ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ শিথিলের দিকে গুরুতর পদক্ষেপ নিল ব্রিটেন। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের সরকার এই পদক্ষেপকে ‘তিন দশকের সব বড় ঝাঁকুনি’ আখ্যা দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘লাল ফিতের ফাঁস কেটে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনি’ দিতে চলেছে ৩০টি সিদ্ধান্তের এই সংস্কার প্যাকেজ।
অর্থনীতিবিদদের মত, সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ব্যাঙ্কের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে চালু বিধিনিষেধ প্রায় তুলে নেওয়ার দিকে এগনো। মুনাফার খোঁজে অত্যধিক ঝুঁকির প্রবণতা ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৮’র ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের পর।
তাঁরা বলছেন, ঝুঁকি কমাতে সাধারণ গ্রাহকের পরিষেবা থেকে আলাদা করা হয়েছিল শেয়ার বাজারে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে। যাতে সাধারণ গ্রাহক শেয়ার বাজারের টালমাটালে বিপর্যস্ত না হন। এই সুরক্ষা বলয় এবার তুলে নেওয়া হচ্ছে।
ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলছেন, ‘‘ব্রেক্সিটের সুযোগ নিতে চাইছে ব্রিটেন। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ঠিক করা হবে।’’ ইউরোপীয় ইউনিয়ন গোষ্ঠী থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিল ব্রিটেন, পরিভাষায় ‘ব্রেক্সিট’। হান্টের বক্তব্যে স্পষ্ট, জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো আর্থিক পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো রাখা হবে না দেশে। তাঁর দাবি, ‘‘নতুন সংস্কার বৃদ্ধিতে টার্বো ইঞ্জিনের কাজ করবে। সবচেয়ে উদার, গতিশীল, প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র তৈরি হবে ব্রিটেনে।’’
সরকারের সমর্থকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণের কারণে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির পক্ষে কম আকর্ষণীয় অর্থনীতি হয়ে উঠেছে ব্রিটেন। দেশের ভেতরে বড় আর্থিক লগ্নি সংস্থাগুলি সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করছিলেন। এবার সেদিকে এগনোর ইঙ্গিত মিলেছে।
বিরোধী লেবার পার্টির তরফে যদিও সুনকের ‘ঝোড়ো সিদ্ধান্তের’ সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০৮’র পর বিনিয়োগ ব্যাঙ্কগুলির শেয়ারে ধস নেমেছিল। ফেরত আসার সম্ভাবনা কম এমন ক্ষেত্রেও ঋণ দিয়ে হিসেবের খাতা তৈরি হয়েছিল। শেয়ার বাজারে শেয়ারের দাম বেড়েছিল। ‘বিষাক্ত সম্পদ’ শেষ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে ধস নামিয়েছে। কারণ ঋণের টাকা ফেরেনি, শেয়ার পড়ে গিয়েছে। সেই শিক্ষা ভুলে যাওয়া হচ্ছে।
২০০৮’র সময় ব্রিটেনের সরকার চালাচ্ছিল লেবার পার্টি। টাকার মূল্যে দেড় লক্ষ কোটি টাকা সরকারি কোষগার থেকে দেওয়া হয়েছিল মুখ্যত বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে। লগ্নি পুঁজির কেন্দ্র ব্রিটেন বা আমেরিকার সঙ্কটের রেশ পড়েছিল সারা বিশ্বে।
নতুন পদক্ষেপে আর্থিক সংস্থার লোভনীয় দুই তহবিল বিমা এবং পেনশন দীর্ঘমেয়াদী সম্পদে বিনিয়োগের ঢালাও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবাসন বা বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিনিয়োগ হলে দ্রুত নগদে রূপান্তর করা কঠিন। সাধারণ পেনশন গ্রাহক বা বিমা প্রকল্পের উপভোক্তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পোক্ত না হলে তাঁদের সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
Comments :0