মুক্তধারা
গল্প
ইংরেজদের রাইটার্স বিল্ডিং
ঋষিকুমার
১৯৩০ সাল, ভারতের রাজধানী কোলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত হল। রাইটার্স বিল্ডিং পশ্চিমবঙ্গের হেড কোয়ার্টার হয়ে উঠলো।
বিনয়, বাদল, দীনেশ রাইটার্স অভিযান করেন। এমন কি বহু ইংরেজ এই বাঙালি বিপ্লবীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। যেমন বিপ্লবীদের প্রাণ দিতে হয়েছিল ইংরেজদের হাতে। ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে ১৫ আগষ্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় জাতীয় কংগ্রেসের হাতে ভারতের
শাসন ভার তুলে দেয় ইংরেজরা তারপর জাহাজ ভর্তি হয়ে নিজেদের দেশে ফিরে যায় ওরা।
কিন্তু যে সব ইংরেজরা অপঘাতে মরেছে তাদের আত্মা কি শান্তি পেয়েছে ? নাকি জাহাজে করে তাদের আত্মা গুলো নিয়ে যেতে পেরেছে ? স্বরসতীর তীরে বসে রাইটার্সের ওপর ডকুমেন্টারী করছে হার্দিক। হার্দিক সদ্য মাষ্টার্স পাশ করে ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে, ওর বন্ধু পল্টু ওকে খুব সাহযোগিতা করে। কোন থিমের ওপর স্টোরি বানাবে তা ঠিক করে দেয় পল্টু।
পল্টু বলল, কিরে রাইটার্সের ওপর ডকুমেন্টারী করবি তো ?
— রাইটার্সের ডকুমেন্টারিতে ইংরেজদের যন্ত্রনা উঠে আসবে কিন্তু।
এই কথা শুনে হার্দিক বলল, বিপ্লবীদের যন্ত্রনার কথা আমরা লিখবো, কেন ইংরেজদের যন্ত্রনা লিখতে যাবো ?
পল্টু বলল, দেখ ভাই ইংরেজরা একটা খাল কাটিয়েছে নদী থেকে, সেটা ২৫০ বছরেও সংস্কার করতে হয়নি, তোমরা ইংরেজদেরকে ছোট চোখে দেখ কেন ?
— কারন দেশটা ওরা শোষন করেছে।
— মোটেই নয় তোমাদের দেশের মানুষেরা এতটাই সৎ তবে দেশ পরাধীন হয়। কি করে ?
— ও সব বাদ দাও, বলো রাইটার্সের ইতিহাস ।
— এখানে মেরে ফেলা ইংরেজদের আত্মা মুক্তি পায়নে।
— বিপ্লবীদের ?
— ওঁরা তো দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন গীতায় ভগবান বলছেন, যাঁরা ভাল কাজ করে তাদের তো না ইহকালে না পরকালে কখনোই খারাপ হতে পারে না তাই বিপ্লবীদের আত্মা মুক্তি হলেও ইংরেজদের আত্মা মুক্তি হয়নি কারণ ওরা রক্ত চোষা যোঁকের মত ওদের অপঘাতে মৃত্যু হলে ওরা মুক্তি পাবে কি করে ? তাই ওদের আত্মা এখনো রাইটার্স বিল্ডিংএর আশে পাশে ঘোরে।
— কি ভাবে বুঝবো ?
— এখন দেখ জ্যোতিবসু বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী ওনার হাতে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ভার পাবার পর যখন বিরোধীপক্ষ মানে মমতা ব্যানার্জী প্রতিবাদী শব্দ নিয়ে গেলেন রাইটার্স বিল্ডিংএ তখন হাতে চুলের মুঠি জড়িয়ে নিয়ে মেরেছিলেন তাড়িয়ে তাড়িয়ে মেরে ছিলেন। 1
এটা ইংরেজ ভুত জ্যোতিবসুকে ভর করেছিল, কারণ নতুন প্রজন্মের শাসন এখান থেকে করতে দেবে না। ফলে মমতা ব্যানার্জীকে বামসরকারের তৈরী করা হাট ভবন দখল নিয়ে, 'নবান্ন' নাম দিয়ে তবেই শাসন করতে হচ্ছে উনি রাইটার্স বিল্ডংয়ে ঢোকার শক্তি সাহস হারিয়ে ফেলেছেন।
এমন কি মমতা ব্যানাজী স্পষ্ট দেখেছেন রাতের অন্ধকারে ঘোড়ার গাড়িতে করে কারা যেন যাচ্ছে। এমন কি রাজা বিধান সভার বারান্দাতে এসে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। মমতা ব্যানাজী এতটাই ভয় পেয়েছেন যে রাইটার্স বিল্ডং এ ঢুকবে না বলেই প্রতিজ্ঞা করে নিলো।
সেই থেকে ভুতে চেপে আছে মমতা ব্যানার্জীকে।
— পল্টু বলল, উনি যদি জীবনে ভাল কাজ করেন তা হল ইংরেজ ভুতেরা ওনাকে দিয়ে বলাচ্ছে বা করাচ্ছে নয়তো যে মমতা একটা সেট পেয়ে জিতেছে সে কিনা মূখ্যমন্ত্রী ?
— তা যা বলেছ ভায়া তার ওপর বাঙালি মেয়ে পাহাড় জেতাতে যাচ্ছে কোথায় সমুদ্র লাফিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে।
আসলে ওর ওপর কটা মদ্দলোকই চেপে আছে যার জন্যে এঁরা মানুষের মতই ক্ষমতা ধরে মমতা সেই জন্য এই রাইটার্স বিল্ডিং ঈংরেজদের এখানে বাঙালিরা হো হো করতে পারবে না। কারণ এটা দুহাজার বছরের হেরিটেজ।
Comments :0