নতুনপাতা
মণ্ডা মিঠাই
এক উজ্জ্বল শনিবারের গল্প
সৌরভ দত্ত
গল্পটা একটা মিথ, গ্রন্থাগারিক বিশ্বনাথবাবু কোন কালে বলে ফেলেছিলেন– গুড ফ্রাইডে কেন প্রতিবার শুক্রবারই পড়ে মশাই! "এই নিয়ে পাঠাগার কক্ষে তুমুল হাস্যরোল উঠেছিল। এখনো গুড ফ্রাইডে এলে সেই কথাগুলো পাড়ার
পাঠাগারের খড়খড়ির ভিতর দিয়ে উঁকি মারে। গুড ফ্রাইডে আসে, গুড ফ্রাইডে চলে যায়। সমাধিস্থল থেকে উঠে আসেন না প্রতিবাদী পৃথিবীর প্রতিটি ক্রুশবিদ্ধ যিশু। দেশে দেশে কালে কালে যখনই ন্যায়নিষ্ঠরা সত্যবাদিতায় মুখর
হয়েছেন; প্রশ্ন রেখেছেন শাসকের বা রাষ্ট্রের সামনে। সেইসব সমাজ সংস্কারকদের অবদমিত করতে নেমে এসেছে রাষ্ট্রের কালাকানুন । মার্টিন লুথার কিং, জরাথুষ্ট, গালিলিও, সক্রেটিস থেকে শুরু করে বাংলার চৈতন্যদেব। শাসকের
বিরুদ্ধে কথা বললেই বা মানবতার পূজারী হলেও তুমি দেশের শত্রু এই তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছে। কাউকে পুড়িয়ে মারা,কাউকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো, কাউকে অযথা বিষপানে বাধ্য করা পৃথিবীর বুকে এ অনাচার কালে কালে চলেছে।
২৯শে মার্চ ছিল গুড ফ্রাইডে। কেউ বলে থাকেন মহান শুক্রবার, আবার কারো মতে কালো শুক্রবার। আজ যদিও ইস্টার স্যাটারডে । গুড ফ্রাইডে'কে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে হাড়হিম করা সব অজানা ঘটনা। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার
বছর আগে যখন পৃথিবীর পাপের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যায়-অত্যাচারে জর্জরিত মানুষ। সে সময়ে মানবতার প্রতীক রূপে অবতীর্ণ হলেন যিশু। সাধারণ নিপীড়ন,দারিদ্র্য মানুষজনদের মধ্যে তিনি পৌঁছে দিতে লাগলেন মানবতার কথা।
জিঘাংসা নয় ; মানব প্রেমই সত্য। কিন্তু ইহুদী ধর্মধ্বজীরা তাঁর কথার অপব্যাখ্যা করতে লাগলেন। গোঁড়া ধার্মিকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন যিশু। রোমান রাজ্যপালকে বলা হল ছলে বলে কৌশলে যিশুকে সাজাদানের জন্য। তাঁরই শিষ্য
জুডাসকে দিয়ে ফাঁসানো হল যিশুকে। চালানো হল নির্মম মানসিক ও শরীরিক নির্যাতন। অত্যাচারের চরম মুহূর্তে অপরাধীদের উদ্দেশ্যে যিশু বলে উঠেছিলেন – "হে ঈশ্বর ক্ষমা করুণ,কারণ ওরা জানে না যে ওরা কি করছে ।"সাজা
ঘোষণার সময় পিলাইত যখন বলেন – "যিশুকে নিয়ে কি করা উচিত"। তখন শাসকের স্তাবকবৃন্দরা সকলে সমস্বরে বলে ওঠেন – "ওকে ক্রুশবিদ্ধ করুন।" ক্রুশবিদ্ধ রক্তাক্ত,যন্ত্রণায় দীর্ণ যিশুর যখন অন্তিম শ্বাস বেরিয়ে আসে।
উপাসনাগৃহের চারিদিকে এক তুমুল অস্থিরতা দেখা। যিশুর হত্যাকারী সেঞ্চুরিয়ান ভয়ে বলে ওঠেন – "ইনি সত্যিই ঈশ্বরের বরপুত্র ছিলেন। " আইজ্যাক নিউটন বাইবেলীয় ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বিচার করে বলেছিলেন সাল ৩৪
খ্রিস্টব্দ। সেদিন গেৎশিয়ামনি উদ্যানে মন্দিরের রক্ষীদল নৃশংসভাবে বর্বোরচিত হত্যা করেছিলেন যিশুখ্রিস্টকে। শেষ নৈশভোজের আগে যিশুকে পুরোহিতদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন যিশুর অন্যতম অনুগামী জুডাস।
বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার স্বরূপ জুডাস পেয়েছিলেন ৩০টি রৌপ্যমুদ্রা। বাইজানটেনীয় রীতি অনুযায়ী যিশু মৃত্যুর পরে শনিবার ইস্টার স্যার্টার ডে বা উজ্জ্বল শনিবার নামে খ্যাত। এদিন প্রার্থনা করা হয়–"হে মহান যিশু খ্রিস্ট আমাদের
দেবদূত, দেবদূতের রুটি, অনন্ত জীবনের রুটি, যিনি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন…" –
দৈন্যতাগ্রস্ত,নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের প্রতি মানুষের যেন যিশুর মতো করুণা বর্ষিত হয় প্রতিদিন।
Comments :0