Editorial on Pam modi

সত্য গোপনের অসততা

সম্পাদকীয় বিভাগ


এটা কি জালিয়াতি না পিঠ বাঁচানোর তাগিদে সত্যের অপলাপ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চমক সৃষ্টিকারী নোট বাতিলের ঘটনা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে হলফনামা পেশ করা হ‍‌য়েছে তাকে ঘিরে এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে। একটি জাতীয় স্তরের সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী নোট বাতিলের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের সভার বক্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের হলফনামায় প্রতিফলিত হয়নি। এমনকি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হলফনামাতেও অনেক সত্য আড়াল করা হয়েছে। আসলে যেসব যুক্তি ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী আচমকা নোট বাতিল ঘোষণা করেছিলেন তাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি মেলেনি। অনেক ক্ষেত্রেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো ছিল ঠিক উলটো। নোট বাতিলের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে পদ্ধতিগত সুপারিশ মোদী সরকার আদায় করেছে ঠিকই কিন্তু নোট বাতিলের পক্ষে সরকার যেসব যুক্তি বা উদ্দেশ্য হাজির করেছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ড সেগুলিকে অস্বীকার করেছে।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন তাতে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছিল নোট বাতিলের ফলে কালো টাকার মজুত ধ্বংস হ‍‌বে, জাল নোট নির্মূল হবে এবং সন্ত্রাসবাদীদের হাতে জাল নোটের মজুত নিঃশেষ হয়ে যাবে। সর্বোচ্চ আদালতে পেশ করা হলফনামায় আরও বলা হয়েছিল মোট জিডিপি’র পরিমাণে শতাংশ হারে বাজারে চালু মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। তেমনি অর্থনীতির আয়তন বৃদ্ধির নিরিখে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এমনটাও বলা হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নাকি ‍নিজেই নতুন সিরিজের নোট ছাড়ার ভাবনা চিন্তা করেছিল। সরকারের সিদ্ধান্তে সুযোগের সদ্ব্যবহার হয়েছে।
আদালতে এমদন সব বলা হলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ড সভায় আলোচনায় তার কোনও সমর্থন মেলেনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করেনি জাল নোট অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। ১৭ লক্ষ কোটি নগদ টাকার মধ্যে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা ছিল জাল নোট। এটা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করে কালো টাকার কারবারিরা ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট জমিয়ে রা‍‌খে না। কালো টাকায় সোনা বা জমি-বাড়ি কিনে রাখা হয়। তেমনি কালো টাকায় সন্ত্রাসবাদীদের পোয়াবারো হয় এমন কথাও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেনি। সরকার কোর্টে আরও জানিয়েছে বাজারে চালু নগদ টাকার পরিমাণের সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক আছে। ভারতে চালু নগদ টাকার পরিমাণ জিডিপি’র ১১.৫ শতাংশ। আমেরিকায় নাকি মাত্র ৭.৭৪ শতাংশ। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো নোট বাতিলের পর ২০২১-২২ সালে সেই হার কমার বদলে বে‍‌ড়ে হয়েছে ১৩.৭ শতাংশ। আরও বলা হয় সামগ্রিক অর্থনীতির আয়তন বৃদ্ধির থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার সংখ্যা বৃদ্ধি অনেক বেশি হয়ে গেছে। বাস্তবে এক্ষেত্রে নোটের অঙ্ক প্রকৃত অর্থে দেখানো হলেও অর্থনীতিকে দেখানো হয়েছে মুদ্রাস্ফীতিকে বাদ দিয়ে। ফলে নোটের পরিমাণ বৃদ্ধি বেশি দেখাচ্ছে।
এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্য ও বাস্তবকে আড়াল করা হয়েছে। বাস্তবে নোট বাতিলের পক্ষে যতগুলি যুক্তি খাড়া করা হয়েছিল একটাও ধোপে টেকেনি। প্রতিটিই ব্যর্থ প্রমাণ হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment