Jalpaiguri Flood

জল নামতেই ভয়াবহ চিত্র জলপাইগুড়িতে

রাজ্য জেলা

দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি

বন্যার জল নামতেই বন্যা কবলিত জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ফুটে উঠছে আরও ভয়াবহ চিত্র। ইতিমধ্যে মালবাজার মহকুমার নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙা চা বাগানে পাচ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের নাম পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এছাড়াও চারিদিকে শুধুই ধ্বংসাবশেষ। জলের তোড়ে বহু ঘর বাড়ি থেকে শুরু করে জঙ্গলের বড় বড় গাছ পড়ে রয়েছে স্তুপ আকারে। যেই এলাকাগুলোতে শনিবার রাতেও বসতি ছিল তার ভগ্নাশেষের উপর জমেছে পলি। নিজের বসত ভিটে চেনাও দায় হয়ে দাড়িয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জেরে বানারহাট ও নাগরাকাটার মধ্যবর্তী ১৭ নং জাতীয় সড়কে কালীখোলা সেতুতে যান চলাচল এখনও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সেতুর হাল ঠিক না হওয়ায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। তবে কবে কালীখোলা সেতু তৈরি সংস্কার করে চলাচলের যোগ্য করা হবে তা নিয়েও একপ্রকার অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য ইতিমধ্যেই কাজও শুরু করেছে। সেতুর বসে যাওয়া পিলার মেরামত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে কালীখোলা সেতু পরিদর্শনে এসে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে। 
অভিযোগ আলিপুরদুয়ার গ্যারগ্যান্ডা সেতু যেভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেই ভাবেই কালীখোলা সেতুর কাজ করা হচ্ছে। ফের বৃষ্টি হলে ধসে পড়ে যাবে সেতু।
রবিবার আসেন নি মুখ্যমন্ত্রী সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে আসতে পারেন অনুমান করা হচ্ছে।‌কারণে সেতুর কাজ পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে একাধিক গ্রাম।  মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। তাদের বক্তব্য উত্তরবঙ্গে মানুষ মারা যাচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কার্ণিভাল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। যদিও শুধু উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে বিষয়টি সিমাবদ্ধ এখন আর নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সারা দেশের মানুষ।
সোমবার সাততন্ডু বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় গ্রামজুড়ে হাঁটু-সমান থেকে কোমর-সমান জল ঘরে ঘরে জল ঢুকে পড়েছে। সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত গ্রামবাসীরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন। সেখানে কোনও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা অভিযোগ তুলেছেন বন্যায় আমরা ঘরবাড়ি হারিয়েছি দিনভর জলমগ্ন অবস্থায় ছিলাম কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজও নিল না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। প্রশাসনিক গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।‌ স্থানীয়দের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পরেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে জলের তোরে গন্ডার হাতি, অজগর সাপ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষও ভেসে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে। এগারো জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।‌ এখনও নিখোঁজ অনেকেই।‌ নিহতদের মধ্যে নাগরাকাটার ২ জন পুরুষ, ৫  মহিলা, ৬ বছরের ১ শিশু কন্যা, ২ মাসের ১ শিশু কন্যা।   
ময়নাগুড়ি ব্লকের অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলা, বানারহাটে ভুটানের পুরুষ নাগরিকের দেহ সহ জলপাইগুড়ি জেলার এখন পর্যন্ত ১১ জন মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।  বামন ডাঙ্গা এলাকার এক পরিবারের মা ও মেয়ের দেহ উদ্ধার হলেও ছোট ভাইয়ের দেহ এখনো উদ্ধার হয়নি। ময়নাগুড়ির দিক থেকে তিস্তায় ভেসে যাওয়া এক ব্যক্তিকে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ এলাকায় উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। জানা গেছে বগড়ি বাড়ি থেকে এক ব্যাক্তি বন্যায় ভেসে আসছে দেখতে পান স্থানীয়রা। ওই ব্যক্তিকে সারোহাটির বসুনিয়া বাড়ির কাছে নদী থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ধুপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারী ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ আলতা গ্রাম ভাটিয়া পাড়ায় খরস্রতা জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে গ্রামে, প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এর আগেও এই এলাকার  মানুষ দাবি করেছিলেন স্থায়ী বাঁধের। কাজ শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি কাজ।  রবিবার  সারারাতে মাত্র ১০ টি ত্রিপাল দিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ কোন কমে রাত কাটালেও আজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে একেবারে থাকা-খাওয়ার হাহাকার। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র থেকে শুরু করে বাড়িতে মজুদ কাপড় খাদ্য সামগ্রী সমস্ত কিছুই হারিয়ে আজ কান্নায় ভেঙে পড়েছে গ্রামের মানুষ। এখনও পর্যন্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে কোন প্রশাসনিক আধিকারিকরা এই গ্রামে আসেনি বলেই অভিযোগ করছেন গ্রামবাসীরা। তবে এই মুহূর্তে খাদ্য সামগ্রী পানীয় জলের দাবি করছেন গ্রামবাসীরা।।   
স্থানীয়দের বক্তব্য জলবন্দি মানুষদের উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। বিপর্যয় মোকাবিলা দলেরও উপস্থিতি ছিল না। শুধুমাত্র স্থানীয় এক যুবক, যিনি বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে যুক্ত, তাঁর সঙ্গে এলাকার তরুণরা মিলে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। রেড ভলেন্টিয়ার্সের সদস্যরা সমস্ত রকমের সহোযোগিতা করে চলেছেন। সরকারি উদাসীনতার মধ্যেই জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের তিস্তা পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি এলাকায়, বামনী বনবস্তি এলাকায় সুখনো খাবার, রান্না করা খাবার এর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন রেড ভলেন্টিয়ার্সরা সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রাতে যুবনেতা দেবরাজ বর্মন ছাত্রনেতা অর্ণব সরকারের নেতৃত্বে  রেড ভলেন্টিয়ার্সরা। জলমগ্ন এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে শুকনো খাবার জলের বোতল পৌঁছে দেন রেড ভলেন্টিয়ার্সরা। সোমবার দুপুরে জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদের পক্ষ থেকে সুকান্ত নগর কলোনির বন্যা বিধ্বস্ত মানুষকে ত্রিপল, ওষুধ, মোমবাতি, শলাই, মশার ধূপ বিলি করা হয়।

Comments :0

Login to leave a comment