মণ্ডা মিঠাই
নতুন বন্ধু
নতুনপাতা
রাতের ট্রেন জার্নি
অপূর্ব ঘোষ
রাতের ট্রেনে চেপে, বার্থে শুয়ে জার্নি করার কোনও অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। কিন্তু গত বছর জেঠু পুরুলিয়ার গজাবুরু-তে রক-ক্লাইম্বিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ায় নাইট-ট্রেন-জার্নির এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হল।
এই ক্যাম্পে আসা-যাওয়ার ট্রেন ভাড়া, চারদিন থাকা-খাওয়া ইত্যাদির জন্য প্রতি অংশগ্রহণকারী থেকে ২২৫০ টাকা ফি নেওয়া হয়।
২২৫০ টাকা অনেক বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু গিয়ে আশ্চর্য হলাম এই অল্প টাকায় কিভাবে সামাল দিচ্ছে! যা হোক, জেঠু অনেক আগে থেকে আমাদের বলেছিল হাত-খরচের টাকা বাঁচিয়ে-জমিয়ে রাখতে যাতে আমাদের অভিভাবকদের উপর হটাৎ করে আর্থিক চাপ না আসে। আমরা সবাই টাকা জমাতে শুরু করলাম। আমাদের মধ্যে সাগ্নিক, শুভম, আমার হাজার টাকারও বেশি জমানো হয়ে গিয়েছিল। আবার ছোট্ট তীর্থঙ্কর, তারও অনেক টাকা জামানো হয়ে গিয়েছিল। একদিন আমাদের স্যাক গুছানো, স্লিপিং ব্যাগ গোটানোর ট্রেনিং হল। কি কি নিতে হবে জেঠু একটা তালিকা করে দিল।
জেঠু, তপু কাকু ও আমরা ছয় জন, সব মিলিয়ে মোট আট জন। বড় বড় স্যাক পিঠে, তিনটি ডাফল ব্যাগ নিয়ে অটো করে লিলুয়া স্টেশন।
ট্রেনে এত ভিড়, সবাই এক কমারায় উঠতে পারলাম না। যা হোক শেষ পর্যন্ত রাত ১১টায় গন্তব্যের ট্রেনে চেপে বসলাম। জেঠু আগেই বলে দিয়েছিল পুরুলিয়ায় ভীষণ ঠান্ডা পড়ে তাই ফুল স্লিভ সোয়েটার, গ্লাভস, প্যান্ট, মাঙ্কি টুপি, মাফলার, সাধারণ টুপি, মোজা সব নিয়ে যেতে হবে। বেশি শীত লাগলে প্যান্টের উপর পাজামা পড়ে নিলে নাকি শীত কম লাগে, এটাই বিজ্ঞান, সেটা পুরুলিয়ায় প্রমাণ পেলাম। এছাড়াও রাতে সবসময় হাতের কাছে রাখার জন্য টর্চ, ঠান্ডায় চামড়া ফেটে যাওয়া আটকাতে ভেসলিন ক্রিম নিতে বলেছে।
রাত সাড়ে ১১টায় ট্রেন ছাড়লে রাতের খাবার খেয়ে যে যার বার্থে শুয়ে পড়লাম। টেন যত এগোচ্ছে তত কন কনে ঠান্ডা বাড়ছে। নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার উত্তেজনা, না ঠান্ডা – কেন জানিনা ঘুম এল না। তার মধ্যে মাঝে মাঝেই ট্রেনটা দুলে দুলে ওঠে, ঘট-ঘট-ঘটা-ঘট আওয়াজ। সবচেয়ে উপরের দুই বার্থে আমি ও শুভঙ্কর, মধ্যের দুই বার্থে শুভম ও অয়নদীপ, নীচের দুই বার্থে তপুকাকু ও তীর্থঙ্কর। আমাদের উল্টো দিকে প্যাসেজের দু’টি বার্থের উপরে সাগ্নিক, নীচে জেঠু। জেঠু স্লিপিং ব্যাগের ভীতর ঘুমিয়ে পড়েছে। অয়নদীপের গভীর ঘুম, একবারও ওঠে নি। সাগ্নিক বার্থে শুয়ে শুয়ে গেম
খেলে খেলে এ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের সব চার্জ রাতের মধ্যেই শেষ করে দিল। ট্রেনে যখনই ঘুম ভেঙ্গেছে তখনই দেখি সাগ্নিক গেম খেলে চলেছে।
মাঝ রাতে সাগ্নিকের খিদে পেয়ে গেল, ওকে কমলা লেবু খাবার প্রস্তাব দিলে প্রথমে না করে, পরে রাজি হয়ে খেয়ে নেয়। এর মধ্যে শুভম ও শুভঙ্কর উঠে পরেছে, আমরা ঠিক করলাম সমস্ত ট্রেনটা ঘুরে দেখব। তিন-চারটা বগি ঘুরে দেখে বুঝলাম কেবলমাত্র আমরা চার জনই জেগে আছি, সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। কয়েকজন আবার তীব্র স্বরে নাক ডেকে চলেছে। তারপর নিজেদের জায়গায় এসে আবার শুয়ে পড়ি, কখন সকাল হয়ে গেছে, ট্রেন তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। জেঠু সবাইকে ডেকে তোলে, আমরা ডাবল-ডাবল করে প্যান্ট, জামা-র উপর জ্যাকেট, মাঙ্কি ক্যাপ, গ্লাভস চাপিয়ে নিলাম, ট্রেন এসে টামনা স্টেশনে থামল, এখানেই আমাদের নামতে হবে। বাইরে ভীষণ ঠান্ডা, কুয়াশা।
Comments :0