বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার লক্ষ্যে বিপুল টাকার থলে নিয়ে ভোটের আসরে নেমে পড়েছিল তৃণমূল। মহা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নেতা মন্ত্রীদের প্রচারে পাঠিয়ে এমন ভাবসাব দেখাচ্ছিল যে বিজেপি-কে হারিয়ে তারাই ক্ষমতা দখল করবে। ত্রিপুরায় ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটাতেও জিততে না পারলেও কয়েকটি আসনে বিজেপি বিরোধী ভোট কেটে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের সামান্য ভোটে হারানোর ব্যবস্থা করেছে। মেঘালয়ে কংগ্রেস বিধায়ক ভাঙিয়ে তৃণমূলের নামে নির্বাচনে লড়াই করেছে। 

 

কংগ্রেসকে দুর্বল করে পাঁচটি আসনে জিতেছে ঠিকই আসলে বিজেপি-বিরোধী প্রকৃত শক্তিকে দুর্বল করে বিজেপি’র রাস্তা প্রশস্ত করেছে। এই কাজটি আগে করেছিল গোয়াতে। বিজেপি বিরোধী ভোট কেটে বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনার ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। বিজেপি’র হয়ে এই খেলাটা না খেললে গোয়ায় বিজেপি’র বদলে বিরোধীদের সরকার হতো। মজার ব্যাপার ভোটের আগে অন্য দল ভাঙিয়ে তৃণমূল গড়ে হইহই করে নামলো ভোটে। ভোটের পর সকলে যে যার দলে ফিরে গিয়ে তৃণমূলের সাইন বোর্ডটাও তুলে দিয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment