যে কৃষক ফসল ফলায় তাকেই আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। আত্মঘাতী হচ্ছেন খেতমজুররা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও ফসলের দামের নিশ্চয়তা নেই। এই দাবিটুকু পূরণ করতে পারছে না দেশের সরকার।
ফসলের নঊণতম দাম নিশ্চিত করার আইনের দাবিতে লোকসভায় এই মর্মে সরব হলেন সিপিআই(এম) সাংসদ অমরা রাম। সারা ভারত কৃষক সভার এই নেতা মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাজেটের ওপর বক্তব্য রেখেছেন।
রাজস্থানের সিকরের সাংসদ রাম লোকসভায় বলেছেন, ‘‘কৃষক আত্মহত্যা বুঝিয়ে দেয় কৃষিতে সঙ্কট কতটা গভীর। ফসলের দাম নিশ্চিত করতে আইনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকারই। তিন বছর পরও সেই আইন আসেনি। বাজেটে দাম নিশ্চিত করার কোনও ব্যবস্থা নেই।’’
তিনি বলেন,‘‘সারের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে এই বাজেট। ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে। ৪০০ টাকার সার ৮০০ টাকা হয়ে গিয়েছে। যে দামে ৫০ কিলোর প্যাকেট মিলত তা এখন ৪৫ কিলো। ৫০ টাকা ডিজেল ছিল, এখন একশো টাকায় কিনতে হয়। সার কোম্পানি, বীজ কোম্পানি, ডিজেল কোম্পানি মামালামাল, আত্মঘাতী হচ্ছেন কৃষকরা, যাঁরা ফসল ফলান।’’
কৃষকের খেদ জানাতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে মনে করিয়েছেন মন্দসৌরের ঘটনা। মধ্য প্রদেশে এই এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ কৃষক, শিবরাজ তখন ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৭’র সেই ঘটনা মনে করিয়ে অমরা রাম বলেছেন, ‘‘যেখানে একশো টাকা খরচা পড়ে বীজ কিনতে সেই ফসলই ৫ টাকায় বিক্রি করতে পারছিলেন না কৃষকরা। ১৫ টাকা দরে তাঁদের থেকে ফসল কিনে নেওয়া হয়। বাজারে কোনও কোনও ফসল ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ফসলের দাম চাইতে গেলে গুলি চলে কৃষকদের ওপর।’’
সিকরের কথা বলেছেন অমরা রাম। তিনি বলেছেন, ‘‘এখানে পেঁয়াজ চাষ হয়। এমনও হয় যে কৃষকরা ৫টাকা দাম পান না পেঁয়াজের। এই পেঁয়াজ সস্তায় চলে যায় কোম্পানির গুদামে। সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয় বাজারে ৬০-৭০ টাকায়। দেশবাসী যখন চড়া দামে এই পেঁয়াজ কিনে খায়, আর কৃষক দাম পায় না, তখন বিকাশ হয়!’’
সিপিআই(এম) সাংসদ বলেছেন, ‘‘কৃষক দুধ উৎপাদন করেন। সেই দুধের দামের সমান কোমপানির জল বিক্রি হয়। এই অবস্থাকে বলা হয় ন্যায়। আসলে এর চেয়ে বড় অন্যায় আর হতে পারে না।’’
‘‘ভূমি অধিগ্রহণ অর্ডিন্যান্স এনেছিল এই সরকার। বাতিল করতে হয়েছে কৃষক আন্দোলনের চাপে। তিনি কালা কানুন আনল। এক বছর ধরে কৃষক রাস্তায় থেকে লড়ল। আইন বাতিল করতে হলো।
৯ আগস্ট, ২০২১ লিখে বলেছিল এমএসপি আইন হবে। সরকারমেনে নিয়েছিল আন্দোলনের দাবি ঠিক ছিল।’’ বিজেপি সাংসদদের আসন দেখিয়ে বলেছেন, সে সময়ে কৃষকদের বলা হয়েছিল সন্ত্রাসবাদী। মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনে ৭০০’র বেশি কৃষক শহীদ হন। তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছিল কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকার। একটি প্রতিশ্রুতিও পালন করা হলো না। অমরা রাম মোদী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘কৃষককে কিছু দিতে যদি না পারেন অন্তত বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।’’
তিনি বলেন, ‘‘ডাল আমদানি করে বিদেশে টাকা দিতে পারি আমরা কিন্তু দেশের কৃষককে টাকা দেওয়া হবে না- এটিই সরকারের নীতি।’’
BUDGET AMRA RAM
‘কৃষক মরছে, মালামাল হচ্ছে কোম্পানি’: বাজেট ভাষণে অমরা রাম
×
Comments :0