গল্প
স্বজন
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
মুক্তধারা
রোদটা গায়ে মেখেই নাসিম গরুটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে। শীতকাল। তেমন উত্তাপ নেই। কিন্তু একটা কষ্ট আছে। শীতকালে কষ্টটা বাড়ে তার।শ্বাসের কষ্ট। একসময় খুব খাটুনি খেটেছে। মরা বাপের অভাব বুঝতে দেবে না মাকে।এ ছিল তার জেদ। তাই শরীরের কষ্টকে মালুম করে নি। মাঠের চাষবাস,জনমজুরের কাজ সব করতে হয়েছে। আজ বুড়ো বয়েস। শরীর তো শোধ নেবেই।
ভাবতে ভাবতে খক খক করে কাশি আসে নাসিমের। বিড়িটা মুখ থেকে খুলে পড়ে যায় কোথাও। এদিক ওদিক দেখেও খুঁজে পায়না সে। হেঁটে চলে গরুটার পাশে পাশে। একটু একটু করে রোদ উঠতে থাকে।
কাশিটা আজকাল বেড়েছে তার। মা টা চলে যাওয়ার পর বাঁচার ইচ্ছেটাও কমে গেছে। সাদি করে নি।বউ,ছেলে পিলে কেউ নেই। বাপের ছোট কুঁড়ে, একফালি জমি আর এই গরুটা নিয়েই তার জীবন। গরুটা যেদিন থাকবে না, সেদিন সব ফেলে সেও যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবে । এমনি ভেবে রেখেছে সে।
হাঁটতে হাঁটতে মাঠে এসে থামে নাসিম। একটু হাঁপায়। উবু হয়ে বসে লুঙ্গির খুঁট থেকে একটা বিড়ি বের করে ধরাতে চেষ্টা করে। কাশির দমক আসে। থামতে চায় না। এই শীতেও ঘাম আসে গায়ে। শরীরখানা অবশ লাগে। খানিক বসে উঠে দাঁড়াতে যায় পারে না। আবার বসে পড়ে। চোখ ধোঁয়া হয়ে যায়।
অনেক পরে চোখ মেলে নাসিম। চারিদিকটা তাকায়।দেখে তার চারদিকে দাঁড়িয়ে কতজন।বরকত,দিলীপ, শম্ভু,রতন সবাই।চেনা মুখগুলোকে একে একে দেখে সে। চোখটা আরও একটু ঘুরিয়ে দেখে সে শুয়ে রয়েছে হাবিব ডাক্তারের ডাক্তারখানায়। একটু অবাক হয়।তারপর একটু চেষ্টা করে আলতো গলায় জিজ্ঞেস করে-'আমার মামনিটা কোথায়?'
শম্ভু বলে-'চিন্তা কোর না চাচা,সে আমার বাড়িতে আছে'।
চোখের কোন বেয়ে জল নেমে আসে নাসিমের।অশক্ত হাতখানা দিয়ে শম্ভুর হাতখানা ছোঁয় সে। ঠোঁট দুটো থরথর করে কাঁপতে থাকে।
Comments :0