Inquilab Yatra

লড়াই জীবিকার, লড়াই সংবিধান রক্ষারও: বর্ধমানে বললেন আভাস

রাজ্য জেলা

অরিজিৎ মণ্ডল: বর্ধমান

একদিকে পালিত হচ্ছে নওজোয়ান ভারত সভার শতবর্ষ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উজ্জ্বল অধ্যায় গড়েছিল যে সংগঠন। আরেকদিকে শতবর্ষ বিশ্বাসঘাতক আরএসএস’র। এরাই স্বাধীন ভারতে যুবকের কাজের মতো দাবি আড়াল করে বিভাজনের রাজনীতি চালাচ্ছে। এই বিশ্বাসঘাতকদের চেনানোর লড়াইও লড়তে হবে আজ। 
রবিবার বর্ধমান স্টেশন চত্বরে নওজোয়ান ভারত সভার শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী। 
ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে শনি ও রবিবার পদযাত্রা হয়েছে বর্ধমানের ওঁয়াড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তের গ্রাম থেকে। সেই ‘ইনকিলাব যাত্রা’ এদিন শেষ হয় বর্ধমান স্টেশনে। সেখানেই হয় সমাবেশ।
আভাস রায়চৌধুরী বলেন,
আমাদের রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল মানুষের জীবনের আসল দাবি আড়াল করছে। এই খেলা চলছে বোঝাপড়া করে। সেই ‘সেটিং’ আমরা বারবার দেখছি। তিনি বলেন, অসংগঠিত শ্রমিকের মজুরি, যুবকের কাজ, অবৈতনিক শিক্ষা, কৃষকের ফসলের দামের দাবি আমাদের তুলে ধরতে হবে। তার জন্য শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুব সব অংশকে একজোট করে চলবে এই লড়াই। এক ইঞ্চি মাটি ছাড়া যাবে না বিশ্বাসঘাতকদের।
এদিন, নওজোয়ান ভারত সভার শতবর্ষে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বই প্রকাশ করেছে ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটি। 
ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেছেন, সকলের জন্য শিক্ষা, সকলের জন্য কাজের স্বপ্ন দেখেছিল নওজোয়ান ভারত সভা। এই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভগৎ সিং-রা। সেই স্বপ্ন সফল হয়নি স্বাধীনতার পরও। কাজের অধিকার স্বীকৃত হয়নি। কাজের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন যুবরা। তাই সেই সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই ডিওয়াইএফআই করছে যেখানে কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার  স্বীকৃতি পায়।
আভাস রায়চৌধুরী বলেন, আরএসএস-বিজেপি ভারতের ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সংস্কৃতির ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে।
ধর্মের রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী, ভিন্ন কৌশলে সেই রাজনীতিই করছেন মুখ্যমন্ত্রীও। 
তিনি বলেন, দুনিয়ার মধ্যে নবীনতম জনসংখ্যার দেশ ভারত। আর দুনিয়ায় ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বেকার। কে কোন ভাষায় কথা বলে, কে নারী কে পুরুষ, কার কী ধর্ম- এই নিয়ে যাবতীয় চর্চায় আসল কথা, অর্থাৎ মানুষ রোজগারের ঠিকানা খুঁজে পাবে কিনা, এই প্রশ্নকে আড়াল করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিভাজনের রাজনীতিতে মানুষকে ভাগ করা হচ্ছে। জাত, ধর্ম। ভাষা। লিঙ্গের নামে মানুষকে ভাগ করা হচ্ছে। ভাগ করছে কারণ এরা চাইছে যাতে আম্বানি-আদানিরা ভারতকে গিলে খেতে পারে। যাতে জনতার প্রতিরোধ গড়ে উঠতে না পারে। এরা রেল বেচছে, জমি বেচছে। বেচছে নদী, পাহাড়, জঙ্গল। লুট হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তুলে দিচ্ছে কৃষকের ভরতুকি। যদিও কৃষকরা লড়াই করে কৃষকবিরোধী আইন আটকে দিতে পেরেছেন। ‘ইনকিলাব যাত্রা’ এই লড়াইয়ের অংশ। 
আভাস বলেন যে নওজোয়ান ভারত সভা মানে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, স্বাধীনতার জন্য লড়াই, জাতের নামে বজ্জাতির বিরুদ্ধে লড়াই। স্বাধীনতার পর সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল, যে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের, বহুত্বকে স্বীকৃতির পরিসর তৈরি হয়েছিল, তাকে ধ্বংস করছে। 
তিনি বলেন, আমরা বামপন্থীরা লড়াই করেছিলাম, একশো দিনের কাজের আইন হয়েছিল। আজ সেই আইনকে প্রয়োগ না করে আটকে রাখছে বিজেপি। রাজ্যে একশো দিনের কাজ নেই। বলছে তৃণমূল চুরি করছে। কিন্তু চোরকে ধরছে না। গরিব মানুষের কাজ আটকে রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘সেটিং’ আমরা বারবার দেখছি। আরজি করের ঘটনায় বিচার পায়নি। দুর্গাপুরে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় চিকিৎসকরা গিয়েছেন, পুলিশ কথা বলতে দেয়নি পরিবারের সঙ্গে। গরু পাচার, কয়লা পাচার, চিট ফান্ড সর্বত্র সেটিং দেখেছি আমরা।
তিনি বলেন, বিনা লড়াইয়ে অধিকার কোথাও আদায় হয়নি। আজও সেই লড়াই করতে হবে। আমরা বামপন্থীরা চেষ্টা করছি সেই লড়াই করছি। মানুষ আমাদর এই লড়াইয়ে দেখতে চাইছেন। আজকের লড়াই যেমন জীবিকার, তেমন সংবিধান রক্ষার, ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই। 
সমাবেশে এদিন বক্তব্য রাখেন ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অয়নাংশু সরকার।

মও। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অয়নাংশু সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment