Jadavpur University Ragging

হঠাৎ হাজির, সাফাই দিতে গিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ালো আলু

কলকাতা

 বেপাত্তা থাকাকালীন তাঁর খোঁজই করেনি পুলিশ। কিন্তু যাদবপুরের হস্টেলে স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর খুনের ১২দিন পরে, মঙ্গলবার সকালে ফেসবুকে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার পর তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ অরিত্র মজুমদার ওরফে আলুকে ডেকে পাঠালো পুলিশ!
এদিন সকালে ১০টা নাগাদ অরিত্রকে ফোন করা হলে তিনি বলেছিলেন,‘‘আমি কাল মাঝরাতে ফিরেছি। কাশ্মীরে যেখানে ছিলাম সেখান থেকে আমার পক্ষে আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দেওয়া সম্ভব ছিল না। আমি যা বলার ফেসবুকে লিখেছি।’’ কিন্তু তিনি যা লিখেছেন, তা ঘিরেই নতুন প্রশ্ন হাজির হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অরিত্রকে ডেকে পাঠিয়েছে। তবে সেটি প্রধানত অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার কারণে। যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ ফোন ধরছেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন যে, ‘‘রেজিস্টার খাতায় অরিত্রর সই নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। এমনিতেই স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্যজনক মৃত্যু, র্যা গিং নিয়ে বিপর্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয়। তার মধ্যে উপস্থিত হয়েছে রেজিস্টার খাতায় অরিত্রর সই।’’
কী তা?
এদিন নিজের ফেসবুকে অরিত্র একটি পোস্ট করেন। সেখানে স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর খুনের সময়ে, দীর্ঘ ১২দিন অনুপস্থিতির সাফাই দেন। সেখানে অরিত্র লিখেছেন যে, তিনি ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। আর সেদিনই হাওড়া থেকে নয়াদিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেসে (১২৩০১) রওনা দেন বিকালে ৪টে ৫০ মিনিটে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলছে, তারপরের দিন, অর্থাৎ ১১আগস্টও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। উপস্থিতির খাতায় সই করেছেন। তিনি যদি ১১আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসই করেন, তাহলে রাজধানী এক্সপ্রেসে কে যাচ্ছিলেন নয়াদিল্লিতে? প্রশ্ন তাই স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে যে, তিনি কি আদৌ উঠেছিলেন ট্রেনে? 
আলু এদিন সন্ধ্যায় যাদবপুর থানায় যান। থানায় ঢোকার আগে সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘‘যাই, কথা বলে আসি।’’ প্রশ্ন হলো, মাত্র একদিন আগেও পুলিশ অরিত্রর খোঁজও করেনি। অরিত্র ফেরার পরই পুলিশ তাকে ডেকে পাঠালো। পুলিশ কি জানত আলু ফিরবে এবং কবে ফিরবে? ফেরার পরই আলুই বা কেন এক দীর্ঘ পোস্টে নিজের সাফাই গাইতে গেলেন? 
নিজের সাফাইয়ে ফেসবুকে অরিত্র নয়াদিল্লি থেকে কাশ্মীরের দুটি টিকিটের ছবি পেশ করেছেন। একটি গো ফার্স্ট বিমান সংস্থার টিকিট। আর একটি অন্য একটি বেসরকারি সংস্থার টিকিট। অরিত্র একটি এসএমএস দেখিয়েছেন যে, গো ফার্স্ট সংস্থা গত ৮আগস্ট দুপুরে জানায় যে, তাঁর কাশ্মীর যাওয়ার উড়ানটি বাতিল হয়েছে। যে টিকিট তিনি কেটেছিলেন গত ২৩এপ্রিল। তাৎপর্যপূর্ণ হলো, নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে গো ফার্স্ট সংস্থা তাদের উড়ান বন্ধ রেখেছে গত ৩মে থেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, ‘অরাজনৈতিক’, ‘স্বাধীন’ ছাত্র সংগঠন ডিএসএফ’র নেতা অরিত্র তা ৮আগস্ট পর্যন্ত জানতেন না? তাই ৯আগস্ট রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে তিনি টিকিট কাটলেন আর একটি বেসরকারি সংস্থার উড়ানের? আর সেদিনই কয়েক ঘণ্টা পরে যাদবপুরের মেইন হস্টেলের নিচে পাওয়া গেল বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র, নাবালক স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর দেহ। অরিত্রর ঘনিষ্ঠদের দাবি,‘‘এতে কী প্রমাণ হলো? আলু তো টিকিট কেটেছে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পরে।’’ ঠিকই তো। কিন্তু অরিত্রর ফেসবুক পোস্টের তলায় অনেকেই লিখেছেন যে, তাহলে তো শুধু পরের টিকিটটি দিলেই হতো। গো ফার্স্টের টিকিট, যা বাতিল হয়েছিল, তার এসএমএস দেওয়ার দরকার পড়ল কেন?’’ 
অরিত্র প্রমাণ করতে চাইছেন যে, অনেক আগে থেকেই তাঁর ট্রেকিংয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল!
এদিন কিন্তু ফেসবুকে নিজের পক্ষে দীর্ঘ একটি লেখা দিলেও, তাঁর ট্রেকিং করার কোনও প্রমাণ তিনি দাখিল করেননি। প্রমাণ দাখিলের প্রশ্ন আসছে। কারণ, তিনি নিজেই সোমবার ফেসবুকে নিজের সাফাই পেশ করেছেন। কেউ তাঁর কাছে সাফাই চায়নি। অন্তত যাদবপুর মেইন হস্টেলে ছাত্রর খুনের ঘটনার পরে পুলিশ অরিত্রকে খোঁজেনি। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন অরিত্রর ‘পালিয়ে যাওয়া’ নিয়ে। আর সেই প্রশ্নগুলিকে সোমবার ফেসবুকে লিখে আরও জোরালো করে তুলেছেন আলু।
মঙ্গলবার আলু যা লিখেছেন, সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ৯ আগস্ট, ঘটনার দিন তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে যাননি। তিনি লিখেছেন, স্বপ্নদীপ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও তিনি যাননি। অথচ যে হস্টেলে তাঁর, ধৃত সৌরভ চৌধুরির এবং তাঁদের সংগঠনের প্রবল দাপট, সেই হস্টেলের এক নাবালক আবাসিকের তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো খবর শুনেও তিনি যাননি। এই ঘটনাটি ছাত্র আন্দোলনের নেতা, কর্মীদের প্রবণতার পুরোপুরি বিরোধী। তিনি খুব দূরেও থাকেন না। টালিগঞ্জ লাগোয়া বাঁশদ্রোণিতে থাকেন। তবু তিনি যাননি। 
এদিন পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র চ্যাটার্জিকেও থানায় ডেকে পাঠায়। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে রাত দশটার পরে তিনি থানা থেকে বেরিয়ে যান। প্রসঙ্গত, এই ছাত্রকে ‘অভিযুক্ত’ সাজানোর জন্য স্বপ্নদীপের ডায়েরিতে তাঁর মৃত্যুর পরে চিঠি লিখেছিল সৌরভ চৌধুরি সহ ধৃতদের কয়েকজন। সেই চিঠিতে রুদ্র সম্পর্কে স্বপ্নদীপ খুব ক্ষুব্ধ ছিল, তা বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু চিঠিতে তারিখ ছিল ১০আগস্ট। তার আগের দিনই স্বপ্নদীপ মারা যায়।
 

Comments :0

Login to leave a comment