YECHURY PURULIA

বিজেপি’কে হটাতে গণসংগ্রামের তেজ বাড়ান, স্মরণসভায় ইয়েচুরি

রাজ্য জেলা

রবিবার পুরুলিয়ায় মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট ময়দানে কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার স্মরণসভা। ছবি ও ভিডিও: ভাস্কর দাশগুপ্ত

প্রসূন ভট্টাচার্য, পুরুলিয়া

‘‘দেশজুড়ে মিথ্যা প্রচার করছে বিজেপি। মিথ্যা দাবি করছে। এই ধোঁকাবাজি ফাঁস করে করে দিতে হবে। বিজেপি’কে কেন্দ্রের সরকার থেকে সরাতে সারা দেশে সারা দেশে গণআন্দোলন করতে হবে। আমাদের সব সংগঠনকে আন্দোলনের তেজ বাড়াতে হবে। তবেই উন্নত ভারত গড়া সম্ভব হবে।’’ 
রবিবার পুরুলিয়ায় প্রয়াত কমরেড বাসুদেব আচারিয়ার স্মরণসভায় এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়োচুরি। গত ১৩ নভেম্বর প্রয়াত হন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য, শ্রমিক আন্দোলনের নেতা এবং সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। লোকসভায় সিপিআই(এম)’র দলনেতার দায়িত্বও দীর্ঘসময় পালন করেছেন তিনি।
‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ এবং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করে ইয়েচুরিকে। তিনি বলেন, ‘‘বামপন্থীরা এবং সিপিআই(এম) স্পষ্ট করেই গোড়া থেকে বলে এসেছে যে রাজ্যস্তরে পরিস্থিতি অনুযায়ী সমঝোতা হবে। একেক রাজ্যে রাজ্যে একেক পরিস্থিতি। বাংলায় বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একযোগে বিজেপি এবং তৃণমূল, দুয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে।’’ 
মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট মাঠে সভায় বিপুল জনসমাগম হয়। সভাপতিত্ব করেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। বক্তব্য রাখেন পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র। বক্তারা তুলে ধরেন সাংসদ এবং সিপিআই(এম) নেতা হিসেবে জনতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।
বাসুদেব আচারিয়াকে স্মরণ করে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বাসুদেব আচারিয়া মানুষের স্বার্থে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে কাজ করে গিয়েছেন। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বজায় রাখার লড়াইয়ে আপসহীন যোদ্ধা ছিলেন কমরেড বাসুদের আচারিয়া। সংসদেও লাগাতার সেই ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন।’’

মোদীর ‘অমৃত কাল’ স্লোগানে প্রচারকে ধোঁকাবাজি বলেছেন ইয়েচুরি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এই ‘অমৃত কাল’ কাদের জন্য? দেশের ৪০ শতাংশ যুবক বেকার। মূল্যবৃদ্ধি ব্যাপক। মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অথচ হোর্ডিংয়ে মোদীর ছবি সহ বলা হচ্ছে ৮০ কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় মাসে ৫ কেজি করে চাল, গম দেওয়া হচ্ছে। আসলে তো ৫ কেজি শস্য কমানো হয়েছে। ১০ কেজি দেওয়া হয় করোনা পরিস্থিতির পর। তার অর্ধেক বাদ দেওয়া হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ তা’হলে কিনবে কী করে। ৫ কেজি শস্যে তো পরিবারের সারা মাস চলে না।’’ 
তিনি মনে করিয়ে দেন যে ২০০৩ সালেও বিজেপি হিন্দি বলয়ে জিতেছিল। বিজেপি উৎসাহিত হয়েছিল। ভোট এগিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে বিজেপি হেরে যায়। কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার গঠিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এই তিন রাজ্যে কংগ্রেস জিতেছিল। কিন্তু ২০১৯’র লোকসভা ভোটে জয়ী হয় বিজেপি। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেই গেছে মনে করলে ভুল করবে। মানুষ ঠিক করবেন কার হাতে দেশ চালানোর ভার দেওয়া হবে।’’ 
সংসদে বিক্ষোভের ঘটনা প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘আবার বাইশ বছর পরে সংসদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হয়েছে। যারা ঢুকেছিল তাদের হাতে ছিল বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার সই করা পাশ। প্রতাপ সিমহার শাস্তি হলো না। অথচে গাফিলতি নিয়ে সংসদে বিরোদী যে সাংসদরা সরব হলেন তাঁদের সাসপেন্ড করা হলো। এই তো হচ্ছে সরকার।’’
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বেকারি এবং মূল্যবৃদ্ধির দাবি তুলেছিল বিক্ষোভকারীরা। এই দুই সমস্যা সত্যিই দেশের মানুষের সমস্যা। সারা দেশে তা নিয়ে বিক্ষোভও হচ্ছে। তবে বিক্ষোভের এই পথ ঠিক নয়।’’

Comments :0

Login to leave a comment