NATUNPATA JANA AJANA / NADANGHATER GALDHA CHINGRI

নতুনপাতা জানা অজানা / নাদনঘাটের গলদা চিংড়ি

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA    JANA AJANA  NADANGHATER GALDHA CHINGRI

জানা অজানা

নাদনঘাটের গলদা চিংড়ি
তপন কুমার বৈরাগ্য

নাদনঘাট পূর্ববর্ধমান জেলায় অবস্থিত।পূর্ববর্ধমান জেলাকে
ধানেরগোলা বলা হয় তার অনেকটা এই নাদনঘাটের কথা
ভেবে। এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান হয়। আগে নাদনঘাট ছিলো
বিধান সভা কেন্দ্র।বর্তমানে নাদনঘাট থানা।
এখানকার একটা বিখ্যাত জিনিস ছিল গলদা চিংড়ি।
এরা সন্ধিপদ শ্রেণির প্রাণী।এদের মাথাটা মোটা।সারা
দেহ খোলসে জড়ানো।এদের সামনের পা দুটোতে কাঁকড়ার
পায়ের ন্যায় থাবা থাকে।সেগুলো বেশ বড় চ্যাপ্টা ও সমতুল্য।
এরা স্বাদুজলে থাকতে ভালোবাসে।নাদনঘাটের পাশ দিয়ে
বয়ে চলেছে খড়ি নদী।মিশরকে যেমন নীলনদের দান বলা
হয় তেমনি খড়ি নদীকেও পূর্ববর্ধমান জেলার দান বলা হয়।
এই নদী দুই পাড়কে শস্য শ্যামলা করে গড়ে তুলেছে।


এই নদীতে ১৯৮৪সাল পর্যন্ত প্রচুর গলদা চিংড়ি পাওয়া যেতো।
তখন বড় বড় বাঁশ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হতো।এই বাঁধগুলো
খুবই মজবুত ছিলো।ঝড়-ঝঞ্ঝা প্রবল নদীস্রোত প্রতিরোধ করার
ক্ষমতা ছিলো। বাঁধের স্রোতের বিপরীত দিকে বিরাট আকারের
জাল দিয়ে গলদা চিংড়ি ধরা হতো। প্রতিদিন বিকালে এবং
ভোরবেলায় এই চিংড়ি মাছ ধরা হতো। এই গলদা চিংড়ে ধরা
দেখতে বহু সংখ্যক মানুষ বাঁধের দু-পাড়ে উপস্থিত থাকতো
গলদা চিংড়ি ধরা দেখতে।প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ছয় টন গলদা
চিংড়ি নদীতে ধরা হতো।এই মাছ ট্রাকে করে পশ্চিমবঙ্গ সহ
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হতো।এক একটা চিংড়ির
ওজন হতো প্রায় চারশো গ্রাম।এদের গাঁয়ের রঙ ঈষৎ নীল।
শত্রুদের কাঁকড়ার মতন দাঁড়া দিয়ে আক্রমণ করে। নাদনঘাটের
এতো গর্বের সন্ধিপদ প্রাণী নাদনঘাটের বুক থেকে ১৯৮৫ সাল
থেকে হারিয়ে গেলো এটা কম দুঃখের বিষয় নয়।

১৯৮৫সালেনাদনঘাটে ভয়ংকর বন্যা হয়।তারপরে নাদনঘাটে খড়ি নদীর
বুকে গড়ে  ওঠে সেতু।তারপর থেকে এই ধরণের চিংড়ি আর
এখানে দেখা যায় না। এই নিয়ে একটা ছড়াও আছে --নাদনঘাটের
গলদা চিংড়ি নদের বেগৃন দিয়ে।এই সময় এই প্রাণীর দৌলতে
বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। এই মাছ এই অঞ্চলের
লোকেদের কাছে ছিলো এক লাভজনক ব্যবসা।
নদের বেগুন এবং নাদনঘাটের গলদা চিংড়ির তরকারী
এখনো যারা নদীয়া বর্ধমানের বয়স্ক ব্যক্তি তাদের যেন
মুখে লেগে আছে।এখান থেকে কোথায় হারিয়ে গেলো
এই প্রাণী ভাবলেই মনটা দুঃখে ভরে যায়।

Comments :0

Login to leave a comment