Editorial Ganashakti Shameless cheating

নির্লজ্জ ধাপ্পাবাজি

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti Shameless cheating

ভাঁওতা দেবারও একটা সীমা থাকা উচিত। নরেন্দ্র মোদীর সরকার সেই সীমা নির্লজ্জের মতো অতিক্রম করে গেছে শুধু তাই নয় তারপরও যথারীতি একের পর এক মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল-কে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের ধাপ্পাবাজির সীমা পরিসীমা নেই। ওডিশায় এয়ারটেল এবং জিও-র ৫-জি পরিষেবা চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএল চলতি বছরে ৪-জি মোবাইল পরিষেবা এবং ২০২৪ সালে ৫-‍‌জি পরিষেবা চালু করবে।

মন্ত্রী যে ঘোষণা করেছেন বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার আদৌ কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা আছে কিনা সেটা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। বস্তুত মন্ত্রী এর আগে বিএসএনএল নিয়ে যতগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার একটাও কার্যকর হয়নি। এটাও যে বাস্তবের আঙিনায় আসবে না সেটাও একপ্রকার নি‍‌শ্চিত। আসলে মন্ত্রী যে ঘোষণাগুলি করেছেন সেগুলি বাস্তবায়িত করতে গেলে যে যে পদক্ষেপগুলি সময় মতো নেওয়া দরকার সেগুলি যদি না নেওয়া হয় তাহলে ঘোষণা যে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে সন্দেহ নেই। বিএসএনএল’র ক্ষেত্রে বারবার সেই ঘটনাই ঘটছে। তারপরও নির্লজ্জের মতো ঘোষণা করা হচ্ছে। সরকারের আচরণ থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে সরকার জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবেই বারেবারে মিথ্যা  কথা বলে যাচ্ছেন মানুষকে আশার আলো দেখিয়ে বিভ্রান্ত করার জন্য।

এবিষয়ে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে মোদী সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল এবং এসএনটিএল-কে বন্ধ করে দিতে বা বেসরকারি হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু দেশজোড়া প্রবল আন্দোলনের চাপে সেটা করে উঠতে পারছে না। বন্ধ করতে বা বিক্রি করতে না পারলেও দুই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাকে ভাতে মারার আয়োজন পাকা করে ফেলেছে। টেলিকম পরিষেবা প্রতিদিনই আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বেসরকারি সংস্থাগুলি সর্বাধুনিক দেশি ও বিদেশি প্রযুক্তি এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে গ্রাহকদের উন্নত ও আধুনিক পরিষেবা দেবার যাবতীয় ছাড়পত্র সরকারের কাছ থেকে পেলেও সরকারের নিজের সংস্থার ভাগ্যে সেই সুযোগ মেলে না। মন্ত্রী মহানন্দে বেসরকারি সংস্থার আধুনিক পরিষেবা উদ্বোধন করতে ছুটে যান। কিন্তু সরকারি সংস্থাকে সেই পরিষেবা দেবার ব্যবস্থা করেন না।

উদারনীতির খোলা বাজারের গল্প শোনালেও মোদী সরকার আসলে উদারনীতির কর্পোরেট স্বার্থবাহী নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখে। সেই সংস্কারেই তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় যেখানে কর্পো‍‌রেটের স্বার্থ ষোল কলায় সিদ্ধ হয়। অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো টেলিকম ক্ষেত্রে যদি গোড়া থেকে খোলা বাজারের অবাধ প্রতিযোগিতা থাকতো তাহলে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকমের ধারে কাছে কোনও বেসরকারি সংস্থা ঘেঁষতে পারতো না। তাই দেশে মোবাইল পরিষেবা চালু করা হয়েছিল বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে।

বিএসএনএল-কে সেখানে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মোবাইল ফোনের বাজার বেসরকারি সংস্থাগুলির একচেটিয়া দখলে চলে যাবার পর বিএসএনএল-কে মোবাইল পরিষেবা চালুর অনুমতি দেওয়া হয়। কিছুদিন পর চালু হয় ৪-জি পরিষেবা। সুযোগ পায় বেসরকারি সংস্থাগুলি। যথারীতি অনুমতি মেলেনি বিএসএনএল’র। ৪-জি পরিষেবার বাজার যখন পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থার দখলে চলে গেছে তখন লোক দেখানোর মতো সরকারি সংস্থাকে ৪-জি চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সেটাও যাতে বিএসএনএল চালু করতে না পারে তারজন্য শর্ত চাপানো হয়। কোনও বিদেশি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। সবটাই দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে করতে হবে। অথচ বেসরকারি সংস্থাগুলি উন্নত বিদেশি এমনকি চীনের প্রযুক্তি এনে পরিষেবা দিচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তি যার কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষাই সম্পূর্ণ হয়নি সেগুলি নিয়ে বিএসএনএল’র নাকাল অবস্থা। ফলে আজও চালু হয়নি ৪-জি পরিষেবা। 

প্রথমে এবছরের আগস্টে, পরে নভেম্বরে, আরও পরে ডিসেম্বরে চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু হয়নি। এখন বলছেন ২০২৩ সালে চালু হবে। অথচ এর মধ্যে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ৫-জি চালু করে দিয়েছে। মন্ত্রী বলছেন বিএসএনএল ৪-জি প্রযুক্তিকে একটু অদল-বদল করে ২০২৪ সালে ৫-জি পরিষেবা চালু করবে। আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাকে ধ্বংস করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিএসএনএল প্রতিযোগিতায় থাকলে যে মোদীর প্রিয় বন্ধুরা হালে পানি পাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment