মুক্তধারা | গল্প
গল্পের নাম কবিতা
মৃদুল পাল
অভাব অভাব লেগে থাকা জীবনের অবসাদ কাটানোর জন্য হিমান মাঝে সময়ে গল্প লেখেন।নিয়মিত লেখা তার ধাতে পোশায় না।চিন্তার গুদামে ষ্টকো অপ্রতুল।গল্পটা শেষ করেই সে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।গল্পের নাম কবিতা।
হিমানের গল্পটি রাজীব ভট্টের চোখে পড়ে, ফেসবুকে র পাতায়।বিশেষতঃ গল্পের নামের জন্য।অনুরূপ গল্প সেও লিখেছেন।তিন দিন আগেই সে গল্পটা একজন প্রযোজককে শুনিয়েছেন।প্রযোজক টাকা-লগ্নির জন্য মান্তি হয়েছেন।এখন যদি হিমান দাবি করে এই গল্প তার(হিমান) লেখা,তাহলে রাজীব বিপদেও পড়বেন এবং মান-সন্মানেরো একটা ব্যাপার আছে।হিমানের প্রফাইলটি ঘাটাঘাটি করেও সে হিমানকে চিনতে পারলো না।মিউচুয়াল ফ্রেন্ডো নেই।কখন যে বেড়া ভেংগে ছাগল ঢোকার মতন হুট করে সে রাজীবের বন্ধু তালিকায় ঢুকে পড়েছে সেটাও সে মনে করতে পারছেন না।কিভাবে তার গল্পের সাথে হিমানের গল্প হুবহু মিলে যাচ্ছে?শুধুমাত্র পটভূমি ছাড়া।রাজীবের 'কবিতা' শহরের এবং হিমানের 'কবিতা' গ্রামের।বস্ এতটুকুই ফারাক।আর অবশ্যেই পাত্র পাত্রীর নাম।যেটা চৌর্য বৃত্তি অবলম্বনে তৈরি সব গল্পতেই হয়ে থাকে।কিভাবে তার সৃষ্টির সম্ভারে চোর ঢুকে পড়লো,এর গোমর ফাঁস করানোর জন্য সে একজন ডিটেকটিভ হায়ার করলেন।
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি,যেখানে ক্রিয়েটিভ কাজ উপভোগ করার জন্য আমরা পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে অনাগ্রহী।গান শুনবো ফ্রিতে,পেইন্টিং দেখবো ফ্রিতে,সিনেমা দেখবো ফ্রিতে, বই পড়বো ফ্রিতে।তাই রাজীব একজন ডিটেকটিভ হায়ার করলেন,ফ্রিতে।হিমাংশু শেখর ভৌমিক,বয়স চল্লিশ,প্রাথমিক ইস্কুলের শিক্ষক।ডিটেকটিভ কাজ তার শখ,পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চেষ্টা করছে।রাজীব এবং হিমাংশু দুজনের মধ্যে কলেজের আমল থেকেই সখ্যতা ছিলো।রাজীবের দু-একটা সিনেমায় সে অভিনয়ো করেছেন।হিমাংশু সাধারণত তার বাড়িতে থাকা টিউসন সেন্টারে বসেই আগন্তকদের ঘটনার বিবরণ শুনেন।মাঝে সময়ে ব্লেক বোর্ডে নোট করেও রাখেন,আগন্তকদের দৃষ্টিতে নিজের ওজন বাড়ানোর জন্য।কিন্ত রাজীবকে সে নিয়ে গেল তার শোবার ঘরে।সেখানেই বিছানার উপর বসে হিমাংশু রাজীবের মুখ থেকে ঘটনার আগা-গোড়া শুনলেন।ফেসবুকে হিমানের দ্বারা পোষ্টকৃত গল্পটিও সে হিমাংশুকে দেখালো।এবং তার সাথে সে লেখা গল্পটিও একটি ফাইল থেকে বের করে দেখায়।কিছুক্ষণ নীচের দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে হিমাংশু বললো,
-আরে এটাতো তুই আমাকে ফোনেও বলতে পারতিস।এরজন্য আবার ডিটেকটিভ লাগে বুঝি?এটাতো স্কুলের বাচ্চার টিফিন কে চুরি করেছে,তার থেকেও সহজ একটি কেস।
রাজীব বিছানায় হেলান দিয়ে হিমাংশুর কথা শুনছে।
-তুই গল্পটি কোনো থার্ড পারসন সিংগুলার অথবা পুরেল নাম্বারকে বলেছিস।তাদের মুখ থেকে ঐ ছোকড়াটা শুনেছে।সেখান থেকে শুনে সে ঝেঁপে দিয়েছে। তোকে চিনেও না জানেও না।তাই তোর গল্পটা চুরি করতে তার কোনো অসুবিধাও হয়নি,আবার মনে কোনো ডর-ভয়ো জাগেনি।
চোর ধরা হয়ে গেছে।চুরি কার্যটা কিভাবে হয়েছে সেটাও মোটামুটি আন্দাজ করা যায়।কিন্ত হিমান কার মুখ থেকে গল্পটা শুনলো,এটা জানা যায়নি,যেমন জানা যায়নি,আসামে ত্রিশ লাখ(অথবা ততোধিক) 'নাগরিক' কবে আধার কার্ড পাবেন?
Comments :0