tmc councillors house been raided by ed

কাউন্সিলরদের বাড়িতেও চলল তল্লাশি

কলকাতা

বিধায়ক থেকে কাউন্সিলর, কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার— একমাসের ব্যবধানে ফের বড় ধরনের তল্লাশি অভিযান সিবিআই’র। গত অক্টোবরে রাজ্যজুড়ে লাগাতার তল্লাশি অভিযানের পরে ২৭ তারিখে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে।
এবার নিয়োগ দুর্নীতি। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর পাশাপাশি পৌরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেও মঙ্গলবার সকাল থেকে একযোগে সাতটির বেশি জায়গায় চলল ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান। কলকাতা কর্পোরেশনের মুখ্যসচেতক, ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত থেকে বিধাননগর পৌরসভার মেয়র পারিষদ ৭নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়ি, তাঁর স্ত্রী গায়িকা অদিতি মুন্সির স্টুডিওতে চলল দফায় দফায় তল্লশি অভিযান।
কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় যখন এই তল্লাশি অভিযান শেষের মুখে সেই সময়েই ডোমকলে অভিষেক ব্যানার্জির অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূলী বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়ি ও বাড়িতে খোলা বিধায়ক কার্যালয় থেকে উদ্ধার হলো ২৮ লক্ষ নগদ টাকা, ১২ ভরি সোনা!  
এদিন সকালে নিজাম প্যালেস থেকে সিবিআই’র দুটি দল প্রথমে পাটুলিতে তৃণমূলী কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়িতে ও তেঘরিয়ায় তৃণমূলের যুব নেতা ও কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দেয়।
বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত মূলত তৃণমূলের দলীয় সমীকরণে পার্থ চ্যাটার্জির অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন। যদিও গত বছরের ২২জুলাই নাকতলায় বিজের বাড়ি থেকে পার্থ চ্যাটার্জির গ্রেপ্তারির পরেই দূরত্ব বাড়ান বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। তবে নিয়োগ দুর্নীতির পর্বে পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গেই ছিলেন এই তৃণমূলী কাউন্সিলর। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে পার্থ চ্যাটার্জির পাশাপাশি অর্পিতা মুখার্জির সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তর বাড়িতে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাগাতার তল্লাশি ও জেরার পরে দুপুরে সেখান থেকে বেরোন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তল্লাশি শেষে বাপ্পাদিত্যের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যান গোয়েন্দা আধিকারিকরা। তাঁর ব্যাঙ্কের নথিও নেয় সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই তাঁর ভূমিকা নজরে ছিল। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তল্লাশি চালানো হয়। জানা গেছে, পৌরসভায় নিয়োগের কিছু কাগজপত্রও তাঁর বাড়িতে মিলেছে। 
তল্লাশি শেষে বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বাপ্পাদিত্যের দাবি, আমি তদন্তে সহযোগিতা করব। আয়কর রিটার্নও দেখেছেন আধিকারিকরা। স্বাস্থ্য বিভাগ সহ বিভিন্ন বিভাগে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ হয়। কাউন্সিলররা করে থাকেন, তেমনই কয়েকটি বায়োডেটা সিবিআই নিয়ে গেছে।
তবে এলাকার সাধারণ মানুষের একাংশের দাবি, পার্থ চ্যাটার্জির গ্রেপ্তারির দেড় বছর পরে যদি সিবিআই তল্লাশি চালায় তাহলে আর কীই বা মিলবে? বিপুল টাকায় বৈষ্ণবঘাটা পাটুলী উপনগরীর বি ১ নম্বর প্লটে বৈভবের চিহ্ন নিয়ে মাথাতোলা ছাদে সুইমিং পুল সহ প্রাসাদোপম বাড়ি নিয়েও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন।
অন্যদিকে, ঠিক সেই সময়তেই তৃণমূলী বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্বামী, বিধাননগর পৌরসভার মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। এর আগে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলাতেও সিবিআই ও এনআইএ জেরার মুখে পড়েছিলেন এই তৃণমূলী কাউন্সিলর। তৃণমূলে ভেড়ার পর থেকে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে এই যুবনেতা। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের কাছ থেকে এই যুব নেতার নাম সামনে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতিতে যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ, শান্তনু ব্যানার্জি গ্রেপ্তার হয়েছে। পরে বাঙুরে জিএনএস সরণির বালাজি আবাসনেও হানা দেয় সিবিআই। সেখানে একটি ফ্ল্যাটে তৃণমূল নেতার স্ত্রী বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্টুডিও। সেখানেও চলে তল্লাশি। স্বামী স্ত্রী দুজনকেই তল্লাশি চলাকালীন দীর্ঘ জেরা করেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা। পরে সাংবাদিকদের কাছে দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, সিবিআই তল্লাশি চালিয়ে সেরকম কিছুই পায়নি।
একই সঙ্গে এদিন কোচবিহার ২নং ব্লকের রাজারহাট ট্যাঙ্গনমারি এলাকায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজেও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে হানা দেয় সিবিআই। এই কলেজের কর্মীদের জেরার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। এই বিএড কলেজের কর্ণধার শ্যামলকুমার করের ভাই সুবল করকে এই কলেজের একটি ঘরে বসিয়েও চলে ম্যারাথন জেরা।
এর পাশাপাশি কোচবিহার ২নং ব্লকের খাগড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষবাথান এলাকা শ্যামলকুমার করের বাড়িতেও হানা দেয় সিবিআই। তিনি না থাকলেও তার আত্মীয়দের জেরা করেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা। আটজনের তদন্তকারী আধিকারিকদের দল কোচবিহারে আসে। 
এই শ্যামলকুমার কর শাসক তৃণমূলের সঙ্গে সারসরি যুক্ত। বাড়ির পাশে ট্যাঙ্গনমারি এলাকায় একটি বেসরকারি বিএড কলেজের কর্ণধার তিনি। তার এই বেসরকারি কলেজ থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি প্রচুর অংশের যুবক-যুবতীদের কারও কাছ থেকে ৫০ হাজার, কারও কাছ থেকে ৫লক্ষ, কারও কাছ থেকে ১০লক্ষ, আবার কারও কাছ থেকে ১২লক্ষ টাকা চাকরির নামে আদায় করেছেন তিনি বলে অভিযোগ। প্রায় তিনশো জনের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন। প্রাইমারি থেকে গ্রুপ-সি,গ্রুপ-ডি, খাদ্য দপ্তরেও নিয়োগের নামে টাকা তুলেছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে ৫কোটিরও বেশি টাকা তুলেছেন, অথচ চাকরি হয়নি একজনেরও। গত ৯মাস ধরে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন এই তৃণমূলী প্রতারক।  
 

Comments :0

Login to leave a comment