Md Salim on panchayat election

দুই ফুলই শুকিয়ে যাচ্ছে, জল ঢেলে লাভ হবে না

জেলা

মমতা ব্যানার্জিকে বিজেপি’র ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকল’ হিসাবে উল্লেখ করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। পাটনা বৈঠকে দেশে বিজেপি বিরোধী লড়াই নিয়ে আলোচনা হয়েছে, উপায় নেই দেখে মমতা ব্যানার্জিও সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরাজ্যের বাস্তবতা অনুযায়ী তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী সব শক্তিকে এক জায়গায় করার চেষ্টা করছে বামপন্থীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও তাই করা হবে। দু’টো ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে, তাতে জল ঢেলে লাভ হবে না।’ সাধারণত কোনো বিশেষ বাণিজ্যিক কারণে বিনিয়োগের জন্য ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকল’ তৈরি করা হয়। 
এদিন রানিগঞ্জে সিপিআই(এম)’র দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করেন মহম্মদ সেলিম। সঙ্গে ছিলেন পার্টির পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি ও পার্টিনেতা পঙ্কজ রায় সরকার। তৃণমূলকে বিজেপি’র স্পেশাল পারপাস ভেহিকল বলে মন্তব্য করে সেলিম বলেছেন, এখন দেশে বিজেপি বিরোধী সমঝোতা ভাঙার কাজে মমতা ব্যানার্জিকে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। অমিত শাহের সঙ্গে নবান্নের আলোচনা চলছে লোকসভা নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে। পাটনা বৈঠকের আগে বিরোধীদের যে বৈঠক হয়েছে তাতে মমতা ব্যানার্জি অংশ নেননি। আগেই বলে দিয়েছিলেন থাকবেন না। তিনি তৃতীয় ফ্রন্ট করতে ওয়াইএসআর, নবীন এবং অখিলেশের কাছে গিয়েছিলেন। কর্নাটক নির্বাচনের ফলাফলের পরে পাটনায় গিয়েছিলেন উপায় না থাকায়।
পঞ্চায়েতের প্রচারে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলছেন যে ‘রাজ্যে কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম সব তৃণমূলকে হারাতে জোট করেছে।’ অন্যদিকে পাটনা বৈঠকের পরে বিজেপি মরিয়া প্রচারে নেমেছে যে ‘সিপিএম তৃণমূল জোট করেছে।’ দু’টোকেই উড়িয়ে দিয়ে সেলিম মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলি কখনও বিজেপি’র সঙ্গে হাত মেলায়নি, তৃণমূল বাজপেয়ী মন্ত্রীসভাতেও ছিল। সেলিমের মন্তব্য, ‘মমতা ব্যানার্জিকে কেউ বিশ্বাস করে না। তিনিই বলেছিলেন বিজেপি তৃণমূলের স্বাভাবিক মিত্র। আরএসএস তাঁকে বলেছিল দুর্গা।’ 
সেলিম সাংবাদিকদের বলেছেন, মানুষ লুটেরা তাড়িয়ে পঞ্চায়েত ফেরত চায়। দুর্নীতি গ্রাস করেছে রাজ্যের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দুর্নীতিতে মানুষ তৃণমূলের টাকার পাহাড় দেখেছে। এলাকায় এলাকায় তৃণমূল নেতারা মানুষকে লুট করে সম্পদ বানিয়েছে। এবার ভোট লুট চলবে না। মনোনয়নে বাধা দিয়েছে, মনোনয়ন জোর করে প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করেছে, মনোনয়নে গরমিল করিয়েছে। কিন্তু মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে, প্রতিবাদ প্রতিরোধ করছে। লুটতন্ত্রের অবসান করতে মানুষ লালঝান্ডা বেছে নিচ্ছেন। কিছুদিন আগেও যারা বিজেপি তৃণমূলকে সমর্থন করেছিলেন তাঁরাও আসছেন। যারা ধর্মীয় উন্মাদনায় হোক, ভয়ে প্রলোভনে হোক তৃণমূল বিজেপি’র দিকে গিয়েছিলেন তাঁরা অনেকেই আসছেন। 
সেলিম বলেন, এসব দেখে মমতা ব্যানার্জি আতঙ্কিত হয়ে উলটোপালটা বলতে শুরু করেছেন। হঠাৎ বলছেন, ‘চোরদের মনোনয়ন দিইনি’। দশ বছর ধরে চোরদের পঞ্চায়েত চালিয়ে এখন কী বলছেন? তিনি নিজে বলেছিলেন, ৭৫-২৫ ভাগাভাগি। বালি, কয়লা, নকল ডিসিআর, মাফিয়া মস্তান সব কাদের? পঞ্চায়েত চলে গেলে তাঁর আসনও নড়বড়ে সেটা বুঝতে পারছেন। এজন্যই বলছেন ‘টাকা চাইলে আমাকে ছবি তুলে পাঠান’। আরে নারদকাণ্ডের ছবিগুলো নেই? তারপরেও তো টাকা নেওয়া নেতাদেরই মন্ত্রী সাংসদ বিধায়ক করেছেন। প্রত্যেকটা দুর্নীতির মামলা ঠেকাতে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। তিনিই তো দুর্নীতিতন্ত্রের মাথায় বসে আছেন। শিক্ষক নিয়োগের মাথায় কারা? মমতা ব্যানার্জি এখন ডিফেন্সিভ। এরপরে হয়তো আবার বাসন মেজে দেব, ক্ষমা চেয়ে নেব এসব বলবেন। কিন্তু নতুন করে এই নাটকে লোকে আর ভুলবে না। 
তৃণমূল বনাম বিজেপি নয়, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে তৃণমূল-বিজেপি বনাম বাম কংগ্রেস ও সহযোগীদের লড়াই হচ্ছে সেকথা জোরের সঙ্গে উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, চোপড়ায় মনসুর আলম খুন হয়েছেন, প্রতিদিন বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। কালকেও কাটোয়াতে বোমা ফেটেছে। দুর্গাপুরের কাছে পঞ্চায়েতের প্রার্থী তফসিলি জাতির অটোচালককে প্রত্যাহার করাতে বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে, তাঁর অন্ত্বঃসত্ত্বা স্ত্রী আক্রান্ত। সাংবাদিকরাও আক্রান্ত খবর করতে গিয়ে। গ্রেপ্তার হয়েছে কে? একজন তৃণমূল একজন বিজেপি। কে কাকে আটকাবে? আসানসোলে বিজেপি’র সাংসদ। মনোনয়নে বামফ্রন্ট প্রার্থীরাই তৃণমূলের হামলার মোকাবিলা করেছে, বিজেপি কোথায়? চোপড়া তো দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে, সেখানেও বিজেপি’র সাংসদ। সেখানেও লড়াই হলো বাম কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের। বিজেপি কোথায়? আসলে তৃণমূলের পুরনোদের বিজেপি সাজানো হয়েছিল বিধানসভার নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের পরে আবার ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে গেছে। গতবার যারা বিজেপি’র হয়ে পঞ্চায়েতে জিতেছিল তারা কোথায়? তৃণমূলে চলে গেছে। মানুষ তাই তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে রায় দিতে প্রস্তুত হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment