উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করেছে বর্ষা। প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে সিকিমে। প্রবল বৃষ্টিতে ভেসেছে পাহাড়ি রাস্তা। আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক।
গত কয়েকদিন ধরে সিকিম রাজ্যে বর্ষা শুরু হয়েছে। আর বর্ষার শুরুতেই ভারী বর্ষনের কারণে সিকিমের বেশ কিছু পাহাড় থেকে বড় বড় ধ্বস নামতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সিকিমের পেগংয়ের কাছে ধ্বসের জেরে লাচেন,লাচুং, ও ইয়ুমথাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই তিন জায়গায় প্রায় দু হাজার পর্যটক আটকে পড়েছে। ফুঁসছে তিস্তার জলের স্তর।
সূত্রের খবর ১৫ জুন রাত থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে সিকিমে। ১৬ জুন ও সারাদিন ছিল ভারী বৃষ্টি। এর ফলে সিংটাম, ডিকচু, রাংরান,মঙ্গন, চুংথাং প্রভৃতি এলাকার সংযোগকারী রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় ভূমি ধ্বস নামে। রাস্তার ওপর দিয়ে ভীষণ স্রোতে জল যাওয়ায় রাস্তা প্রায় ধ্বংসের মুখে।
সিকিমের রাঙ্গারাংয়ের দুই পাশেই ক্ষয়ক্ষতি শুরু হয়। এই শহরে ঢোকার দুটি রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে বিপর্যয় মোকাবিল করতে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের কর্মীরা যখন রাস্তার ধ্বস সরিয়ে রাস্তা চলাচল যোগ্য করার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই মাঙ্গান থেকে চুংথাং সড়কের একটি অংশে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের স্রোত আসে। আর তাতেই ভেসে যায় সড়কের একটি অংশ ও একটি যোগাযোগ রক্ষাকারী সেতুও। যদিও এই মুহুর্তে পাথর ও ধ্বস সরিয়ে ওই রাস্তা জরুরি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
সিকিম ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগকারি রাস্তা দ্রুত খোলার কাজ চলছে। তবে ভারি বৃষ্টির জন্য কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হচ্ছে।
সিকিম রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভারী বৃষ্টিতে রাস্তায় বের হতে বারন করা হয়েছে। কারণ ফের পাহাড়ে ধ্বস নামতে পারে।
সিকিম প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে, রাতভর বৃষ্টির কারণে গত ভোরে সিংটাম ও রংরাংয়ে আরো দুটি ধ্বস নেমেছে। মূলত পাহাড়ের ওপর থেকে ভারি পাথরের চাঁই নেমে এসে পুরো রাস্তা আটকে যায়। সেই সময় ঘটনাস্থল দুটিতে কোন যানবাহন না থাকায় কোন রকম ক্ষতি হয় নি।
সিকিম প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পর্যটকেরা সুরক্ষিত রয়েছেন। উদ্বেগের কিছু নেই। স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরা তাদের খোঁজ নিচ্ছেন।
সিকিম পাহাড়ে অবিরাম বৃষ্টির হয়ে চলায় ইতিমধ্যেই তিস্তা নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকা দোমহনী থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে জলপাইগুড়ি সেচ দপ্তর।
জলপাইগুড়ির সেচ দপ্তরে অবস্থিত সেন্ট্রাল ফ্লাড কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা গেছে তিস্তা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গেই শুক্রবার সকালে ওদলাবাড়িতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ থেকে প্রথমে জল ছাড়া হয় ২৬৪৭.৬৩ কিউসেক। পরবর্তিতে ব্যারেজের জল ধারণ ক্ষমতার উর্ধ্বে জলস্তর পৌছে যাওয়ায় বেলা ১২ টা নাগাদ পুনরায় জল ছাড়া হয়েছে যার পরিমান ৩১৭৩.৭৪ কিউসেক।
দফায় দফায় তিস্তা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে তিস্তা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই শঙ্কিত হয়ে পরেছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।
জলপাইগুড়িতে অবস্থিত সেন্ট্রাল ফ্লাড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গিয়েছে পাহাড় অবিরাম বৃষ্টি এবং তিস্তা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি থানার অন্তর্গত দোমোহনি থেকে হলদিবাড়ির ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় নদীর জলস্তর আরো বৃদ্ধি পাবে। জলস্তর আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর রবিবার ১৮ জুন কলকাতা সহ পার্শ্ববর্তী জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা, হুগলীতে সকালের অস্বস্তিকর গরমের জেরে হলুদ সতর্কতা অবশ্য সেদিনও জারি থাকছে। কিন্তু বিকালের পর থেকে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বজ্রপাত সহ হালকা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা খুব একটা না নামলেও সোমবার ফের বৃষ্টির জেরে তাপমাত্রার বহর কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। সোমবারের বৃষ্টির পর কলকাতা সহ পাশের জেলায় গরম কিছুটা হলেও কমতে পারে। আপাতত মরশুমি বর্ষার যা পরিস্থিতি, তাতে তা দক্ষিণবঙ্গে আগামী বুধবারের মধ্যে ঢুকে পড়ার কথা। সোমবার বৃষ্টির প্রকোপ বাড়লে সেটি হবে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি।
Comments :0