Nadia

নদীয়ায় ব্যারিকেড ভাঙলেন ছাত্র যুবরা

জেলা

 এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র ডাকা নদীয়া জেলা পরিষদ ভবন অভিযান ঠেকাতে পুলিশি বাধায় বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষ্ণনগরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পুলিশের প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল করে ছাত্র-যুবরা জেলা পরিষদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় এসে পৌঁছালে পুলিশের বিশাল বাহিনী দ্বিতীয় ব্যারিকেড করে জলকামান নিয়ে তাঁদের পথ আটকায়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বহু ছাত্র-যুব কর্মী আহত হয়েছেন, ১৩ জন ছাত্র-যুব আন্দোলনকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তখন জেলা পরিষদ ভবন অভিযানের মুখ ঘুরিয়ে ছাত্র-যুবরা থানা অভিমুখে অভিযান শুরু করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে সব ধৃতকে ছেড়ে দেয়। 
ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই’র নদীয়া জেলা কমিটির আহবানে মূলত ৬ দফা দাবিতে এদিন নদীয়া জেলা পরিষদ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল পরিচালিত নদীয়া জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, একশো দিনের কাজের মজুরির টাকা ও সুষ্ঠু নিয়োগের দাবিতে, শিক্ষায় দুর্নীতির প্রতিবাদে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এদিনের অভিযানে গর্জে উঠেছেন ছাত্র-যুবরা। এদিন জেলার কল্যাণী থেকে পলাশীর প্রান্তর ও নবদ্বীপ থেকে গেদে সীমান্ত, অন্যদিকে কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ছাত্র-যুব ট্রেনে-বাসে এসে সমবেত হয়েছিলেন। এদিনের অভিযানে অংশ নিয়েছেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, এসএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস সহ ছাত্র-যুব নেতৃবৃন্দ। তপ্ত দুপুরের রোদের তেজকেও হার মানিয়ে তাঁদের মিছিল সাড়া ফেলে দিয়েছে কৃষ্ণনগরে। 
মিছিল শুরুর আগে কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডিওয়াইএফআই জেলা সভাপতি নাজির হোসেন মণ্ডল সভাপতিত্ব করেন। সভায় বলেন মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, ময়ুখ  বিশ্বাস, ডিওয়াইএফআই’র জেলা সম্পাদক রুদ্র প্রসাদ মুখার্জি, এসএফআই’র জেলা সম্পাদক সবুজ দাস,  জেলা সভাপতি সৌরভ দে। তারপর সেখান থেকে সংগঠনের পতাকা ও দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, চে গুয়েভারার ছবি ইত্যাদি নিয়ে দৃপ্ত স্লোগানে শহরের বুক কাঁপিয়ে জেলা পরিষদের অভিমুখে হাঁটা শুরু করেন ছাত্র-যুবরা। জজ কোর্ট মোড়, সদর হাসপাতাল মোড় পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে মিছিল আটকাতে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড করেছিল। তবে ছাত্র-যুবদের স্রোতে সেই ব্যারিকেড ভেঙে যায়। ব্যারিকেড ভেঙে তাঁরা এগিয়ে যান জেলা পরিষদ ভবনের উদ্দেশে। 
জেলা পরিষদ দপ্তর থেকে ৫০০ মিটার দূরে রবীন্দ্রভবনের সামনে বিরাট বড় করে লোহার ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল। কোনওভাবেই যাতে ছাত্র-যুবরা ডেপুটেশন দিতে না আসতে পারে, তার জন্য ব্যারিকেডের ওধারে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং জলকামান। ব্যারিকেডের সামনেও ছিল পুলিশবাহিনী। মিছিল সেখানে পৌঁছতেই তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশের। নির্মমভাবে মারা হয় ছাত্র-যুবদের। এসএফআই-ডিওয়াইএফআই’র পতাকা হাতে থাকা মিছিলকারীদের মারতে মারতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এই হামলা চলে।
কিন্তু ছাত্র-যুবরা জেলা পরিষদে ডেপুটেশন দিতে অনড় থাকেন। এই সময়ে মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, ময়ুখ বিশ্বাসরা ব্যারিকেডের উপরে উঠে হাতে মাইক নিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্র-যুবদের সেখানেই বসে পড়তে আবেদন করেন। মীনাক্ষী মুখার্জি ব্যারিকেডের উপরে উঠে মাইক হাতে নিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ডেপুটেশন দিতে এসেছি, আটকাতে পুলিশকে দিয়ে অযথা হুজ্জুতি করাতে চাইছে। পুলিশ ব্যারিকেডের পিছনে চলে যান, আমরা এখানেই বসে থাকব।’’ তিনি বলেন, ‘‘কেন সিভিক পুলিশকে দিয়ে অভিযান ঠেকাতে হামলা চালানো হচ্ছে? সিভিকের এই বেআইনি ব্যবহারের ছবি তুলে রাখছি আমরা।’’ প্রশাসনের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ওরা ছাত্র-যুবদের স্বপ্ন চুরি করছে। ওরা চলে যাবে, তোমরা তো থেকে যাবে। চোরদের কাছে মাথা কেন নত করছ?’’ 
এরপর ছাত্র-যুবরা সেখানেই বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা সময়সীমা বেঁধে দেন ধৃত ছাত্র-যুবদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু জেলা পরিষদ ডেপুটেশন গ্রহণ না করায় এবং পুলিশ ধৃত ছাত্র-যুবদের না ছাড়ায় একটু পরেই ছাত্র-যুব আন্দোলনকারীরা কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। মিছিল থানার অদূরে পৌরসভার সামনে পৌঁছাতেই বিপাকে পড়ে গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ জনকেই মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। সেখানেও দীর্ঘক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ চলে। অবস্থান বিক্ষোভে বলেন মীনাক্ষী মুখার্জি, এসএফআই নেতা সাদাক হাসান হোসেন সহ জেলার ছাত্র-যুব নেতৃত্ববৃন্দ।
এদিকে পুলিশ সহ সিভিক ভলান্টিয়ারদের নির্মম আক্রমণে আহত হয়েছেন ৪২ জন আন্দোলনকারী। তাঁদের মধ্যে গয়েশপুরের দরিয়া পাল, শ্বেতা বিশ্বাস, বৈশাখ দাশ, পলাশীর ফিরোজ উকিল, ঘেঁটুগাছির পিয়ার আলি মোল্লা ,আবদুল রেজ্জাক, চাপড়ার শ্রাবন্তী বিশ্বাস, আজিজ মণ্ডল ও কৃষ্ণনগরের মৌসুমী বিশ্বাসকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। এদিন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ছাত্র-যুব নেতৃবৃন্দ ও জেলার শ্রমিকনেতা এসএম শাদী, প্রাক্তন যুবনেতা সুমিত বিশ্বাস প্রমুখ। ছাত্র-যুবদের লড়াকু মেজাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন গণআন্দোলনের নেতা সুমিত দে।

 

Comments :0

Login to leave a comment