CPI(M)

উপভোক্তাদেরও মেলেনি আবাসের টাকা, জলপাইগুড়িতে বৃহত্তর আন্দোলনে সিপিআই(এম)

জেলা

কৌশিক দাম, জলপাইগুড়ি

নির্বাচনের আগে 'মাথায় ছাদ' দেওয়ার নামে আমজনতাকে একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দল। কিন্তু ভোট মিটতেই সেই প্রতিশ্রুতিগুলো মিলিয়ে গেছে কর্পূরের মতো। এই অভিযোগেই আজ তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছেন জলপাইগুড়ি জেলার হাজার হাজার উপভোক্তা। জেলার পৌরসভা এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত চা-বাগান পর্যন্ত—সবখানেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অসম্পূর্ণ আবাসের বোঝা টানছেন সাধারণ মানুষ। এই গুরুতর ব্যর্থতা, প্রশাসনের গাফিলতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবার বৃহত্তর আন্দোলনে নামছে সিপিআই(এম)।

​সিপিআই(এম)'র আসন্ন 'বাংলা বাঁচাও যাত্রা' এই অসম্পূর্ণ আবাস প্রকল্পের ভয়াবহ চিত্রকেই সামনে তুলে ধরবে। পার্টি নেতৃত্বের দাবি, এই গণ-আন্দোলন সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার সংগ্রামকে আরও তীব্র করবে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারে পথ তৈরি করবে। জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার তিনটি পুরসভা এবং সাতটি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ও চা-বাগান এলাকায় বহু প্রধানমন্ত্রী আবাস বছরের পর বছর ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোথাও ছাদ ঢালাইয়ের পর কাজ থমকে গেছে, কোথাও শুধু ভিত্তি বা দু’একটি খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। নির্মাণ শুরু হলেও মাঝপথে কাজ বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার আজও নিরাশ্রয়। কারও মাথায় ছাদ নেই, আবার কারও বাড়ি শুধু কাঠামো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে—যা বাসযোগ্য নয়। ফলে এই চরম শীতে বহু উপভোক্তা এখনও ভাড়া বাড়ি বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে চা-বাগান এলাকাগুলিতে শ্রমিক পরিবারগুলির দুর্দশা চরমে। একদিকে কাজের অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে অসম্পূর্ণ আবাসের বোঝা—এই দ্বিমুখী চাপ তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।

উপভোক্তাদের মূল অভিযোগ, প্রকল্পে বরাদ্দ টাকার ছাড়ে অনবরত দেরি, নির্মাণ সামগ্রীর লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধি এবং জনবিক্ষোভের পরও প্রশাসনের নিয়মহীন টালবাহানা—সব মিলিয়ে প্রকল্পটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জেলার বহু ক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতি ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি হয়নি। ​সিপিআই(এম)র তথ্য অনুযায়ী, জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ আবাসই এখনও অসমাপ্ত। যা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য, উভয় সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার নগ্নচিত্র তুলে ধরছে।

এই পরিস্থিতিতে সিপিআই(এম) দাবি করছে সরকারি উদাসীনতা ও লাগামহীন দুর্নীতির জেরে গরিব মানুষের মৌলিক অধিকার চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কমরেড পীযুষ মিশ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, "মানুষের মাথার ওপর ছাদ দেওয়ার কথা বলে সরকার ভোট চেয়েছিল। কিন্তু আজ সেই অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় সরকারই একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়াতে ব্যস্ত। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষই। আমাদের ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ এই প্রতারণার বিরুদ্ধে মানুষের সুরকে আরও জোরালো করবে।" 
​তিনি আরও বলেন, “আবাস প্রকল্পের দুর্নীতি সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃত গরিব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন, অথচ প্রভাবশালীদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় ঢুকছে। তাই অসম্পূর্ণ আবাস প্রকল্পের বাস্তব চিত্র এবং এই দুর্নীতির শিকড় উন্মোচন করে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিতেই এই যাত্রার উদ্যোগ।”

Comments :0

Login to leave a comment