STORY — PALLAV MUKHOPADHAYA / SHARAD NATUNPATA

গল্প — সলিলের গল্প / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY   PALLAV MUKHOPADHAYA  SHARAD NATUNPATA

নতুনপাতা

গল্প

সলিলের গল্প
পল্লব মুখোপাধ্যায়

হেমন্তের বিকেলে অনলবাবু বলছিলেন —  সলিল চৌধুরি সংগ্রামের এক নাম, প্রতিবাদের এক নাম, মানবতার এক নাম।
সলিলসঙ্গীত চেতনার এক নাম। একজন গীতিকার, সুরকার নিছক বিনোদন জগতের
মধ্যেই সীমিত থাকেন না। তিনি সমাজ বিচ্যুত নন। কথা-সুর-গানের মধ্যে দিয়ে অবিরাম
মানুষের চেতনার দরজায় কড়া নেড়ে যান তিনি।  মানুষকে অধিকারবোধে সচেতন করে যান
তিনি। তখন সলিল চৌধুরি কে জানতাম না, বোঝার বয়সও নয়, অনলবাবু বলছিলেন — 
'আলোর পথযাত্রী' সলিল সেই কাজটিই জীবনভর করে গিয়েছেন। আমাদের মধ্যে
যত্ন করে বুনে দিয়ে গিয়েছেন মান এবং হুঁশ। মানবিক চেতনা গড়ে তোলার কাজটির জন্য
তিনি বেছে নিয়েছিলেন শৈশব ও কৈশোর-কে। একাধিক প্রজন্ম বড় হয়ে উঠল সলিল
চৌধুরি-র কথায়-সুরে তাঁর কন্যা অন্তরা চৌধুরি-র গাওয়া গানগুলি শুনে।

 কী পরম যত্ন-আদর-মমত্ব নিয়ে তৈরি এই গানগুলি। অনলবাবু বলছিলেন তালিকাটি দীর্ঘ, তবু এক ঝলকে শুনে নে —  
'ও আয়রে ছুটে আয়', 'এক যে ছিল দুষ্টু ছেলে', 'এক যে ছিল মাছি', 'কেউ কখনও
ঠিক দুপুরে', 'খুকুমণি গো সোনা', 'ও সোনা ব্যাঙ, ও কোলা ব্যাঙ', 'হবুচন্দ্র রাজা',
'ইস্কাবনের দেশে', 'তেলের শিশি ভাঙলো বলে', 'পুতুল পুতুল', 'একানরে কানে করে', 'না না
পুতুল সোনা', 'এক্কা দোক্কা তিক্কা', 'হাট্টিমাটিম হাটিম হাটিম', 'ধরো দেখি ধরতে কী
পারবে', 'হারাধনের দশটি ছেলে', 'বাবুরাম সাপুড়ে' এবং আরো কত। পুরাণ, রূপকথার চেনা
চরিত্রগুলিকে নিয়ে রচিত গান কি অবলীলায় ঢুকে পড়ে আমাদের হৃদমাঝারে। একরত্তি
মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলতে খেলতে গান ধরেছে 'না দির দির দা তুম না তুম, তা না না না না /
নাচো তো দেখি আমার পুতুল সোনা / সাইবেরিয়া থেকে এল শ্বেত ভল্লুক, আফ্রিকা থেকে
এলো কালো উল্লুক .../ হাতি এলো, ঘোড়া এলো, এলো সজারু / নাচো দেখি ওরা খুশি হলে /
ঢেলে দিয়ে যাবে যে তোকে কত না সোনাদানা'। আর একটি ছোট মেয়ে পাখির গান শুনতে
চায়। সে তার সেরা খাবার সন্দেশ মাখানো দুধ ভাত বুলবুলি, ময়না বা টিয়া-কে খেতে দেবে। 
শুনবে বনের গান, নদীর গান। পাখির ডানায় ভর করে তার মন পাড়ি দিতে চায় ঝর্ণার
দেশে। ভোরবেলা পাখনা মেলে যে দেশ বেরিয়ে ফিরলো এই পাখির দল। আর এক কিশোরী
তার মাকে বলে, 'ও মাগো মা অন্য কিছু গল্প বলো / এক যে ছিল রাজা রাণী অনেক হলো /
বলো না কেন ওই ওপাড়ার দাশুর ছেলে / জ্বরেতে ভুগে না খেতে পেয়ে মারা গেলো / এই যে
এতো সব সারি সারি / বড় বড় বাড়ি আর এতো গাড়ি / তবু কেন এত লোকে ফুটপাতে শোয় তা
বলো না / কেন সেদিন অঞ্জনাকে স্কুলের থেকে / মাইনে দিতে পারেনি বলে তাড়িয়ে দিলো
/...কেন মাগো এত লোকে ভিক্ষা করে তা বলো না / বলো না কেন দাদা-মেজদা ঘরেতে
বেকার / ওরা তো দুজন লেখাপড়ায় ভালোই ছিল।' 

অনলবাবু বলতেন বড় হও তোমরাও সলিলকে জানবে,  
জানবে এক ইতিহাসকে কথা-সুর-গানে মাধ্যমে যে মানুষটি
শৈশব-কৈশোর থেকে আমাদের মনে পরিবেশ-বাস্তব পরিস্থিতি-সমাজজীবন সম্পর্কে
চেতনার বীজ রোপণ করে গিয়েছেন অনলবাবুর সেই গীতিকার-সুরকার-কবি-লেখক সলিল চৌধুরি-র
জন্মদিন আজ ১৯ নভেম্বর সে এক হেমন্তের অনন্য সকাল ফেলে আসা দিন। ভাল থাকবেন অনলস্যার।

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment