Editorial Ganashakti Mamata Banerjee Police

দলদাসত্বের দৃষ্টান্ত

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti Mamata Banerjee Police


গত পাঁচ বছর ধরে মমতা ব্যানার্জির পু‍‌লিশ গাব জ্বাল দিয়েছে না ঘোড়ার ঘাস কেটেছে তা এতদিন সাধারণ মানুষের বোধগম্য না হলেও কলকাতা হাইকোর্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পুলিশ আসলে একটি জোড়া খুনের মামলার তদন্তে নেমে গোলোক ধাঁধাঁয় চক্কর খেয়েছে। সেই গোলোক ধাঁধাঁ অবশ্য পুলিশের নিজের তৈরি। মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে পুলিশ পরিকল্পনা করে আঁটঘাট বেঁধে  ধাঁধাটি তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষে হলো না। হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কোনও তদন্তই হয়নি। তদন্তের নামে শুধু কালক্ষেপ করা হয়ে‍‌ছে।


তদন্তের গতিপথ অন্যদিকে ঘুরিয়ে আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। বিচারপতিরা তাই পাঁচ বছর ধরে চালানো গোটা তদন্তটাকেই বাতিল করে দিয়ে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। শাসক অনুগত এরাজ্যের দলদাস পুলিশ কর্তাদের উপর ন্যূনতম আস্থা ও বিশ্বাস না রেখে  আদালতই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে তদন্তের দায়িত্বে থাকবেন কোন অফিসার। রাজ্য সরকার তথা রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তাদের ঠিক করে দেওয়া অফিসার এই তদন্ত করবেন না। এমনকি তদন্তে কাজে অন্য যেসব আধিকারিক যুক্ত হবে তাদের নিজের পছন্দ মতো বেছে নেবার অধিকার দেওয়া হয়েছে আদালত নির্দিষ্ট অফিসারকে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্তে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‍‌পুলিশের এই অপদার্থতার জন্য খুন হওয়া দম্পতির সন্তান ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত। আর বিপরীতে শাসকদলের আশ্রিত খুনিরা আহ্লাদিত। ‍পু‍‌লিশ দায়িত্ব নিয়ে তাদের সুরক্ষিত রেখেছে এবং তাদের অপরাধ আড়াল করেছে।

পাঁচ বছর আগে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিন রাতে নিজের পর্ণকুটিরে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হয় হতদরিদ্র সিপিআই(এম)’র সমর্থক দেবপ্রসাদ দাস ও ঊষারানি দাসকে। এই দম্পতির সক্রিয়তায় ভোটের দিন শাসক দলের প্রত্যাশা পূরণ না হবার আশঙ্কা থেকে গভীর  রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় দু’জনকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এফআইআর হলেও পুলিশি গড়িমসি শুরু হয় প্রথম থেকেই। তদন্ত শুরুর আগেই কার্যত গন্ধ শুঁকে নবান্ন থেকে শীর্ষ পুলিশকর্তা নিদান দিয়ে দিলেন বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে নাকি এই ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্যেও প্রতিধ্বনিত হয় অনুপ্রাণিত পুলিশকর্তার তত্ত্ব। অবশ্য ফরেনসিক রিপোর্টে এক লহমায় বাতিল হয়ে যায় সেই তত্ত্ব। খুনিরা যেহেতু শাসকদলের আশ্রিত এবং নির্বাচনে ফায়দা লোটার জন্যই যেহেতু এই খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাই দলদাস পু‍‌লিশের দায় থাকে  অপরাধীদের  রক্ষা করার। সেই দায় থেকেই শুরু হয়েছে তদন্ত। ফলে এফআইআর যে অভিযুক্তদের কাউকে ধরা হয়নি।

বদলে ভস্মে ঘি ঢালার মতো ঘুরে ঘুরে নিরীহ কিছু মানুষকে ধরে ধরে হয়রানি করা হয়। অতপর আবিষ্কার করা হয় এক প্রত্যক্ষদর্শীকে। তার সাজানো বয়ান ধরে পাঁচ বছর ধরে শুধু চালে ডা‍‌লে মিশিয়েছে আর বেছে বেছে আলাদা করেছে। তদন্ত এগোয়নি একচুলও। অর্থাৎ পাঁচ বছর ধরে শুধু আইন ও সংবিধানকে ধোঁকা দিয়ে গেছে পুলিশ। অবশেষে আদালত চিনিয়ে দিয়েছে এই ধোঁকাবাজদের।

Comments :0

Login to leave a comment