NaSunday New Story

রবিবারের গল্প

ছোটদের বিভাগ

Sunday New Story

পুটু এবং বাবাই  

সৌরীশ মিশ্র

      এ অ্যাই পুটু, যাস না, যাস না, হুস হুস... চেঁচিয়ে ওঠে বাবাই। তারপর হতাশা মাখানো কন্ঠস্বরে বলতে থাকে সে, চলে গেলি; আজ পুরো দিনটাই তোর জন্য খারাপ যাবে নির্ঘাৎ, জানিস।
     আসলে হয়েছে কি, ক্লাস সেভেনের ছোট্ট বাবাই স্কুল যাবে বলে যেই বেড়িয়েছে বাড়ি থেকে, ওমনি ওদের পাড়ার দত্ত জ্যেঠুদের বাড়ির পোষা মেনি বিড়াল পুটটা ওর সামনে দিয়ে বাবাই-দের বাড়ির লাগোয়া রাস্তাটা ঝটপট ক্রস করে চলে গেল। বাবাই চেষ্টা করেছিল বটে যাস না,  যাস  না” চিৎকার করে উঠে ধবধবে সাদা বলের মতোন পুটুকে বারণ করতে, কিন্তু পুটু কি শোনার বিড়াল।

     মনটাই খারাপ হয়ে গেল বাবাই-এর। হবে না! কতো লোকের কাছেই তো শুনেছে ও, বিড়ালের রাস্তা কাটা অত্যন্ত খারাপ। অমঙ্গল হবেই হবে। 
     তবে বাবাই-এর বাবা মা, শ্যামলবাবু  তৃপ্তিদেবী এসব কথা মানেন না মোটেই। বলেন, এসব আর কিছুনা, কুসংস্কার মাত্র। ছেলেকে ওনারা বোঝান খুব। 
     তবু, বাবাই এই বিড়ালের রাস্তা কাটার ফলে অমঙ্গল ব্যাপারটা মানে খুব। তাই এই মুহূর্তে মনটা বড় ভার হয়ে আছে তার। বাবাই-এর মন যেন তাকে। প্রতিক্ষনে বলতে থাকে- বিড়ালটা রাস্তা কেটেছে তোর, দেখিস কেমন খারাপ যায় তোর আজকের দিনটা। ভারী মনেই তাই স্কুলের দিকে পা বাড়ায় বাবাই।
     কিন্তু অবাক কান্ড! বাবাই ভেবেছিল মা, হোলো ঠিক তার উল্টো। 
     বাবাই-এর স্কুলে সারাটা দিনই গেল খুব ভালোই। 

    প্রথম পিরিওড বাংলার হাফ ইয়ারলির খাতা দেখালেন মৃণাল স্যার। বাবাই যদিও ক্লাসের ফার্স্ট বয় তবুও বুকটা ভসে ঢিপ-ঢিপ করছিল খুবই তার। কিন্তু মৃনাল স্যার যখন বাবাই-কে কাছে ডেকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ক্লাস শুদ্ধ সবার সামনে আর বললেন, এবারো হায়েস্ট মার্কস পেয়েছো তুমি সুমন। মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছিল বাবাই-এর।
    সেকেন্ড পিরিওড ছিল ইংরেজির ক্লাস। থার্ড পিরিওড অংকের। দুটো ক্লাসই মন দিয়ে পড়াশুনা করল বাবাই। অংকের ক্লাসে অয়ন স্যারের দেওয়া দশটা অংক ঝট পট এবং একদম ঠিকঠাক খাতায় করে সবার আগে দেখিয়ে বাহবাও পেল সে। ফোর্থ পিরিওড ছিল ইতিহাসের। ইতিহাস  ততটা পছন্দের বিষয় নয় বাবাই-এর। তবে আজ ভারতের ইতিহাস নিয়ে যখন পড়া ছিলেন শান্তনু স্যার বেশ ভালোই লাগল বাবাই-এর। পড়াটা পুরো যেন গেঁথে গেল তার মনে।
     টিফিনের পরের দুটো ক্লাস টিচার না আসায় বন্ধুদের সাথে ক্লাসে দুষ্টুমি করে দারুণ মজা করল বাবাই।

     তারপরের ক্লাস ছিল, ভূগোলের। নরেন স্যার দুইহাতে একগাদা বই দড়ি দিয়ে বেঁধে, ঝুলিয়ে ক্লাসে ঢুকলেন। বাবাই তো দেখেই বুঝেছে এগুলো ওঁদের স্কুলের অ্যানুয়াল ম্যাগাজিন। সবাইকে একে একে নরেন স্যার ডেকে একটি একটি করে বই হাতে তুলে দিলেন।
    বাবাই-ও স্যারের কাছ থেকে বইটা নিয়ে বেঞ্চে এসে বসে পাতা ওল্টাতেই তো অবাক। অবাক হবারই তো কথা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে যে ছড়াটা লিখে চার মাস আগে এই ম্যাগাজিনের জন্য জমা দিয়েছিল বাবাই, সেটা যে ছাপা হয়েছে বইটায়। ছাপার অক্ষরে তার লেখা ছড়াটা দেখে আনন্দে মনটা নেচে উঠল বাবাই-এর।

বাবাই ম্যাগাজিনটা যত্ন করে ওর স্কুলব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে নিজেকেই নিজে মনে মনে বলল, সত্যিই, বাবা, মা এক্কেবারে ঠিক বলে; বিড়াল রাস্তা কাটলে অমঙ্গল হয়, এ কথাটা শুধুই কুসংস্কার। স্কুলে আসার সময় পুটু তো ওর রাস্তা কেটে ছিল। তাতে ওর খারাপ তো হয়ই নি কোনোই বরং সবই ভালো হয়েছে। দারুন কেটেছে ওর সারাটা দিন স্কুলে। 
বাবাই মনে মনেই প্রতিজ্ঞা করল, সে মানবে না তো এই কুসংস্কারটা আর কোনোদিনই; আর কাউকে যদি দেখে মানছে, তাকেও বুঝিয়ে বলবেই বলবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment