উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি ব্লকের জলঢাকা নদী সংলগ্ন গধেয়ারকুঠি এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ে লাগাতার প্রবল বর্ষণের জেরে জলঢাকা নদীতে হঠাৎ জলস্ফীতি দেখা দিলে মুহূর্তের মধ্যেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। প্রবল জলের তোড়ে ভেসে গেছে বহু ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়েছে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে কিংবা নদীর ধারে উঁচু জায়গায়। যদিও এখন জলস্তর কিছুটা নেমেছে, কিন্তু অধিকাংশ দুর্গত পরিবারের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নদীর বাঁধই হয়ে উঠেছে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল। দুর্যোগের পরে এক কঠিন জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি এই অসহায় মানুষজনের পাশে দাঁড়িয়েছে অল বেঙ্গল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এবিপিটিএ)। মানবিকতার বার্তা নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে “জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদ”। সংস্থার পক্ষ থেকে এই এলাকায় দুটি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়।
শনিবার এবিপিটিএ’র সদস্যরা ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি পঞ্চায়েতের হোগলাপাতা এলাকায় প্রায় ১৩০টি এবং ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের চারেরবাড়ি এলাকায় প্রায় ১২০টি দুর্গত পরিবারের হাতে শুকনো খাবার, দুধ, পানীয় জল, কম্বল, মশার ধূপকাঠি সহ একাধিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেন।
এই উদ্যোগে দুর্গত মানুষজন কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। শিক্ষক সমাজের এই মানবিক পদক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ধূপগুড়ির হোগলাপাতা এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝাঁ, জেলা সভাপতি বিপিনচন্দ্র রায়, জোনাল সম্পাদক ভবতোষ সরকার, স্থানীয় শিক্ষক দীনবন্ধু রায়, শিক্ষিকা শম্পা রায়, জেলা নেতৃত্ব যীশু ব্যানার্জি, অমিত ভৌমিক, অভীক সরকার, প্রবীণ শিক্ষক মানিক চক্রবর্তী সহ প্রমুখ। অন্যদিকে ময়নাগুড়ির আমগুড়ি জিপির চারেরবাড়ি এলাকায় জেলা সংগঠনের নেতৃত্বে ও ময়নাগুড়ি জোনাল কমিটির পূর্ণ সহযোগিতায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অংশ নেন জেলা কোষাধ্যক্ষ অসিত রক্ষিত, বিশ্বজিৎ কর, অমল সেন, অমল ঘোষ, রাজু মজুমদার, ময়নাগুড়ি জোনাল সভাপতি জয়ব্রত লাহিড়ী, পাপাই অধিকারী এবং অন্যান্য জেলা ও জোনাল নেতৃত্ববৃন্দ।
জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝাঁ জানান, “এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা আজ থেকে এই উদ্যোগ শুরু করেছি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দুর্গতদের পাশে থাকব।”
বন্যাদুর্গতদের পাশে জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদ।
বন্যায় বিধ্বস্ত ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি অঞ্চলের ধাপ্পারডাঙ্গা ও বগরিবাড়ি গ্রাম, জলঢাকা নদীর পাড় ঘেঁষা এই গ্রামগুলিতে এখনও অনেক পরিবার আশ্রয়হীন, পানীয় জলের তীব্র সংকট ও নানান রোগব্যাধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘‘জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদ’’। সংস্থার পক্ষ থেকে এই এলাকায় দুটি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়। চিকিৎসক ডাঃ পান্থ দাশগুপ্ত, ডাঃ সুব্রত রায়, ডাঃ বিপ্লব গোস্বামী সহ অন্যান্য চিকিৎসকরা সারাদিন ধরে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করেন। পাশাপাশি আক্রান্ত এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবাণুনাশের কাজও করা হয়েছে।
শুধু চিকিৎসা নয়, দুর্গত মানুষের ত্রাণের ব্যবস্থাও করে নাগরিক সংসদ। তারা দুর্গতদের হাতে তুলে দেয় আমূল দুধ, বিস্কুটের প্যাকেট, মোমবাতি, মশার কয়েল, শুকনো খাবার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘‘এই বিপদের দিনে নাগরিক সংসদ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেই কারণে আমরা অনেক সাহস পাচ্ছি।’’ জলঢাকা নদীর ভাঙনে বিধ্বস্ত ধাপারডাঙ্গা ও বগরিবাড়ি এলাকায় এই মানবিক উদ্যোগ দুর্গত মানুষের মুখে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
Comments :0