Justice

বিচারের দাবি, পুলিশের বাধা ভেঙে হচ্ছে সভা

কলকাতা

ধর্ম তলায় ছাত্র যুব নেতৃবৃন্দ।

ধর্মতলায় মঞ্চ করতে দেয়নি প্রশাসন। কিন্তু সভা হবে, জানিয়েছে ছাত্র, যুব, মহিলা নেতৃত্ব।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ছাত্র, যুব, মহিলা কলকাতায় এসে সমবেত হচ্ছেন।, এবার ‘জাস্টিস’র দাবিতে কলকাতা দখলের কর্মসূচিতে নেমে সোচ্চার হবেন তাঁরা। এদিন দুপুর একটায় কলকাতার মধ্যস্থলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ধর্মতলায় এই জমায়েতের ডাক দিয়েছেন বামপন্থী ছাত্র, যুব, মহিলারা। জেলাগুলি থেকে যে উদ্দীপনা নিয়ে নতুন প্রজন্ম কলকাতামুখী হচ্ছে বলে জানা গেছে, তাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা সম্পূর্ণ অচল অবরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। 
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর ৪৮ দিন অতিক্রান্ত। স্বাস্থ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুলিশকে ব্যবহার করে অপরাধী ও তৃণমূলের মাতব্বররা প্রথম থেকে প্রমাণ লোপাটে ব্যস্ত থাকলেও, হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত গেছে সিবিআই’র হাতে। সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা হাতে নিয়ে শুনানি করছে, কোটি কোটি টাকায় রাজ্য সরকারের নিযুক্ত আইনজীবীরা সেখানে সময় কিনতে নেমেছেন। কিন্তু আর জি করের অপরাধীদের মূল মাথারা এখনও অধরা। জুনিয়র ডাক্তারদের নাছোড় আন্দোলন, বামপন্থী ছাত্র যুব মহিলাদের একটানা লড়াই, রাজ্যজুড়ে নাগরিক আন্দোলনের অভূতপূর্ব স্রোত সবকিছুতে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ভবন থেকে কয়েকজনকে সরিয়েছেন এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহ রাজ্যের সর্বত্র ‘থ্রেট কালচার’ এখনও চলছে। তৃণমূল নেতারা প্রতিবাদীদের হুমকি দিচ্ছেন, এমনকি পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করাচ্ছে। মিথ্যা মামলা সাজিয়ে প্রতিবাদীদের জেলে পুরছে। অন্যদিকে মানুষকে আন্দোলনের রাস্তা থেকে তুলে উৎসবে ফেরাতে তৃণমূল নেতারা বিপুল টাকার ব্যবহার করছে।
কিন্তু আর জি করের ঘটনায় ন্যায়বিচার আদায় এবং প্রতিবাদীদের ওপরে হেনস্তা বন্ধের দাবিতে রাস্তাতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বামপন্থী ছাত্র যুব মহিলারা। রাজ্যজুড়ে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছিলই, শ্যামবাজারে একটানা তাদের অবস্থান বিক্ষোভও চলছে। এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার দুপুরে সারা রাজ্য থেকে ছাত্র যুব মহিলারা ধর্মতলায় আসতে চলেছেন জাস্টিসের দাবিতে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বহু মানুষ তো আসবেনই, সেইসঙ্গে শিয়ালদহ এবং হাওড়া থেকে দুটি মিছিল ধর্মতলায় আসবে। এছাড়াও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাগুলি থেকে বহু ছোট বড় মিছিল আসবে। এরপরে ধর্মতলায় আর কোনও জায়গা অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হচ্ছে না, নজিরবিহীন জনসমাবেশে কলকাতা সম্পূর্ণ অচল হয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে নিহত তরুণী চিকিৎসকের মরদেহ যখন পুলিশকে দিয়ে প্রায় ছিনতাই করে তৃণমূল নেতারা শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই পরিবারের অধিকারের কথা তুলে মরদেহবাহী গাড়ি আটকেছিলেন বামপন্থী ছাত্র-যুব মহিলা কর্মীরা। সেদিন তাঁরা পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন, পুরুষ পুলিশ অফিসাররা যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জির গায়ে হাত দিয়েছে। তবুও প্রতিবাদের সেই আগুনকে নেভানো যায়নি, বরং আগুন ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। সেই প্রতিবাদের তেজ নিয়েই ধর্মতলার রাস্তায় নেমে ‘তিলোত্তমার ভয় নাই/ রাজপথ ছাড়ি নাই’ একথা সোচ্চারে জানিয়ে দিতে চলেছেন বামপন্থী ছাত্র-যুব মহিলা আন্দোলনের কর্মীরা। বিচার আদায় করে আনতে এখন তারা বদ্ধপরিকর। সারদা নারদ থেকে চাকরি চুরির মতো কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসকদলের সেটিংয়ে সিবিআই’কে ঠুঁটো বানিয়ে ন্যায়বিচারের বলি দেখতে রাজি নন তাঁরা। ‘নাটক ছেড়ে বিচার করো/ আর জি করে মাথা ধরো’ এই আওয়াজ তুলে আন্দোলনকে জেদী নাছোড় করে তুলছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ যে প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে রেখেছে তাদেরও মুক্তির দাবি করছেন।
বৃহস্পতিবারের কলকাতা চলো কর্মসূচিকে সফল করতে গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় প্রচার চালিয়েছেন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কর্মীরা। স্কুল কলেজের সামনে গেট সভা করছেন ছাত্ররা, এছাড়াও পথসভা থেক আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিলি করা হয়েছে, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলির সময়েও জাস্টিসের দাবিতে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে। গানে, কবিতায়, ছবি এঁকে এবং নানা সৃজনশীল প্রচার প্রক্রিয়ায় বার্তা দেওয়া হয়েছে কলকাতায় জমায়েতের।
 

Comments :0

Login to leave a comment