Vineesh Phogat

১০০ গ্রামের রহস্য

সম্পাদকীয় বিভাগ

স্বপ্ন ছিল তার হাত ধরেই আসবে ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের প্রথম সোনা। চলতি অলিম্পিকের আসরে ৫০ কেজি কুস্তি বিভাগে বীনেশ ফোগত সোনা উপহার দেবে তার দেশবাসীকে এই ভেবেই আশায় বুক বেঁধেছিল গোটা দেশ। কিন্তু মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন সব ওলটপালট করে দিয়েছে। যে সোনার মেয়ে প্রতিযোগিতার শুরু থেকে একের পর এক সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেলায় পরাজিত করে ফাইনালে উ‍‌ঠেছিল সে কিনা মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় ফাইনাল শুরুর প্রাকমুহূর্তে গোটা প্রতিযোগিতা থেকে বাতিল হয়ে গেল। বাতিল হবার ফলে তার প্রাপ্য ব্রোঞ্জ পদকটিও কেড়ে নেওয়া হলো তার কাছ থেকে। নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব, অবিশ্বাস্য ঘটনা। অলিম্পিকের ইতিহাসে অতীতে কোনোদিন এমন ঘটনা ঘটেনি যা ঘটল বীনেশের ক্ষেত্রে।
বীনেশ ফোগত নিছক একজন প্রতিযোগী নন। ভারতের বুকে বর্তমান সময়ে অনাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আপসহীন এক প্রতিবাদী মুখ। দেশের শাসকের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার অদম্য সাহসের প্রতীক। ভারতের মহিলা কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে খোদ কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং-র শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদী আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন বীনেশ ফোগত। ব্রিজভূষণ বি‍‌জেপি’র নেতা ও সাংসদ হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নিতে নারাজ ছিল মোদী সরকার। বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা বহু পদকজয়ী কুস্তিগিরদের বহু আবেদন নিবেদনে সরকার সাড়া দেয়নি। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। পদ থেকেও সরানো হয়নি ব্রিজভূষণকে। অর্থাৎ প্রকারন্তরে কুস্তিগিরদের অভিযোগ অস্বীকার করে নির্যাতনকারী ব্রিজভূষণের পক্ষেই দাঁ‍‌ড়িয়ে প‍‌ড়েন মোদী-শাহরা।
সরকারের কাছ থেকে সুবিচার না পেয়ে বীনেশরা দিল্লির যন্তরমন্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ চলাকালীন যে দিন ঘটা করে মহাসমারোহে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী সেদিন অমিত শাহর পুলিশ বিক্ষোভরত বীনেশদের লাঠিপেটা করে চ্যাঙদোলা করে তুলে নিয়ে যায়। আজও মহিলা কুস্তিগিররা সুবিচার পায়নি। অথচ অভিযুক্ত আছেন বহাল তবিয়তে বিজেপি’র ছায়ায় বুক ফুলিয়ে। সেই বীনেশকে যখন এভাবে অলিম্পিক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তখন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, বিজেপি সভাপতি থেকে শুরু করে সকলে তাকে সান্ত্বনা দিতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অথচ এই বীনেশরা যখন নির্যাতন-শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে টানা লড়াই করে যাচ্ছিলেন তখন এদের কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। উলটে বিজেপি’র নেতারা তাদের অসম্মান করেছে, কুৎসিত ইঙ্গিত করেছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে।
হঠাৎ করে বীনেশ দরদ উথলে ওঠার মধ্যে তাই অস্বাভাবিক কিছু আন্দাজ করছে নানা মহল। বিরোধীরা আসল সত্য উন্মোচনের দাবি করেছে। অনেকেই এর পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। অবিশ্বাস করতে পারছেন না সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবার জন্যই চরম মূল্য দিতে হয়েছে। একটা গুরুতর প্রশ্ন ওয়াকিবহাল মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভারতীয় প্রতিযোগীদের জন্য ডাক্তারদের বিরাট টিম আছে। তাদেরই দায়িত্ব ছিল ওজন ৫০ কেজি করে রাখা। কিন্তু কেন তা সম্ভব হয়নি কেউ জানে না। তাই যথাযথ তদন্ত করে ত্য দেশবাসীকে জানানো জরুরি। তাতে যদি কারও হাত থাকে তাকে বা তাদেরকেও খুঁজে বার করা জরুরি। আলগা দরদ দেখিয়ে কোনোভাবেই সত্য আড়াল করা যাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment