Hinduism

হিন্দু্ত্ববাদী তাই

সম্পাদকীয় বিভাগ

ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে আসছে। গুজরাটে বিলকিস বানো মামলায় ১১জন অপরাধী সাজা কমিয়ে মুক্তি দেবার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়লেও মুখে রা কাটেনি কেন্দ্রীয় ও গুজরাট সরকারের মুখপাত্ররা। এমন এক ক্রুরতম অপরাধীদের সাজার মেয়াদ শেষ হবার আগেই মুক্তি দেবার ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। অথচ এমন কে বিরলতম নজির সৃষ্টির আগে-পরে কোনও ব্যাখ্যা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছেন। বিরোধীদের তরফ থেকে সমালোচনার ঝড় উঠলেও টুঁ শব্দটিও করা হয়নি। তখনই বোঝা গিয়েছিল ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যা য়’। এই মুক্তি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বাভাবিক নিয়মে হয়নি। এর পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সচেতন প্রয়াস কাজ করেছে। এই মুক্তিকে গৌরবান্বিত করতে বেছে নেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতা দিবসকে। প্রধানমন্ত্রী যখন লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে নারীদের সুরক্ষা, ক্ষমতায়ন, সম্মান, মর্যাদা দান নিয়ে ‘সুভাষণ’ দিচ্ছেন তখন তাঁর নিজের রাজ্যে নিজের দল পরিচালিত সরকার সসম্মানে মুক্তি দিচ্ছে সেই ১১ অপরাধীকে যারা একটি নিরীহ নিরপরাধ পরিবারের মহিলাদের ধর্ষণ করে নারী-পুরুষ সহ ১৪জনকে নৃশংস বর্বরতায় খুন করেছে। পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া মহিলা বিলকিস বানোকে গর্ভাবস্থায় ধর্ষণ, শুধু ধর্ষণ করেনি তার ‍‌শিশুকন্যাকে পাথরে আছাড় মেরে হত্যা করেছে। তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল একটি বি‍‌শেষ ধর্মে বিশ্বাসী।
এমন এক পৈশাচিক হিংস্র অপরাধে অপরাধীকে অতীতে কোথাও কোনোদিন সাজার মেয়াদ শেষের আগে মুক্তি দেবার ঘটনা ঘটেনি। সেটা সম্ভব করে নয়া নজির সৃষ্টি করেছে গুজরাটে হিন্দুত্ববাদী সরকার এবং একাজে তাদের অনুমেদন দিয়েছে কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী সরকার। যারা খুন-ধর্ষণের অপরাধী তাদের পরিচিতি হিন্দুত্ববাদী বলেই হিন্দুত্ববাদী সরকার দায় তাদের সাজা লাঘব করে মুক্তি দেবার। অপরাধ যত ভয়ঙ্করই হোক না কেন যেহেতু অপরাধী হিন্দুত্ববাদী, মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর কাজ করেছে, ধর্ষণ-খুন করে ত্রাস সৃষ্টি করেছে তাই তারা পুরষ্কৃত হবার যোগ্য। গুজরাট সরকার সেটাই করেছে। একেবারে স্বাধীনতা দিবসের দিন তাদের মুক্তি দিয়ে ধর্ষক-খুনিদের গৌরবান্বিত ও সম্মানিত করেছে গুজরাটের আরএসএস-বিজেপি সরকার। মুক্তি দেবার গুজরাট সরকারের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, সি বিআই’র বি‍‌শেষ আদালতের ঘোরতর আপত্তি সত্ত্বেও গুজরাট সরকার মুক্তির কার্যত একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারজন্য যুক্তি খাড়া করেছে অপরাধীরা জেলে ভালো ব্যবহার করেছে। এই যুক্তিকে যদি গ্রাহ্য করতে হয় তাহলে সারাদেশে জেলে যত বন্দি আছে ৭০-৮০ ভাগকেই অচিরে মু‍‌ক্তি দিয়ে জেলগুলি খালি করে দিতে হয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment