Bangla Bachao Yatra

আরএসএস’র ছকে তৃণমূলকে আগলাতে বিরোধী সাজে বিজেপি: হেমতাবাদে পলাশ

রাজ্য জেলা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

সোমবার হেমতাবাদে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’র সভায় পলাশ দাস। মঞ্চে মীনাক্ষী মুখার্জি সহ নেতৃবৃন্দ।

সুন্দরবনে প্রতি বছর ঝড়ে উড়ে যায় কাঁচা বাড়ি। তাঁদের কাছে নথি চাইলে দিতে পারবে? শহরে যাঁরা থাকেন তাঁদের মধ্যে কিছু জনের নথি আছে। কিন্তু শহরের গরিব মানুষ তাঁদের পক্ষে তিন পুরুষের নথি রাখা সম্ভব? 
সোমবার ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র জনসভায় একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য পলাশ দাস। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে জনসভায় বিশদে বলেছেন এসআইআর’র বিপদ প্রসঙ্গেও।
দাস বলেন, ‘‘২০০২ সালে যাদের নাম নেই, মারা গিয়ে থাকলে বাবা-মায়ের নামও থাকবে না, তাদের কাছে ঠাকুরদা, ঠাকুমার নথি চাইছে। কেবল আপনার নথি দেখালেও হবে না। ১৯৮৭’র আগের নথি চাইছে। তার মানে ২০০২-এ যার জন্ম তাকে নিজের নথি দেখালেই হবে না। বাবা-মায়ের নথি হাজির করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সাত দিন বেড়েছে এসআইআর’র সময় সীমা। ১৬ তারিখ খসড়া বের হবে। যাদের ‘লিঙ্ক’ নেই ২০০২’র সঙ্গে, তা’হলে তাদের ভোটার তালিকায় নাম থাকবে না। প্রথমে ভোটের অধিকার কেড়ে নিল। ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত তালিকা বের হওয়ার পর, এখন যে আধার কার্ড, সেটি ফালতু হয়ে যাবে। ভোটার কার্ড কেবল দেখবে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘ বিজেপি হিন্দুপ্রেমী। ওরা বলছে ২০২৪’র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে, মানে যাদের ভোটার কার্ড নেই, তাদের পুলিশ ধরপাকড় করবে না। তার মানে এরা এদেশে থাকবে কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকবে।’’ 
পলাশ বলেন, ‘‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক কী? এই হেমতাবাদে একদল মানুষের জীবিকার, সরকারি পরিষেবা পাওয়ার অধিকার থাকবে। আরেক অংশের থাকবে না। এই হেমতাবাদে যাঁরা বিজেপি-কে ভোট দিয়ে জিতেছেন তাঁদেরই একটি অংশের ভোটের অধিকার কেড়ে নেবে এসআইআর। নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে আসলে বিজেপি। বিজেপি’র এমএলএ-এমপি বৈধ, আর মানুষগুলো অবৈধ হয়ে যাবেন। কী অদ্ভূত বিচার!’’ 
পলাশ বলেন, ‘‘মমতার সরকার থাকলে মোদীর সরকারও থাকবে। কিন্তু বহু মানুষকে বেনাগরিক করে দেবে। যে শ্রমিকের ভোটার কার্ড নেই, তাকে দশ হাজারের বদলে পাঁচ হাজার টাকা দেবে।’’ 
কৃষ্ণনগরের একটি স্কুল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নথি চাইছে ছেলেমেয়েদের ভর্তির জন্য। পলাশ এই উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি বুঝিয়েছে হিন্দুদের কিছু হবে না, হবে মুসলমানের। এখন দেখা যাচ্ছে মুসলমানের কিছু হবে না। হবে তফসিলি জাতি, গরিব মানুষের। তাঁরা বিপদে পড়ছেন। বিপদে পড়ছে সাতচল্লিশে দেশভাগের সময় এদেশে আসা স্রোতের মতো উদ্বাস্তুদের পরিবার।’’ 
তিনি বলেন, ছিন্নমূল উদ্বাস্তু মানুষ অধিকারের দাবিতে লালঝাণ্ডা নিয়ে লড়াই করেছিলেন। তাঁরা হিন্দু-মুসলিম দেখেননি। বিজেপি আর তৃণমূল মাত্র গত কয়েক বছরে মানুষকে উসকে বিদ্বেষ ছড়িয়ে ভোটের রাজনীতি করেছে। 
তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-তৃণমূল জিতলে স্মার্ট মিটার বসাবে। বহু বাড়ি অন্ধকার হবে। মোদীর প্রজেক্ট নামাচ্ছে তৃণমূল। তেমন এসআইআর মোদীর প্রজেক্ট, কমিশনের কোলে বসে নামাচ্ছে বিজেপি আর তৃণমূল মিলে। 
তিনি বলেন, মতুয়াদের নিয়ে তৃণমূল আর বিজেপি ছিনিমিনি খেলল কেবল তাঁদের ভোটের জন্য। আজকে গোটা মতুয়া সমাজ বিপন্ন। সে কারণেই ধর্ম আর রাজনীতিকে এক করা যায় না। যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে তারা আর যাই হোক ধার্মিক না। তারা ভয় ছড়ায়। অন্যের প্রতি ঘৃণা ছড়ায়। বিচারবোধ নষ্ট করে দেওয়া হয়। ছেলের কাজ, নিজের কৃষি, শিক্ষা, হাসাপাতাল সব পিছনে চলে যায়। মুখ্যমন্ত্রী কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখাল মানুষ বারাসতে মৃতদেহের চোখ তুলে নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-ই তৃণমূলকে রাখতে চায়। তৃণমূলকে আগলানোর জন্য বিরোধী হয়ে থাকতে চায়। চায় চোর-চিটিংবাজরা সরকার চালাক। নাটক করে বামপন্থীদের আটকে রাখার ব্যবস্থা করে। বিজেপি জিততে চাইলে আমাদের ভাষা সংস্কৃতিকে হেনস্তা কেন? পরিযায়ীদের আক্রমণ কেন? একদিকে ওরা করছে আরেকদিকে মমতা বাঙালি অস্মিতা জাগিয়ে ভোট পার করবে। বিজেপি তৃণমূল দুটোকেই চালায় আরএসএস। তারাই জানে বিজেপি নাবালক। তৃণমূলকে রাখতে হবে। তাই তৃণমূলকে হারাতে বিজেপি-কে ভোট দেবেন না। তিনি বলেন যে বামপন্থীরা জনতার জীবনের পক্ষে, জীবিকার পক্ষেই ভূমিকা নিয়ে এসেছে। সেই ভূমিকাই নেবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment