বৃহস্পতিবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের নবম দিন। লোকসভায় আজও নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বুধবার, লোকসভায় এই ইস্যুতে বক্তব্য রাখার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাহুল গান্ধীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কংগ্রেস দলের উপর তীব্র আক্রমণ শুরু করেন। নির্বাচনী সংস্কার, এসআইআর এবং ভোট চুরির মতো বিষয়গুলি আজ উভয় কক্ষেই অব্যাহত থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। রাজ্যসভাও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে। জেপি নাড্ডা 'বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর' শীর্ষক আলোচনার জবাব দেবেন। সামনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন সেই বিষয়কে মাথায় রেখেই সংসদে বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনা রেখেছে সরকার।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় তাঁর বাসভবনে বিজেপি সাংসদদের জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। বলে সূত্রের খবর নৈশভোজে আসন্ন রাজ্য নির্বাচনের কৌশল এবং সংসদে চলমান বিতর্ক নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এদিন কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তেওয়ারি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিই উদ্বিগ্ন হয় তবে তাদের ভাবা উচিত কেন বিরোধীরা কমিশনের উপর আস্থা হারিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কমিশনের এসআইআর পরিচালনা করার কোন আইনি কর্তৃত্ব আছে? এটি একটি সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়া যা গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করে।’’ কংগ্রেস সাংসদ সপ্তগিরি উলাকা বলেন, ‘আমরা যখন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন নির্বাচন কমিশন নিজে কিছু বলে না, কিন্তু বিজেপির মুখপাত্ররা তাদের পক্ষ নিয়েই থাকেন। আমাদের প্রশ্নগুলি স্পষ্ট এবং আমরা কিছু বিষয় উত্থাপন করেছি যার উত্তর প্রয়োজন।’
এদিন রাজ্যসভায় নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে বিতর্কে কংগ্রেসের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন অজয় মাকেন, দিগ্বিজয় সিং এবং রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। বিরোধী সাংসদরা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বন্দে মাতরম'-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজ্যসভায় দেশপ্রেমের এক অনন্য প্রতিধ্বনি শোনা যায় বুধবার। গাজীপুরের সাংসদ ডঃ সঙ্গীতা বলবন্ত তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘বন্দে মাতরম’ এমন একটি শক্তি যা সাধারণ মানুষকেও মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করে। মাতৃভূমির কাছে মাথা নত করে, আমরা প্রতিদিন মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি বলেন যে, ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এই গানটি রচনা করার সময়, বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জী ভারত মা'কে কেবল মাটি হিসেবে দেখেননি।
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় নির্বাচন সংস্কার নিয়ে বিতর্ক শুরু হবে। এর আগে উচ্চকক্ষ বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিতর্কের সূচনা করে অভিযোগ করেন যে, জাতীয় সঙ্গীতকে বিভক্ত করা এবং কংগ্রেসের তোষণমূলক রাজনীতির কারণেই ভারত বিভাজন হয়েছিল।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জোর দিয়ে বলেছেন যে, বন্দে মাতরমের প্রথম দুটি স্তবক ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি কেবল পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর একক সিদ্ধান্ত ছিল না। গতকাল লোকসভায় নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বিহার নির্বাচন এবং ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলমান ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করা হয়।
সংসদে জেপি নাড্ডা বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর নিয়ে আলোচনায় বলেন, বন্দে মাতরম আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আমাদের জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক এবং আমাদের হৃদয়ের কতটা কাছের। তিনি বলেন, এই বিতর্কটি নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়, যারা সেই দিনগুলো নিজের চোখে দেখেনি। তিনি আরও বলেন, এই গানটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এবং এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অনুপ্রেরণা ও শক্তি যুগিয়েছিল। নাড্ডা বলেন, বন্দে মাতরম দ্বারা সৃষ্ট অনুভূতিগুলো ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে আমাদের মধ্যে আবেগ জাগিয়ে তোলে। যখন ব্রিটিশরা আমাদের স্কুলগুলোতে তাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘গড সেভ দ্য কুইন’ চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের বন্দে মাতরম গানটি দিয়েছিলেন, যা বিদ্যুতের মতো প্রভাব ফেলেছিল।
বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনায় বিজেপি নিজেদের দেশ ভক্ত প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি বা আরএসএস কোন সময় বন্দে মাতরম নিয়ে কোন আবেগ দেখায়নি। কিন্তু সামনে যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন, সেই কথাকে মাথায় রেখে বন্দে মারতমের ১৫০ বছরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। বিজেপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মাথায় রেখেই বন্দে মাতরম নিয়ে শুরু করেছে রাজনীতি। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কোনও ভূমিকা নেয়নি বিজেপি আরএসএস। উপরন্তু ব্রিটিশদের তাঁবেদারি করেছে। আরএসএসের এমন একজন শহীদের নামও করতে পারবেন না, যারা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। বহুদিন ধরেই ‘বন্দে মাতরম’ গানটিকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদীরা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। সঙ্ঘ পরিবার এই গানকে ‘জনগণ মন’-র প্রতিযোগী হিসেবে তুলে ধরছে। সম্প্রতি বিজেপি-আরএসএস’র বহু নেতা সরাসরি রবীন্দ্রনাথ এবং ‘জনগণ মন’-র বিরুদ্ধে নানা ধাঁচের আক্রমণ করে চলেছেন।
Comments :0