প্রবীর দাস- বসিরহাট
দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর ফের রেশন দুর্নীতি কান্ডে গা ঝারা দিয়ে উঠলো ইডি।
মঙ্গলবার কাক ভোরে বসিরহাটের সংগ্রামপুরে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত আব্দুল বারিক বিশ্বাসের সংগ্রামপুর ও রাজারহাট নিউটাউনের বাড়িতে এবং সংগ্রামপুরে আব্দুল বারিক বিশ্বাসের বাড়ি লাগোয়া সংগ্রামপুর অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড নামাঙ্কিত রাইসমিলে হানা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। শতাধিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ঘিরে রেখেছে বারিক বিশ্বাসের বাড়ি ও রাইস মিল। চলছে তল্লাশি।
রাইস মিল সহ মোট দশটি জায়গায় ইডির তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। অভিযান চলছে বারিক বিশ্বাসের রাজারহাটের ফ্ল্যাটেও। অন্যদিকে রেশন দুর্নীতি কান্ডে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমানের আত্মীয় মুকুলের দেগঙ্গার বাড়িতেও একযোগে তল্লাশি শুরু করেছে ইডির অধিকারী করা। প্রসঙ্গত, এর আগে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ চালকল মালিক বাকিবুর রহমানকে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থেকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহানের বাড়িতেও প্রথমে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে গিয়েই ‘আক্রান্ত’ হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারেরা। এ বার প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ আরও এক রাইস মিল মালিক আব্দুল বারিক বিশ্বাসের বাড়িতে এবং রাইসমিলে হানা ইডির।
রেশন দুর্নীতি মামলায় বিপুল পরিমাণ টাকার তছরুপ হয়েছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।সেই টাকার সাথে আব্দুল বারিক বিশ্বাসের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই মঙ্গলবার কাকভোরে একযোগে একাধিক জায়গায় ইডির এই অভিযান। ইডি সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতির ‘কালো’ টাকা বিভিন্ন ঘুরপথে ‘সাদা’ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বারিক বিশ্বাসের কোনও মদত রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে । সূত্রের খবর, বারিককে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাঁর বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নথি ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কাগজপত্র খতিয়ে দেখছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা।
অন্যদিকে এদিন ভোরে বসিরহাটের পাশাপাশি রেশন দুর্ণীতি কান্ডে দেগঙ্গা ব্লকের বেড়াচাপায় পিজি হাইটেক রাইসমিলে হানা দেয় ইডি। গোটা রাইসমিল ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। রাইসমিলের সাথে রাইস মিলের মালিকের সাদা রঙের বিলাসবহুল বাড়ি। সেই বাড়ির গায়েই আবার দেগঙ্গা-১ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়।স্থানীয় সূত্রে এখনও অবধি বিদেশ ও মুকুল নামে দু’জনের নাম উঠে আসছে। এলাকার লোকজন বলছেন, আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ ও আলিফ নূর ওরফে মুকুল সম্পর্কে আপন দুই ভাই।আনিসুর রহমান তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। এরা দুজনেই বাকিবুরের মামাতুতো ভাই বলে এলাকায় পরিচিত। বিলাসবহুল বাড়ির নিচে রয়েছে বিশাল গ্যারাজে ৬টি এসইউভি গাড়ি রয়েছে। হুন্ডাই আলকাজ়ার, টয়োটা ফরচুনার, মিৎসুবিশি পাজেরো, জিপ কম্পাস, মারুতি সুজুকি জ়েন পরপর সাজানো গাড়ি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, টয়োটা ফরচুনার গাড়ির নেমপ্লেট বিদেশেরই। পিজি হাইটেক রাইসমিলের মালিক মুকুল ও আনিসুর রহমানের গ্যারাজে রাখা গাড়ি সার্চ করে ইডি। মূলত গাড়িগুলি কার নামে রয়েছে? গাড়ি কেনার খরচ কীভাবে এসেছে, সেই গাড়ির খরচ দুর্নীতির টাকায় মেটানো হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
যেখানে তল্লাশি চলছে, সেখানে একাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাতে লেখা ‘অন ডিউটি গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ফুড সাপ্লায়ার্স’। অর্থাৎ রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের সঙ্গে এই রাইস মিলের যোগের একটা সম্ভাবনা এখনও জোরাল। রাইস মিলের কর্মীরা বলছেন, এখান থেকে চাল যায় সরকারি গোডাউনে। ফলে এদিনের এই অভিযান যে বড় মোড় নিতে চলেছে তা বলাই যেতে পারে।
Comments :0