Modi

মোদীকে পথে বসিয়েছে মুডিজ

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারতের অর্থনীতি নিয়ে স্বপ্নবিলাসী প্রধানমন্ত্রী যে রঙিন ছবি এঁকে চলেছেন তাতে খানিকটা কালি ছিটিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ। ভারতের ঋণ সামর্থ্য ও বিনিয়োগ যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে এবং অভূতপূর্বভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে মন্তব্য এই মার্কিন মৃল্যায়ন সংস্থা করেছে তাতে নরেন্দ্র মোদীদের মুখে চুনকালি পড়ার জোগাড়। তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে মণিপুরের জাতি দাঙ্গার এবং তাতে দেড় শতাধিক মৃত্যুর কথা। একই সঙ্গে আগ্রাসী সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক বি‍রোধীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত মোদীর ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও অস্থিরতা অর্থনীতির জগতে আস্থার ভিত দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। তাই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহ সরকারের পদক্ষেপ সত্ত্বে‍‌ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা বেশি আশাবাদী হতে পারেনি। মোদীরা যতই নিজের ঢাক পেটান, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি বলে আহ্লাদে আটখানা হোন, কয়েক বছর পর পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হবে বলে স্বপ্নে বিভোর হোন, পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে বলে আনন্দে আত্মহারা হন আর ২০৪৭ সালের মধ্যে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের মতো উন্নত পুঁজিবাদী দেশের শিরোপা অর্জনের অলীক স্বপ্ন দেখান বাস্তবটা ঠিক কোথায় তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মুডিজ। বিশ্ব পুঁজিবাদের অন্যতম ধারক মুডিজ স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের অন্যতম বাধা রাজনৈতিক অসংযম, বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতা। রাজনৈতিক ঝুঁকির কারণেই তারা ভারতের ঋণ সামর্থ্য বা বিনিয়োগ যোগ্যতাকে উজ্জ্বল দেখাতে পারেনি। অপরিবর্তিত রেখেছে একেবারে নিম্নতম ধাপে। এর থেকে এক ধাপ নামলেই ভারতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
ভারত সম্প‍‌র্কে মুডিজের এই মূল্যায়ন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেকোনও মূল্যায়ন সংস্থার বিবেচ্য বিষয় প্রধানত সীমাবদ্ধ থাকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীল দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে তারা কখনোই মাথা ঘামান না। এতদিন পর্যন্ত মুডিজ সহ অন্য মূল্যায়ন সংস্থাগুলি বেটিংয়ের সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ফিসকাল ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে। কিন্তু তাদের ফোকাস বদলে গেছে। তারা ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রবণতাকেও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে।
মোদী সরকারের তরফ থেকে বহুদিন ধরেই অনু‍যোগ করা হচ্ছে যে ভারতের শক্তি, সামর্থ্য ও সম্ভাবনার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটছে না মূল্যায়ন সংস্থাগুলির মূল্যায়নে। তাই মোদী জমানায় ভারতের সাফল্যের ফিরিস্তি নিয়ে একাধিকবার দরবার করা হয়েছিল মূল্যায়ন সংস্থাগুলির সঙ্গে। কিন্তু তাতে যে চিঁড়ে ভেজেনি মুডিজের রিপোর্টেই বোঝা যাচ্ছে। এর আগে গত মে মাসে অপর দুই আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা ভারতের মূল্যায়ন করেছিল। তাতেও তারা ভারতকে সর্বনিম্ন ধাপে রেখেছে। এক ধাপ নিচে নামা মানেই লাল সংকেত জ্বালানো। অবশ্য তারা কেউই রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় আনেনি। পরবর্তীকালে মূল্যায়নে হয়তো মুডিজের মতো হলুদ সংকেত জারি করে দেবে।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার তাদের গত ডিসেম্বরের পূর্বাভাস থেকে কিঞ্চিৎ কমিয়ে মুডিজ জানিয়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ হবে। আগে বলেছিল ৭ শতাংশ। এটাও বলেছে জি-২০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি হলেও সেটা দু’বছর স্থায়ী হবে। আর তার চালিকা শক্তি হবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি অর্থাৎ মোদীর দেখানো স্বপ্ন যে আসলে ফিকে মুডিজ সেটা খোলসা করে দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment