মুক্তধারা
অন্যকথা
বিদ্রোহ না মুক্তি
কৃশান ভট্টাচার্য্য
শাসকের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলা মানে কি বিদ্রোহ? বিদ্রোহ মানে কি স্বেচ্ছায় কোন শাস্তির আহ্বান? শাস্তি মানে কি মৃত্যু? মৃত্যুতেই কি বিদ্রোহের সমাপ্তি নাকি আরো অনেক মানুষের মধ্যে বিদ্রোহকে সঞ্চারিত করা? এসবই যখন মনোজগতে প্রশ্ন তখন বারে বারে অবচেতন মনে আমরা আশ্রয় নিই ইতিহাসে। ইতিহাসে, উপকথায়, লোককথায় কিম্বা আমাদের চারপাশে দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সে সময়ই আমাদের চারপাশে ভিড় করে আসে অসংখ্য মুখ। মুখোশে ঢাকা মানুষের আড়ালে সেই সমস্ত মুখ গুলোই কিন্তু হয়ে ওঠে সময় ও সমাজ বদলের অন্যতম দিশারী।
পৃথিবীর কত শতাংশ মানুষ সময় এবং সমাজ বদলের এই লড়াইতে নিজের বলিষ্ঠ অবস্থান ধরে রাখতে পারেন তা এক বিরাট সমীক্ষার বিষয়। কারণ পরিবেশ ও পরিস্থিতি কিছুটা ম্যাজিকের মতোই বদলে দেয় মানুষকে। বিদ্রোহের পদযাত্রায় হাঁটা মানুষকেও দেখা যায় রাতারাতি ভোলবদল করে শাসকের ভিড়ে মুখ লুকোতে। বদলে ফেলতে নিজের স্বরূপ। ইতিহাস এদেরকে বিশ্বাসঘাতক বলে।
বাস্তব জীবন হয়তো বলে সুযোগ সন্ধানী। নিন্দুকেরা বলে এরা লোভী আর বাস্তববাদীরা বলেন এরাই বুদ্ধিমান- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের রং বদলাতে যে ক্ষিপ্রতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন তাই এদের অনায়াস আয়ত্তে।
তবুও কখনো কখনো বেজে ওঠে গির্জার ঘন্টা। কখনো কখনো বেজে ওঠে বিদ্রোহের দামামা। কখনো কখনো শোনা যায় শঙ্খের আহ্বান। সে ভাষা বোঝে না কেউ , কেউ করে মৃদু তিরস্কার। আসলে এই ঘন্টার শব্দ কিংবা বিদ্রোহের দামামা সভ্যতার হাতে ধরিয়ে দেয় এগিয়ে যাবার ছাড়পত্র। গির্জার ভিতর তখন অনাবিল হাসিতে হেসে ওঠেন তিনি। কারণ রাজার দোহাই দিয়ে যাকে তারা হত্যা করেছিল, কিম্বা তাকে যারা হত্যা করেছিল - দিনের শেষে তারা নয়, তিনিই তো বিজয়ী।
সভ্যতার পদচারণায় বারে বারে তার নাম বদলে যায়। বারে বারে বদলে যায় তার ঠিকানা। বদলে যায় উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ ,পূর্ব থেকে পশ্চিম। বদলে যায় সময়ও। আর সবসময় তিনি সভ্যতার নবজন্মের আলোতে আলোকিত করেন আমাদের চারপাশ। যে নামেই তাকে ডাকি না কেন তিনি কখনো আমাদের সক্রেটিস ,কখনো গ্যালিলিও, কখনো ব্রূনো, কখনো যীশু খ্রীষ্ট, কখনো জোয়ান অফ আর্ক, কখনো স্পার্টাকাস কখনো শ্রীচৈতন্যদেব কিংবা ফাদার স্ট্যান্ স্বামী। জীবন দিয়ে ওরা জ্বালিয়ে রেখেছেন সভ্যতার বাতিঘর। চিন্তা নেই ওদের বিরুদ্ধে চারপাশে সক্রিয় রয়েছে বেশ কিছু গলা উঁচু করে কথা বলা মানুষ । তারা গায়ের জোরকে আইন বলে প্রতিষ্ঠা করে। তাদের কলমের এক আঁচড়ে বদলে যায় সভ্যতার ভবিষ্যৎ। তবুও সভ্যতার এই চিরন্তন সংঘাত চলতেই থাকে। তার থেকেও উত্তরণ পায় মানুষ। সেটা কোন শুক্রবার হতে পারে, শনিবার কিংবা রবিবার।
Comments :0