INSAF JATRA LIFE

অনেককিছু জীবনে যোগ দিয়ে হাঁটছেন পদযাত্রীরা

রাজ্য জেলা

মঙ্গলবার খড়দহে ইনসাফ যাত্রায় যুব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অসীম দাশগুপ্ত।

মায়েদের কোলে থাকে একরত্তি শিশু। পাতা তোলার আগে বাগানের পাশে শুইয়ে রেখে কাজে যেতে হয় মায়েদের। 
‘‘জানো কেমন ভয় করে? বারবার মনে হয় চিতাবাঘ বুঝি এল।’’ 
চা বাগানের মহিলা শ্রমিকরা এভাবেই বলেছেন ইনসাফ যাত্রীদের। বাগান ছেড়ে বেরিয়ে এসে কথা বলেছেন। আরও বলেছেন, তাঁদের ছাতা বা বর্ষাতি দেওয়ার কথা। কিছুই দেওয়া হয় না। স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার কথা, দেওয়া হয় না তা-ও। 
মঙ্গলবার ৪৭ দিনে পড়েছে ইনসাফ যাত্রা। যাত্রীরা এখন খড়দহের রাস্তায়। এদিনও শ্রমিকরা বেরিয়ে এসেছেন কথা বলতে, হেঁটেছেন মিছিলে। এসেছেন অর্থনীতিবিদ এবং পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত।

সীমা রায় কর।
 

বালুরঘাটের সীমা রায় কর পদযাত্রায় আছেন গোড়ার দিন থেকে। নিজে বেসরকারি একটি বিমা সংস্থার কর্মী। ছেলে পড়ে ক্লাস সেভেনে।
সীমা বলেছেন, ‘‘জানেন এর মধ্যেই ছেলেটার জন্মদিন গেল, অ্যানুয়াল পরীক্ষাও গেল। থাকতে পারলাম না, হাঁটব বলে।’’
সীমা কেবল নয়, পুরুলিয়ার অভিজিৎ চক্রবর্তী, কল্যাণীর অভিজিৎ বিশ্বাস, বর্ধমানের চন্দন সোম, আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের মৌমিতা দত্ত বা বারাকপুরের অনন্যা নিয়োগী- সবাই বলছেন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এত নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়েছে, কথা হয়েছে- অনেককিছু যোগ হয়েছে জীবনে। 
চন্দন বলেছেন রায়গঞ্জের মতো নানা এলাকায় মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের কথা। তাঁরা এসেছেন ইনসাফ যাত্রায়। চন্দন সোম বলছেন, ‘‘দিনে ১ হাজার বিড় বাঁধলে মজুরি মিলবে ২৭৫ টাকা। সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলবে বিড়ি বাঁধার কাজ। আঙুল সরু হলে বিড়ি বাঁধার কাজে বেশি দর। আর পরদিন ভোরে বাজারে বেরিয়ে তেল, চাল, আটা কিনতে খরচ হয়ে যায় সবটুকু আয়, বলেছেন মহিলারা।’’ 

মৌমিতা দত্ত


অভিজিৎ বিশ্বাস আগেও পদযাত্রায় হেঁটেছেন। এবার কেমন দেখছেন? বললেন, ‘‘এবার যেন গণ্ডির বাইরে থাকা মানুষের ভিড় বেশি। তাঁরা কেবল আসছেন না, নিজেদের কথা বলছেন। এন্তার চুরি, সুবিধামতো দলবদল, আর ধর্মবিশ্বাসের রাজনীতিতে অশ্রদ্ধা বাড়ছে।’’ 
অভিজিৎ চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকেও বেরচ্ছে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের বিবরণ। বলছেন অভিজিৎ, ‘‘বহু জায়গায় আমরা থেকেছে রাতে কারও বাড়িতে, ভাগ ভাগ হয়ে। কোথাও পাকা ছাদ, আবার কোথাও টিনের চালে শিশিরের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছি। কোথাও থেকেছি গ্রামের স্কুলে, ঠান্ডা হাওয়া ঘুমাতে দেয়নি, গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছি।’’
পরদিন যখন স্কুলের ছোটরাও এগিয়ে এসেছে স্বাগত জানাতে চলে গিয়েছে সব ক্লান্তি। ফের হেঁটেছেন পথ। 
আত্মঘাতী কৃষকের বাড়ি, পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে শহীদের পরিবার, ধরমপুরে শহীদ সালকু সোরেনের মা সীতামণি সোরেনের কথা জেগে রয়েছে ছবির মতো। সীতামণি সোরেন বলেছেন, ‘‘যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তারাই একদিন বুঝবে তার আদর্শ ঠিক ছিল, আমি জানি।’’

অনন্যা নিয়োগী

Comments :0

Login to leave a comment