মণ্ডা মিঠাই
লালন ফকির
সাঁকো মুখোপাধ্যায়
লালন ফকিরের জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তিনি কখনো তা প্রকাশ করেননি। কেউ বলেন তার জন্মস্থান ঝিনাইদহ আবার কেউ বলেন যশোরের বড়রা গ্রাম। কেউ বলেন তিনি ভৌমিক বা কর পদবীস্ত ছিলেন, কেউ বলেন হিন্দু কায়স্থ পরিবারে তারবাবার নাম মাধব এবং মায়ের নাম পদ্মাবতী। মুসলিম সম্প্রদায় লোকেরা বলেন লালন সাঁই মুসলিম বংশধ্ভূত ছিলেন তার বাবার নাম ছিল দবিরুল্লা,মায়ের নাম আমিনা। তিনি কার্যত সমস্ত ধর্মকেই অস্বীকার করেছেন। "আমি কারে কি বা বলি ওরে দিশে না মিলে লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতির ছেলে।"
লালন ফকির ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি যিনি লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে খ্যাত। তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। লালন সাঁইকে বাউল গানের প্রধান একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার গান উনি শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লালন সাঁই ছিলেন একজন সাধক যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ জাতি ভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন। লালন ফকির তার গানে জাতি, ধর্ম, সামাজিক কুসংস্কার কে বিসর্জন দিয়ে মানবতা কেই মুখ্য করেছেন।
আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তিনি প্রায় দুই হাজার গান রচনা করেছিলেন লালনের বেশ কিছু গান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি ধর্ম, গোত্র, বর্ণ সম্প্রদায় সম্পর্কে অতীব সংবেদনশীল ছিলেন। তিনি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বিশ্বাস করতেন না। লালন ফকিরের প্রত্যেকটা গানই এক একটি তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে যেমন দেহতত্ত্ব, আত্মতত্ত্ব, নবীতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব রসতত্ত্ব ইত্যাদি। মূলত সবকিছু তত্ত্বকে মিলিয়ে একটাই তত্ত্ব মানতত্ত্ব। লালন সাঁইয়ের বিখ্যাত কিছু গান হল; "সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে," "আমি অপার হয়ে বসে আছি," "বাড়ির কাছে আরশিনগর "প্রভৃতি। লালনের জীবদ্দশায় তার একটিমাত্র চিত্র তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যোতিদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
লালন সাঁইয়ের গানের ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্ব বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালন সাঁইয়ের মৃত্যুর দুই বছর পর তার আখড়া বাড়িতে যান এবং লালনের প্রভাবিত হয়ে ১৫০ টি গান রচনা করেন। মার্কিন কবি মার্কিন কবি এলেন গ্রিন্সবার্গ লালনের দর্শনের প্রভাবিত হয়ে 'আফটার লালন 'নামে একটি কবিতা রচনা করেন। বসন্তকুমার পাল রচিত লালন সাঁইজির প্রথম জীবনীকার নাম মহাত্মা লালন ফকির। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের আবুল আহসান চৌধুরী, সুধীর চক্রবর্তী লালন সাঁইকে নিয়ে গবেষণা করেছেন। লালন সাঁই লেখাপড়া না জানলেও হিতিকরি পত্রিকায় লেখা হয় "শোনা যায় উনি প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণ করিবার কান্নায় অথচ প্রবল পন্ডিত বলিয়া বোধ হইত "। লালন সাঁই যখন মনে করতেন তিনি গান লিখবেন তখন বলতেন আমার পোনা মাছের ঝাঁক এসছে। ওনার সেই প্রত্যেকটি গান তার শিষ্য মানিক লিখে রাখতেন। তার প্রিয় চারজন শিষ্য ছিলেন মানিক, ভোলাই শীতল, মনির উদ্দিন । লালন সাঁইয়ের গানের খাতার নাম ছিল গীত-অঞ্জলি।
লালন ফকিরের গানের আজকেও আছে; আজকের অনেক গীতিকার সুরকার তাদের গানে মানবতাবাদের প্রতিফলন দেখা যায়, যা লালন ফকিরের দর্শন ছাড়া হয়তো সম্ভব হতো না।
সাঁকো মুখোপাধ্যায়,
দ্বাদশ শ্রেণী / কল্যাননগর বিদ্যাপীঠ / খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা, কল্যাণ নগর খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
৭৪৩৯২৮৮৪৫৪
Comments :0