নিম্নচাপের বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরেও বান্দোয়ান ব্লক সদরের একাধিক গ্রাম বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। তিন চার দিন ধরে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম অসুবিধায় পড়েছেন বান্দোয়ানের কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কেন্দবনি, গুড়পানা, লোটো ঝরনা, চিরুডি গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়গাড়া, ভোগিডি,খেড়িয়াডি, কুইলাপাল,বেকো, ভসমকাটা, কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতাড়া প্রভৃতি গ্রাম রয়েছে অন্ধকারে। ব্লক প্রশাসনের দাবি বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ে গাছ পড়ে যাওয়ার কারণেই বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এলাকার মানুষজনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎবাহী তারের সঙ্গে ছুঁয়েয়ে থাকা গাছের ডাল কাটার কোন উদ্যোগ নেয়নি বিদ্যুৎ দপ্তর বা পঞ্চায়েত। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ। সেদিকে বিদ্যুৎ দপ্তরের একেবারে নজর নেই। বিদ্যুৎ দপ্তর এবং প্রশাসনের চরম উদাসীনতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে বান্দোয়ানের চিরুডি গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঙ্গে ছুঁয়ে থাকা বিভিন্ন গাছের ডাল কাটতে শুরু করেন। শুক্রবার রাত থেকে যেভাবে বিদ্যুৎহীন রয়েছে এলাকা তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। অন্ধকারের মধ্যে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃষ্টি থেমে গেলেও বিদ্যুৎ নাই। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার মানুষজনের।
বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম ৯ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর সিমলাপাল এলাকায় জল বইছে। শিলাবতী নদীর সেতুর উপর দিয়ে জল বইছে। জলের তলায় ওই এলাকার পাথরডাঙার কজওয়েটিও। একই ছবি শিলাবতী নদীর উপরেই তালডাংরার হাড়মাসড়া সংলগ্ন ইঁটাপোড়া সেতুতেও।
সেতুর উপর জল থাকায় খাতড়া-বাঁকুড়া ভায়া হাড়মাসড়া রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। শিলাবতী নদীর উপর তিন তিনটি সেতু জলমগ্ন রয়েছে। বাঁকুড়া শহরের সঙ্গে খাতড়া মহকুমা এলাকা ও প্রতিবেশী জেলা ঝাড়গ্রামের যোগাযোগ এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত ৯৬ ঘন্টায় ২৫৬ মিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বাঁকুড়ায়। জেলার ২২ টি ব্লকই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। শালতোড়া, বড়জোড়া, ওন্দা, জয়পুর, বিষ্ণুপুর, ইন্দাস, কোতুলপুর, পাত্রসায়র, সোনামুখী, সিমলাপাল, ইন্দপুর ও রাইপুর ব্লক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
মঙ্গলবার হুগলীর খানাকুল ২ ব্লকের ধান্যঘোরী পঞ্চায়েতের কাকনান গ্রামে পোড়ে পাড়ায় কাশিনাথ পোড়ের বাড়ির কাছে পুরানো রেশন দোকানের সামনে দ্বারকেশ্বর নদীর পূর্ব পাড়ে বাঁধে হানা পড়েছে। ৫০ - ৬০ ফুট চওড়া বাঁধ ভেঙে হু হু করে নদীর জল গ্রাম ও মাঠ ভাসিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ধান্যঘোরী গ্রাম পঞ্চায়েতের কাকনান, ঘোড়াদহ, ধান্যঘোরী গ্রামসহ রাজহাটি-১, রাজহাটি-২, ঠাকুরানীচক ও নতিবপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়তের বিস্তীর্ণ কৃষি বলয় সহ সংলগ্ন গ্রামগুলিতে প্লাবনের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বেলা তিনটে নাগাদ নতুন করে এই ধান্যঘোরি পঞ্চায়েতের কাকনান পোড়ে পাড়ায় দ্বারকেশ্বরের পূর্বপাড়ের বাঁধ ভেঙ্গে প্রধান কৃষি ফসল ধান জমির মাঠ জলে ভেসে যায়। এর ফলে রাজহাটি- কাকনান ভায়া রামচন্দ্রপুর হসপিটাল রোড জলের তলায়। পাশাপাশি গ্রামীণ লিঙ্ক রোডগুলি ডুবে গেছে। রামচন্দ্রপুর গ্রামের বহু বাড়িতে এক মানুষ সমান জল জমে গেছে। মাটির বাড়ির বাসিন্দারা পাশাপাশি গ্রামের পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত চার দিনের এক নাগাড়ে বৃষ্টির ফলে দ্বারকেশ্বর নদীর জল ফুলেফেঁপে ওঠে। সোমবার খানাকুল ১ ব্লকের কিশোরপুর ১ ও কিশোরপুর ২পঞ্চায়েতের ২টি জায়গায় দ্বারকেশ্বর নদীর পশ্চিম পাড় ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার এই এলাকার বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দ্বারকেশ্বর নদীর পশ্চিম পাড়ের গ্রাম ও কৃষি জমির মাঠগুলো সহ রাস্তা ঘাট জলে ডুবে গেছে। এলাকার উঁচু বাড়িতেও জল ঢুকেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। রাস্তায় নৌকা , ডোঙা ও ভেলা করে যোগাযোগ চলছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই চরম দুর্দিনে প্রশাসনের দেখা কোন নেই। খাবার ও পাণীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ত্রাণ শিবির খোলার উদ্যোগ নেই। মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনযাপন করছেন। গোঘাটের বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আরামবাগ পুরসভার ও লাগোয়া বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া হুগলী জেলার বিস্তীর্ণ কৃষি বলয়ে বহু চাষের মাঠ জলে ডুবে গেছে। পুকুর ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে গেছে। আমন ধান সহ বিভিন্ন সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে । এর সঙ্গে ডিভিসি'র ছাড়া জল এলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
Heavy Rains West Bengal
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ একাধিক জেলায়
×
Comments :0