MUKTADHARA | STORY — SOURISH MISHRA — 3 MARCH 2024

নতুনপাতা | গল্প — তূর্যর প্রথম ট্রাম চড়া | সৌরীশ মিশ্র — ৩ মার্চ ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

MUKTADHARA  STORY  SOURISH MISHRA  3 MARCH 2024

নতুনপাতা | গল্প

তূর্যর প্রথম ট্রাম চড়া

সৌরীশ মিশ্র


"দিদি, আমাকে একদিন ট্রামে চড়াবি?"
"হঠাৎ?"
এই কথোপকথন চলছে দশ বছরের তূর্য আর ওর চেয়ে পাঁচ বছরের বড় দিদি ঐশীর মধ্যে ওদের পড়ার ঘরে। দু'জনই পড়াশুনা করছিল নিজের নিজের পড়ার টেবিলে। হঠাৎই তূর্য ঐশীকে বলে কথাটা। 
"কি রে হঠাৎ ট্রামে চড়তে চাইছিস? ব্যাপারটা কি, বল্।" আবার ভাইকে জিজ্ঞাসা করে ঐশী।
এইবার বলতে শুরু করে তূর্য। "আজ ক্লাসে চন্দ্রাণী মিস্ বলছিলেন, এই কলকাতায় ট্রাম নাকি চলছে ওয়ান হানড্রেড অ্যান্ড ফিফটি ওয়ান ইয়ারস ধরে। কলকাতার প্রাইড এই ট্রাম। তোমাদের সবার উচিত ট্রাম রাইড এক্সপেরিয়েন্স করা।"
এইবার ব্যাপারটা পুরো পরিস্কার হয় ঐশীর কাছে। সে বলে, "ঠিক আছে। চড়াবো তোকে।"
"কবে রে?"
"আজই।"
"আজই! আজ চড়াবি কখন? একটু বাদেই তো আমরা টিউশন যাব।"
"তোর তো সে চিন্তা করতে হবে না। চড়াবো যখন বলেছি, চড়াবোই।"
"থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ দিদি", বলতে বলতেই চেয়ার থেকে উঠে প'ড়ে দিদিকে জড়িয়ে ধরে তূর্য।

তূর্য আর ঐশী একই টিচারের কাছে সায়েন্স পড়ে। ওদের সায়েন্স টিচার রক্তিমা ম্যামের বাড়ি থেকে ওরা যখন বেরোলো আজ তখন বিকেল হয় হয়। তূর্য আর ঐশীর বাবা-মা দু'জনই চাকরি করেন। তাই, দুই ভাই-বোন টিউশনে যায়-আসে নিজেরাই।
রক্তিমা ম্যামের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাঁদিকে একটু এগোলেই অটো-স্ট্যান্ড। ঐ অটো-স্ট্যান্ড থেকেই বাড়ি ফেরার অটো ধরে ওরা। কিন্তু, আজ ঐশী ভাই-এর হাত ধরে ডান দিকে চলল।
"কোথায় যাচ্ছিল দিদি? অটো-স্ট্যান্ডটা তো ওদিকে।"
"চুপচাপ থাক্। আমার সঙ্গে চল্।"
একটু এগোতে বড় রাস্তাটায় পড়ল ওরা। তখুনি তূর্য দেখতে পেল টং টং শব্দ করে দূর থেকে একটা ট্রাম এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।
"ট্রাম চড়াবি, দিদি?"
"হ্যাঁ।"
দিদির উত্তরটা শুনেই ঐশীর হাত ধরে আনন্দে একটু নেচেই নিল তূর্য।

ট্রামটা এসে দাঁড়াল ওদের সামনে। তূর্য বুঝতে পারল, এটা একটা স্টপেজ।
ট্রামটা প্রায় ফাঁকাই। তাই, উঠেই ড্রাইভারের কেবিনের ঠিক পিছনের জানলার ধারের একটা সিটে বসল তূর্য। তার পাশে ঐশী। তূর্য তো ভীষণ খুশি। একবার জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে, আবার পর মুহূর্তেই ট্রাম-ড্রাইভার আংকেল কি ভাবে ট্রামটা চালাচ্ছেন তাই দেখছে। ভাইকে এতো খুশি দেখে ঐশীরও মনটা আনন্দে ভরে গেল।
মিনিট দশেকের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেল ওদের বাড়ির কাছের স্টপেজে।
ট্রাম থেকে নামল ওরা। ফুটপাথে উঠে পড়ল দু'জনে। ট্রামটা ফের ছাড়ল। এগিয়ে চলল ধীরে ধীরে সামনের দিকে। ঐশী লক্ষ্য করল, ওর ভাই এখনও এক দৃষ্টিতে দেখছে ট্রামটার চলে যাওয়া। ও বুঝতে পারে, ট্রাম চড়ার মুগ্ধতা এখনো কাটেনি তার ভাই-এর।
ট্রামটা একটু দূরে, মোড় ঘুরে এবার অদৃশ্য হল। ঠিক তখুনি, তূর্য বলল ওর দিদির হাতটা ঝাঁকিয়ে, "একটা রিকোয়েস্ট আমার রাখবি রে দিদি?"
"কি রিকোয়েস্ট?"
"আমরা যে দু'দিন সপ্তাহে রক্তিমা ম্যামের কাছে পড়তে যাই, আমাকে ট্রামে করেই তুই নিয়ে যাবি, নিয়ে আসবি রে?"
"ঠিক আছে, তাই হবে। কি খুশি তো?" হাসি-হাসি মুখে বলে ঐশী।
"খুশি, খুশি, ভীষণ খুশি।" বলতে বলতেই দিদিকে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় তূর্য।


 

Comments :0

Login to leave a comment