Editorial

প্রবল অস্বস্তিতে

সম্পাদকীয় বিভাগ


সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার অধঃস্তন সঙ্গী হয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের জাহির করতে গিয়ে যে অতি চালাকির আশ্রয় নিয়েছে মোদী সরকার তাতে ভারতেরই শুধু সম্মানহানি হচ্ছে তা নয়, বেকাদায় পড়তে হচ্ছে মোদীদেরও। পূর্বতন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাইডেনের যতই কোলাকুলি করে মাখোমাখো সম্পর্কের বিজ্ঞাপন করুন না কেন আমেরিকার অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক পরিসরের একাংশ প্রবলভাবে মোদী শাসনের সমালোচনায় মুখর। বিশেষ করে মোদী জমানায় ভারতের বুকে ধর্মীয় স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার সংকোচনের বহর এতটাই বেড়ে গেছে যে একাধিক মার্কিন সংস্থা মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতি ও অবস্থানের বিরোধিতা করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ এবং সরকারের সমালোচক ও বিরোধীদের নানাভাবে হয়রানির ঘটনাকে সামনে রেখে ভারতকে উদ্বেগজনক দেশের তকমা দিতেও তারা দ্বিধা করছে না। ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম নামে মার্কিন ফেডারেল সংস্থা আবার ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে মার্কিন সরকারের কাছে। এই নিয়ে পরপর চার বছর তারা সরকারের কাছে এমন সুপারিশ করলেও সরকার তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। আসলে মোদীদের যেমন আমেরিকাকে দরকার তেমনি আমেরিকার দরকার মোদীদের। চীনকে কোণঠাসা করার মার্কিন পরিকল্পনায় ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনে প্রভাব বৃদ্ধি আটকাতে আমেরিকা যে নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়ে তুলতে চাইছে তার একেবারে সামনে রাখতে চাইছে ভারতকে। তেমনি দেশে ক্ষমতা দখলে রাখার লক্ষ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের জোয়ার তুলতে দরকার শক্তিশালী শত্রুপক্ষ। মোদীর ভারত চীনকেই সেই প্রধান শত্রু চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আবেগকে স্থায়ী রূপ‍‌ দিতে চায়। চীনের বিরুদ্ধে তাই ভারত ও আমেরিকা একে অন্যকে কাছে চায়। আবার ভারতকে সঙ্গে পেলে চীনের বিরুদ্ধে ভারতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে দিব্যি কাজ হাসিল করতে পারে আমেরিকা।
এতদসত্ত্বেও উদার গণতন্ত্রের যে ভিত এখনো আমেরিকায় টিঁকে আছে তাতে ধর্মীয় ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা গুরুত্ব পায় অনেক ক্ষেত্রেই। তাই ভারতের বর্তমান সরকার ও শাসক দল যেভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করছে তাতে তারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাছাড়া মোদী সরকারের অসহিষ্ণুতা, প্রতিহিংসা, বিরোধী পরিসরকে অস্বীকারের প্রবণতা যেভাবে বাড়ছে তাতেও তারা ক্ষুব্ধ। নিছক বিরোধিতা বা সমালোচনার জন্য সমাজকর্মী, শিক্ষক, গবেষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের যেভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে এমনকি জেলে পোরা হচ্ছে সেটা তারা মানতে পারছে না। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হচ্ছে মার্কিন নাগরিক পন্নুর হত্যার ছক। এর সঙ্গে ভারতের শীর্ষ আধিকারিকের হাত আছে বলেই মনে করে আমেরিকা। এর সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে কানাডায় নিজ্জর হত্যার ঘটনা। সেখানে কানাডা সরাসরি অভিযোগ করেছে সেই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের যোগ আছে বলে। তাৎপর্যের বিষয় আমেরিকার দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই কানাডা ভারতের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ করেছে। আবার আমেরিকাও মনে করে পন্নুর হত্যার ছকের সঙ্গে নিজ্জর হত্যার যোগ আছে। অতএব কাঠগড়ায় মোদী সরকার। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন প্রেমে গদ গদ মোদীরা প্রবল চাপে। আগে হম্বি তম্বি করলেও এখন বিদেশমন্ত্রীকেও ঢোক গিলে কথা বলতে হচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment