COAL MINE DEATH

বাঁশড়ায় খোলামুখ খনিতে মৃত্যু দুই শ্রমিকের

জেলা

ছবি প্রতীকী

 ইসিএল-র কাজ বন্ধ রাখা আউটসোর্সিংয়ের খোলামুখ খনি বাঁশড়া ওসিপিতে কয়লা খনন করতে গিয়ে মাটি পাথর ও কয়লার চাল ধসে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা দুইজন। মৃত এবং আহতরা সবাই খনি সংলগ্ন বাঁশড়া ভুঁইয়াপাড়া ও গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দা। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। মৃতদের নাম রাজেশ তুরি (৪১) ও বিনোদ ভুঁইয়া (২৬)। আহত ২৭ বছরের যুবক কারু ভুঁইয়া ও ২৫ বছরের যুবক রামপ্রবেশ বর্ণওয়ালকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারু ভুঁইয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। 
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ভোরের দিকে। প্রতিদিন অনেকেই এই খনিতে কয়লা খনন করতে যায়। স্থানীয় মানুষ খবর পেয়ে খনিতে ছুটে আসেন। তাঁরাই আহতদের ধস সরিয়ে উদ্ধার করেন। 
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই বাঁশড়া কোলিয়ারি এজেন্ট (কর্তৃপক্ষ) পালিয়ে যায়। এলাকাটি আমরাসোতা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। প্রতিরোধের লড়াই দিয়ে সিপিআই(এম) গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছ আমরাসোতায়। এলাকার মানুষ লাল ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে দলেদলে বাঁশড়া কোলিয়ারি দপ্তরে জড়ো হন। এজেন্ট, ম্যানেজারের দপ্তর ঘিরে বিক্ষোভ চলতে থাকে। 
সিএমএসআই (সিআইটিইউ)’র সাধারণ সম্পাদক, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরি ছুটে যান বাঁশড়া কোলিয়ারিতে। তিনি মৃত এবং আহতদের পরিজনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ইসিএল কর্তৃপক্ষের একাংশ, পুলিশ প্রশাসনের একাংশ, সিআইএসএফ এবং কয়লা থেকে যারা তোলা আদায় করে তারা সবাই মিলে দায়ী। পরিকল্পিতভাবে খনিতে কয়লার স্তর উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যাতে বেআইনি খনন চলতে পারে। বেকারত্ব এবং দারিদ্রের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি ইসিএল’র সিএমডি, ডাইরেক্টর টেকনিক্যালকে ফোন করে প্রতিবাদ জানান এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানান। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন সদস্যর ঠিকা শ্রমিককে নিয়োগের জোরালো দাবি জানান। তিনি কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের দপ্তর সংলগ্ন খোলা মাঠে বিক্ষোভ অবস্থানে শামিল হন।
এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় হেমব্রম ও সিপিআই (এম) নেতা মঙ্গল হেমব্রম অভিযোগ করেন, আমরা পরপর দুইবার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি, ডেপুটেশন দিয়ে দাবি জানিয়েছি, কয়লার স্তর উন্মুক্ত রাখা চলবে না। মাটি ভরাট করতে হবে। করব বলেও কর্তৃপক্ষ মাটি ভরাট করেনি। সিআইটিইউ অনুমোদিত ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভা (সিএমএসআই) নেতা কলিমুদ্দিন আনসারি বলেন, ইসিএল কর্তৃপক্ষ মানুষ মারার জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে। বাঁশড়া ওসিপি ইসিএল-এর বিভাগীয় খনি ছিল। ২০১৮ সালে খনি থেকে বিভাগীয় শ্রমিকদের সরিয়ে খনিটিকে আউটসোর্সিংয়ের খনি করা হয়। মাস তিনেক হলো চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ঠিকা সংস্থার। সেই থেকে খনিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যন্ত্রপাতি সবই খনিতে রয়েছে। নিয়ম বিরুদ্ধভাবে ইসিএল কর্তৃপক্ষের মদতে ঠিকা সংস্থা প্রচুর জায়গায় কয়লার মুখ উন্মুক্ত রেখে দিয়েছে। কয়লার উন্মুক্ত স্তরে আগুন ধরে গেছে কয়েক জায়গায়। খনির উপরিস্তরে আগুন ছড়িয়ে বনাঞ্চল পুড়ে নিঃশেষ হয়েছে। পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। ঠিকা সংস্থা খনিতে কর্মরত ৬৭জন ঠিকা শ্রমিকের ৯ মাসের বকেয়া বেতনও দেয়নি। ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে ঠিকা সংস্থা বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছিল। 
সিএমএসআই এবং এলাকার সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হয়, অবিলম্বে খনি সুরক্ষা বিধি মেনে বাঁশড়া ওসিপি’র উন্মুক্ত কয়লার স্তর মাটি ভরাট করা হোক। খনির চারপাশ ঘিরে দিতে হবে। বিভাগীয় নিরাপত্তা রক্ষী এবং সিআইএসএফ’র নজরদারিতে খনিটিকে রাখতে হবে। 
কর্তৃপক্ষ কিছুই করেনি। এদিকে খনিটিকে পরিত্যক্ত বলেও ঘোষণা করেনি। নতুন কোনও সংস্থাকে কাজের বরাতও দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কয়লার কালো কারবার চাগিয়ে ওঠে। অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে। বস্তা বস্তা কয়লা প্রতিদিন পাচার হয় বিনা বাধায়। বাঁশড়া কোলিয়ারির এক নিরাপত্তা রক্ষী-কাম শসকদলের শ্রমিক সংগঠনের নেতার বিরুদ্ধে বেআইনি কয়লা উত্তোলনে জড়িয়ে থাকার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। এই নিরাপত্তা রক্ষীকে কখনও নিরাপত্তা রক্ষীর পোশাকে দেখা যায় না। সাদা পোশাকে কালো কারবার চালাচ্ছেন। বহু নিরাপত্তা রক্ষীর স্থানান্তর হলেও এঁনার হয় না। আয় বহির্ভূত প্রচুর সম্পত্তির মালিকও হয়েছেন বলে অভিযোগ। 
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পাড়ার পর এলাকার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল অসেছিলেন। কোলিয়ারি দপ্তরে অগ্নিমিত্রাকে দেখে ক্ষুব্ধ মানুষ গো-ব্যাক স্লোগান দেয়। মোদী আউটসোর্সিং করে, এমডিও, রেভেনিউ শেয়ারিং করে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লার বেসরকারিকরণ করছে। কয়লা এবং কয়লাঞ্চলের সর্বনাশ করছে বিজেপি। মানুষ বলেন, এখানে বিজেপি নেত্রীকে কুমিরের কান্না কাঁদতে হবে না।
তৃণমূল জেলা সভাপতি, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং, আইএনটিইউসি নেতা অভিজিৎ ঘটক এসেছিলেন। তাঁরা দুর্ঘটনার জন্য ইসিএলকে দায়ী করে চলে যান, কিন্তু কয়লার বেআইনি কারবার নিয়ে একটাও কথা বলেননি।  
বংশগোপাল চৌধুরির চাপের মুখে খনির এজেন্ট, জিএম কোলিয়ারিতে আসতে বাধ্য হয়। এজেন্টের চেম্বারে বৈঠকে কর্তৃপক্ষ বংশগোপাল চৌধুরিকে আমন্ত্রণ জাননো হলে শ্রমিকনেতা বংশগোপাল চৌধুরি বলেন, চেম্বারে নয়, খোলা মাঠে শ্রমিকদের মাঝে, এলাকার মানুষের মাঝে বৈঠক হবে। বাধ্য হয়ে জিএম সহ অন্যান্য আধিকারিকরা খোলা মাঠে বৈঠকে বসেন। মৃতদের পরিজনকে আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার ইসিএল বহন করবে। বংশগোপাল চৌধুরি তাঁর প্রাপ্য পেনশন থেকে এক লক্ষ টাকা দেবেন, তিনি আইএনটিটিইউসি নেতা বিধায়ক হরেরাম সিংকেও এক লক্ষ টাকা মৃতদের পরিবারকে দেবার জন্য অনুরোধ করেন। হরে রাম সিং তাতে সম্মত হয়েছেন। সিআইটিইউ দাবি জানিয়েছে, খনিতে মাটি ভরাট করতে হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। খনির চারপাশ কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। খনিতে নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করতে হবে। অবৈধ কয়লার কারবার বন্ধ করতে হবে। 

Comments :0

Login to leave a comment