Salim cochbihar

পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তৈরি মানুষ, ভয় পাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি: সেলিম

রাজ্য

অমিত কুমার দেব: কোচবিহার 
 

পঞ্চায়েতে রাজনৈতিক লড়াই করবার জন্য প্রস্তুত বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী এরাজ্যের সমস্ত মানুষ। বিজেপি কোর্টে গিয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে পিছিয়ে যায়, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েও পিছনোর ব্যবস্থা হয়নি। আর অপরদিকে তৃণমূলও এখন নির্বাচনকে পিছতে চাইছে। আমরা বলছি, ‘চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ নাও, পঞ্চায়েতের তারিখ দাও।’ শনিবার সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা দপ্তরে এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা বললেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পার্টির কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলী এবং জেলা কমিটির সভায় অংশ নিতে এদিন কোচবিহারে আসেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়, পার্টিনেতা জীবেশ সরকার, অলকেশ দাস প্রমুখ।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, চোর, দাঙ্গাবাজ, লুটেরারা যখন সক্রিয় হয়, তদন্তকারী এজেন্সিকে দেখা যায়নি। এরাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির রাজনীতির রমরমা হওয়ার পরই তা ঘটেছে। আসলে রাজ্যের মানুষ সচেতন হয়েছেন, চাকরিপ্রার্থীরা উচ্চ আদালতে গিয়েছেন, বামপন্থী আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়িয়েছেন, তার ফলশ্রুতিতেই এরাজ্যে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির তদন্ত করতে এসেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলি। এর আগে এই এজেন্সিগুলি তদন্তে নামেনি কেন? 
সেলিম বলেন, এরাজ্যের গরিব মানুষের ঘরের টাকা, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ স্তরেও ব্যাপক দুর্নীতি, পৌরসভাগুলিতে চুরি হচ্ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকা চুরি হবার পরেও কেন আগে এই এজেন্সিগুলি তদন্তে নামেনি? আসলে বামপন্থীরা যখন বলল, গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, এরপরই গ্রাম জাগলো, তখনই কেন্দ্রীয় সরকারের এই তদন্তকারী এজেন্সিগুলির ঘুম ভাঙল। তিনি বলেন, আমরা ঘুম ভাঙিয়েছি।  বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের চোখ খুলতে বাধ্য করেছেন। তাই বাংলার মানুষকে এদিন ধন্যবাদ জানান তিনি। মহম্মদ সেলিম বলেন, সব মানুষের ঐক্য এবং সম্প্রীতিই পারে এই রাজ্যের দুর্নীতি ও দুষ্কৃতিরাজকে সমাপ্ত করতে।
মহম্মদ সেলিম বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে তার রং, গোত্র, জাতি, ধর্ম দেখতে হয় না। আর এটা যদি দেখা হয়, তাহলে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য তৈরি হয়। আজ আমাদের পশ্চিমবঙ্গে তাই হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এরাজ্যের সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার লালঝান্ডায় যোগ দিচ্ছেন তারা। বাংলার ভবিষ্যৎ কোন রাজভবন, নাগপুর কিংবা কালীঘাট ঠিক করবে না, জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ, উত্তর, দক্ষিণ সবাইকে মিলে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। উত্তরবঙ্গের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা, তাঁদের উন্নয়নের স্বপ্ন, পিছিয়ে পড়ার জ্বালা এবং যন্ত্রণা রয়েছে। তাঁদের যন্ত্রণা দূর করা এবং তাঁদের আশা, স্বপ্ন বাস্তবায়নের হককে আদায় করা সম্ভব হবে একমাত্র সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাই এই সংগ্রামকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করতে হবে। 
মহম্মদ সেলিম বলেন, অমিত শাহ এরাজ্যে এসে বলেছেন, লোকসভায় তাদের ৩৫টি আসন চাই। আর অভিষেক বলে বেড়াচ্ছেন, বিধানসভায় ২৪০টি আসনের কথা। আসলে বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি এবং তৃণমূল এমন একটা ব্যবস্থা করতে চাইছে, যাতে লোকসভায় বিজেপি আর বিধানসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় থাকে। আসলে এটাকেই বলে ফিফটি-ফিফটি অর্থাৎ ভাগাভাগি। 
সেলিম বলেন, এই মুহূর্তে  রাজ্যের পঞ্চায়েতী ব্যবস্থায় প্রকল্পের টাকার হিসেব-নিকেশ নেই। ২০১৪ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে একবারও বলেনি কেন্দ্রীয় সরকার। আর এই ফাঁকে সমস্ত প্রকল্পগুলিকে টাকা রোজগারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে তৃণমূল। এদিকে অমিত শাহ রাজ্যে এসে মমতা ব্যানার্জিকে বলছেন, এত টাকা দিলাম, এত খেলে, তারপরও লালঝান্ডা জেগে উঠছে কেন? লালঝান্ডাকে নিকেশ করার জন্য এবং বিরোধীশূন্য করার জন্যই তো এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
 এদিন মহম্মদ সেলিম কালিয়াগঞ্জের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, হিন্দু-মুসলমান, মন্দির-মসজিদ, আদিবাসী-রাজবংশী, তফসিলি-নেপালি, পাহাড়ি-সমতল এভাবে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে। এই বিভাজনের রাজনীতির ফলাফল কী হয়, তা মণিপুরে দেখা যাচ্ছে। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে এখানেও বিভাজনের রাজনীতি কায়েম করেছে, তাদের লাভ হয়েছে, তারা ভোট পেয়েছে। কিন্তু এখন আগুন জ্বলছে মণিপুরে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে উত্তরবঙ্গে নানা ধর্মে, নানা বর্ণ, নানা ভাষা, নানা গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন। আর ভোটের জন্য তাদেরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই রাজ্যে কুড়মি এবং আদিবাসীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। এই রাজনীতি বিপজ্জনক। মহিলা নির্যাতন, খুন, হত্যা, ধর্ষণ যে ঘটনাই ঘটুক, এর পেছনে ধর্মের গন্ধ পাওয়া যায় কিনা, তার খোঁজ করা হয়। যাতে মানুষকে ভাগ করা যায়। হিন্দু-মুসলমান, রাজবংশী-আদিবাসী, রাজবংশী-মুসলমানের নামে। আর তাহলেই আরএসএস কিংবা বিজেপি এই ঘটনায় হামলে পড়ে। তিনি বলেন, যেটা অমানবিক ব্যাপার, তার বিরুদ্ধে সবাই লড়বে। এখানে ধর্ম বর্ণের কোনো বিষয় থাকতে পারে না।  এই উত্তরবঙ্গের নারী পাচারের সাথে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ই যুক্ত বলে এদিন গুরুতর অভিযোগ তোলেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কালিয়াগঞ্জের ঘটনার যে ঘৃণ্য চক্রান্ত করা হলো তা অত্যন্ত লজ্জার। 
 সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় এদিন বলেন, গোটা কোচবিহার জেলা জুড়ে রেগার প্রাপ্য  মজুরি পাননি রেগা শ্রমিকরা, আবাস যোজনার ঘর গরিব মানুষ পাচ্ছেন না, শৌচাগার নির্মাণের জন্য জেলা জুড়ে উপভোক্তাদের কাছ থেকে ১০হাজার টাকা করে নিয়েছেন শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা, কিন্তু একটি শৌচাগারও নির্মাণ হয়নি আজ পর্যন্ত। জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় পুকুর খননের নামে টাকা লুট করেছেন শাসকদলের প্রতিনিধিরা। এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে শামিল হয়েছে সিপিআই(এম) তথা বামফ্রন্ট। গত ৪ মে জেলা পরিষদ অভিযানে শামিল হয়েছিল বামফ্রন্ট। আগামী ২৫ মে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার হয়ে কোচবিহার জেলাশাসক দপ্তর অভিযানে শামিল হবেন জেলার ছাত্র-যুব-মহিলারা। তিনি বলেন, তৃণমূল বিজেপির প্রতি সাধারণ মানুষের মোহ ভাঙতে শুরু করেছে কোচবিহার জেলায়। প্রতিনিয়ত তারা সমবেত হচ্ছেন লাল ঝান্ডার নিচে। 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment