রবীন্দ্রভাবনার ওপরে মৌলবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার রাজ্যের সর্বত্র ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গেয়েই প্রতিবাদ উচ্চারিত হবে। স্কুলে, পাড়ায়, সামাজিক মিলনস্থলগুলিতে সমাজের সব অংশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যেই সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি বিভিন্ন সংগঠন, গণসংগঠন ও বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে। এই সমস্ত কর্মসূচিতে সবাইকে শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। যে গানের ওপরে আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে, সমস্ত গণসংগঠনগুলিকে বৃহত্তর জগতের শিল্পী সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সেই গান গেয়েই প্রতিবাদ করতে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরএসএস-বিজেপি রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা...’ গানটিকে দেশদ্রোহিতামূলক বলে দেগে দিয়েছে, আসামের বিজেপি সরকার এই গান গাওয়ার জন্য নির্যাতনও নামিয়ে এনেছে। রবীন্দ্রচেতনার বিরুদ্ধে এই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী হামলার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে গান গেয়েই প্রতিবাদের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ছাত্র সংগঠন এসএফআই, যুবসংগঠন ডিওয়াইএফআই, শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ, সাংস্কৃতিক সংগঠন আইপিটিএ ইত্যাদি বিভিন্ন গণসংগঠন।
শনিবার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে এক যৌথ আবেদনে বলা হয়েছে, যে গান নিষিদ্ধ, সেই গান-ই অস্ত্র হোক। তাঁরা বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বাংলা ভাষা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বহু প্রথিতযশা বাঙালি মনীষীদের ধারাবাহিকভাবে অবমাননা করে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব, এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। বঙ্গভঙ্গ-র প্রতিবাদে ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে যে সভা হয়, সেই উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন 'আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি'। এই গান পরিবেশন করাকে সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ রূপে চিহ্নিত করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। লজ্জার কথা এই যে,পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন বিজেপি নেতা বলেছেন, এই রাজ্যেও তাঁরা ক্ষমতায় এলে এই গানটিকে নিষিদ্ধ করে দেবেন। আমরা দেখেছি, বাংলা ভাষায় কথা বলার 'অপরাধে' বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে অনেক বাঙালিকে হেনস্থা করা হয়েছে, এমনকি বলপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ধরনের উক্তি ও ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আমাদের দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী সকল বাংলাভাষী ও বাংলাপ্রেমী মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই- এর প্রতিবাদে আপনারা এগিয়ে আসুন, উচ্চকণ্ঠ হোন। এই বাংলায় স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য বহন করছে যে গান, আসুন আমরা শপথ নিই তার অমর্যাদা হতে দেব না। আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার সকাল ও সন্ধ্যায় জেলায় জেলায় ধ্বনিত হোক এই গান। এই আবেদনে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন পবিত্র সরকার, অনিতা অগ্নিহোত্রী, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ভগীরথ মিশ্র, অলক রায়চৌধুরী, অশোক মুখোপাধ্যায়, রাজা সেন, প্রমিতা মল্লিক, ঊর্মিমালা বসু, সব্যসাচী চক্রবর্তী, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজশ্রী ভট্টাচার্য, অগ্নিভ বন্দোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি মিশ্র, কল্যাণ সেন বরাট, মালিনী ভট্টাচার্য, পল্লব সেনগুপ্ত, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল সেনগুপ্ত, শুভংকর চক্রবর্তী,অশোকনাথ বসু, বিজয়লক্ষ্মী বর্মন, রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার ঘোষ সহ আরও অনেকে।
আগামী ৪ নভেম্বর রাজ্যের সর্বত্র দুপুর ২টোয় এবং সন্ধ্যা ৭টায় একসঙ্গে ‘আমার সোনার বাংলা...’ গান গেয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে, শামিল হবেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। স্কুলে, এলাকায় এলাকায় রাস্তায় মাইক লাগিয়ে, সম্মিলিতভাবে গান গাওয়া হবে মিলিত কণ্ঠে।
শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথকে কোনও নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম, ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ করা যায় না। তিনি বাংলা ও ভারতের সংস্কৃতির প্রতীক। কিন্তু আরএসএস বিজেপি পরিকল্পিতভাবে রবীন্দ্র ভাবনাকে আক্রমণ করছে। আসামে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ার জন্য পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনা এবং উত্তর প্রদেশের স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়ার আমরা তীব্র প্রতিবাদ করি। ভারত বাংলাদেশ উভয় জায়গাতেই রবীন্দ্রনাথ মৌলবাদী শক্তির হাতে আক্রান্ত। রবীন্দ্রনাথ যে বহুত্ববাদ, উদার চিন্তা ও চেতনার কথা বলে গেছেন, আমরা সেই রবীন্দ্র ভাবনায় বিশ্বাসী। তাই আগামী মঙ্গলবার টিফিন পিরিয়ডে রাজ্যের সব স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের সমবেত রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করার কর্মসূচি গ্রহণের ডাক দিয়েছে এবিটিএ।
Amar Sonar Bangla
‘আমার সোনার বাংলা’ গান গেয়ে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ মঙ্গলবার
×
Comments :0