Jana Ajana

জানা অজানা – তপন কুমার বৈরাগ্যবাদ / ১০ নভেম্বর

ছোটদের বিভাগ

বাঘা যতীন কার দেওয়া নাম!


তপন কুমার বৈরাগ্য

বাঘা যতীন তখন কিশোর।তাঁর মামার বাড়ি
নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ায়। তাঁর মামাতো ভাই
তাঁর চেয়ে ছয় বছরের বড়। তখন এই গ্রামটা
বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল।গ্রামে একটা বাঘ
এসেছে।সে শুরু করেছে নানা উপদ্রব।
কখনো কারো হাঁস,কারো মুরগি, কারো ছাগল,
আবার কারো গরু মেরে তাদের ভক্ষণ করছে।
গ্রামবাসীরা বাঘের ভয়ে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সকলে বাঘা যতীনের মামাতো ভাই ফণির
সাহসীকতার কথা জানতেন।আর একমাত্র
এই ফণিদেরই একটা বন্দুক ছিল।ফণি বন্দুক
চালাতে ওস্তাদ ছিলেন। যতীন্দ্রনাথ জেদ ধরলো
দাদার সঙ্গে যাবে বলে।ফণি অনেক নিষেধ করা
সত্বেও যতীন্দ্রনাথ নাছোড়বান্দা, অগত্যা ফণি
তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে রাজী হলন।
হাতে নিলো একটা ধারালো অস্ত্র। তারা দুভাই
বনের মধ্যে এসে উপস্থিত হলো।কিছুক্ষণ পর
বাঘটা বন থেকে বেড়িয়ে এলো। ফণি গুলি চালালো।
গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। বাঘটা রেগে গিয়ে যতীন্দ্রনাথের
উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।যতীন্দ্রনাথ ছাড়ার পাত্র নয়।
বাঘটা যতো আক্রমণ করে যতীন্দ্রনাথও তাকে অস্ত্রের
আঘাতে ততো ক্ষত বিক্ষত করে তোলে। শেষে বাঘটা
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাঘটা যতীন্দ্রনাথের দেহে
তিনশোটার মতো ক্ষতর সৃষ্টি করে। সেইসময় বাংলার চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে কিংবদন্তী চিকিৎসক ছিলেন
সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী। তার কাছে তাঁকে নিয়ে
আসা হলো। তিনি যতীন্দ্রনাথকে দেখে বললেন--আমি
একে সুস্থ করে তুলবো।সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেললেন।তিনি ছিলেন সেই সময়কার ভগবান।
একে একে অপারেশনের মাধ্যমে তিনি যতীন্দ্রনাথকে
সুস্থ করে তুললেন। যতীন্দ্রনাথ ভালো হয়ে ডাক্তার
বাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন--আপনি আমার
মধ্যে কি এমন দেখলেন যে আপনি আমার মতন
একজন সাধারণ ছেলেকে ভালো করে তুললেন?
ডাক্তার বাবু মৃদু হেসে জবাব দিলেন--তোমার
মাঝে আমি খুঁজি পেয়েছি এক বিপ্লবী সত্ত্বা।
যা আমার পরাধীন ভারতমাতার শৃঙ্খলমোচনে
আগুন হয়ে জ্বলে উঠবে। সেদিন ডাক্তারবাবু
বলেছিলেন আজ থেকে তোমার নাম দিলাম বাঘাযতীন। মহান চিকিৎসক  সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী যতীন্দ্রনাথ
মুখোপাধ্যায়ের নাম দিয়েছিলেন বাঘাযতীন। আর
সেদিন থেকে তিনি সবার চোখে হয়ে উঠলেন বাঘাযতীন।

সাহাজাদপুর
নাদনঘাট
পূর্ববর্ধমান,পূর্ববর্ধমানফোন--৯৭৭৫১৬৭৯৩২

Comments :0

Login to leave a comment